ঝুঁকিপূর্ণ রত্ন
৬ মে ২০১২আফগানিস্তানের বৌদ্ধ মঠ থেকে শুরু করে চীনের প্রাচীন নগরী পর্যন্ত এশিয়ার বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ ধ্বংসের মুখে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জিএইচএফ৷ তারা বলছে, অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ নীতি, যুদ্ধ এবং পর্যটন শিল্পের বাড়াবাড়ির কারণেই এ'সব প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ হুমকির সম্মুখীন৷ সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক জেফ মরগ্যান বলেছেন, ‘‘উল্লিখিত ১০টি স্থান এশিয়া এবং অন্যান্য অঞ্চলের উন্নয়নশীল দেশগুলোর ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাচীন ঐতিহ্যময় স্থাপনাগুলোর প্রতিনিধি মাত্র৷'' সম্প্রতি ‘‘ধ্বংসের মুখে এশিয়ার ঐতিহ্য: আমাদের বিলুপ্তপ্রায় মূল্যবান সম্পদ রক্ষা'' শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন মরগ্যান৷
সংস্থাটির প্রতিবেদনে এশিয়ার সবচেয়ে হুমকির মুখে থাকা যে দশটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের প্রাচীন স্থাপত্য মহাস্থানগড়, প্রাচ্যের ভেনিস হিসেবে খ্যাত থাইল্যান্ডের ঐতিহাসিক স্থান আয়ুত্থায়া, ফিলিপিন্সের ফোর্ট সান্টিয়াগো, চীনের প্রাচীন রেশম সড়কের নগরী কাশগর, রেশম সড়কের অন্তর্ভুক্ত আফগানিস্তানের বৌদ্ধ মঠ মেস আয়নাক, মিয়ানমারে থাকা প্রথম আরাকান রাজ্যের রাজধানী মিয়ায়ুক-উ, লাওসের প্লেন অফ জারস, কম্বোডিয়ার খেমার ঐতিহ্য প্রিয়াহ ভিহিয়ার, ভারতের রাখিগরি এবং পাকিস্তানের টাক্সিলা৷
প্রত্নতত্ত্ব বিশারদরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, জাতিসংঘের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো বর্তমানে ইউরোপের ধনীদেশগুলোর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর দিকেই মূলত বেশি করে মনোনিবেশ করেছে এবং ল্যাটিন অ্যামেরিকা ও এশিয়ার দেশগুলোতে ছড়িয়ে থাকা মূল্যবান স্থাপত্যশিল্প সংরক্ষণের উদ্যোগ তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না৷ আবার কিছুটা প্রচেষ্টা থাকলেও তাতেও সমন্বয়ের অভাব প্রকট৷
জিএইচএফ বলছে, ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ'গুলোর আশি শতাংশই রয়েছে বিশ্বের ধনী দশটি দেশে৷ ফলে বাকি দেশগুলোতে থাকা প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদগুলোর প্রতি খুব আশ্চর্যজনকভাবেই কম গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে৷ এমনকি এগুলোর অধিকাংশই আগামী দশ বছরের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জেফ মরগ্যান৷
বাংলাদেশের বগুড়া শহরে অবস্থিত এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ মহাস্থানগড় নিয়েও উদ্বেগের কথা জানালেন প্রখ্যাত গবেষক এবং সাংবাদিক আব্দুর রহিম বগরা৷ তিনি বলেন, ‘‘এই মূল্যবান স্থাপত্যশিল্প সংরক্ষণে যে পরিমাণ জনশক্তি থাকা দরকার তা নেই বলে এখানকার নানা মূল্যবান জিনিস চুরি ও পাচার হয়ে যাচ্ছে৷ এমনকি সরকারের প্রতি এ ব্যাপারে বারবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কোন প্রতিকার হয়নি৷'' এ অবস্থায় এই প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ রক্ষায় স্থানীয় মানুষের মাঝে সচেতনতা ও গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে, বলে সুপারিশ করেন প্রত্নতত্ত্ববিদ আব্দুর রহিম৷
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী