নগরায়নের শিকার পরিযায়ী পাখিরা
২৫ ডিসেম্বর ২০১০১০ বছর আগেও পরিস্থিতি এমন ছিল না৷ প্রতি বছর শীতের মুখে নির্ভুলভাবে পথ চিনে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে দক্ষিণবঙ্গে পৌঁছে যেত বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখির ঝাঁক৷ আলিপুর চিড়িয়াখানার ঝিলই শুধু নয়, কলকাতা এবং শহরতলির নানা জলাশয়ে দেখা যেত এদের৷ কিন্তু এই পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমতে কমতে এখন প্রায় শূন্যে এসে ঠেকেছে৷ কেন? পাখিরা কি এত বহুতল বাড়ির ভিড়ে নিজেদের পুরনো আস্তানাগুলো আর খুঁজে পাচ্ছে না? তারা কি রাস্তা হারাচ্ছে এই কংক্রিটের জঙ্গলে?
রাজারহাট ছাড়িয়ে উত্তর ২৪ পরগণার হাড়োয়ার কাছে কেবল পাখিদের জন্যেই এক অভয়ারণ্য বানাচ্ছেন পাখি বিশেষজ্ঞ ডঃ দেবাশিস ব্যানার্জি৷ পেশায় চিকিৎসক হলেও তার প্রতিদিনের এক বড় অংশ কাটে পাখিদের নিয়ে৷ তিনি জানালেন, বহুতল বাড়িগুলোও হয়তো অতটা সমস্যা তৈরি করত না, যদি জলাশয়গুলো দূষণমুক্ত থাকত৷ এবং পাখিদের স্বাভাবিক খাবারের অভাব না হত৷
ডঃ ব্যানার্জির বিশেষ আপত্তি, জলাশয় সংস্কারের নামে যেভাবে পাখিদের থাকার জায়গা নষ্ট করে দেওয়া হয় শহরে ও গ্রামে, সেই নিয়ে৷ আর পরিযায়ী পাখিদের যে রাস্তা চেনার স্বাভাবিক ক্ষমতা, তাকে পুরো নষ্ট করে দেয় মোবাইল টাওয়ারের বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ আর উপগ্রহ দূর-সঞ্চার ব্যবস্থা৷ শুধু পরিযায়ী পাখি নয়, প্রতিদিন যে পাখিগুলোকে একসময় দেখতে পাওয়া যেত, সেই শালিক, চড়ুইয়ের সংখ্যাও ক্রমশ কমে আসছে৷
ডঃ দেবাশিস ব্যানার্জি বলছেন, একদিন আসবে যেদিন মানুষ ভুলটা ঠিকই বুঝতে পারবে যে খালি মোবাইল ফোন বা স্যাটেলাইট টিভি নয়, গাছপালা, পাখপাখালি, সবই সমান জরুরি৷ কিন্তু তখন অনেক দেরি না হয়ে যায়৷
প্রতিবেদন: শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক