ধূমপানকে জনপ্রিয় করছে নেটফ্লিক্স?
২৭ আগস্ট ২০১৯চোখের সামনের দানবীয় বিলবোর্ডে ঠাঁই না মিললেও, ছোটো পর্দা বা স্ক্রিন থেকে বিদায় বলা যায়নি ধূমপানকে৷ বিশেষ করে হালের জনপ্রিয় ভিডিও স্ট্রিমিং সাইট নেটফ্লিক্স এতে এক কাঠি ওপরে৷ শিল্পমাধ্যমে কি তবে জনস্বাস্থ্যের বিষয়টির কোনো স্থান নেই?
বিশ্বের প্রতিটি দেশ থেকে তামাকের বিজ্ঞাপন, বিপণন বন্ধ করতে ফি বছর মে মাসে পালন করা হয় বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস৷ অনেক দেশে তামাকের বিজ্ঞাপনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ অনেক দেশে ধূমপান নিয়ে কঠোর বিধি নিষেধ আছে৷ অস্ট্রেলিয়ায় সাধারণ প্যাকেট, কিংবা বাংলাদেশ বা ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্যাকেটের গায়ে ছবি দিয়ে স্বাস্থ্য সতর্কতায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়৷ যাতে মানুষ ধূমপানের প্রতি অনাগ্রহী হয় এবং এর ক্ষতিকর দিকটি চোখে ভাসে৷ এর পাশাপাশি চলচ্চিত্র কিংবা টেলিভিশনে এই প্রচারণা চালানোর জোর দাবি তুলছেন ধূমপান বিদ্বেষীরা৷ এমনকি তামাক সেবনের দৃশ্য সম্বলিত চলচ্চিত্র বা টিভি সিরিজগুলোতে ‘অ্যাডাল্ট রেটিং' দেয়ার পরামর্শও দিচ্ছেন তাঁরা৷
নেটফ্লিক্সে ধূমপানের অযাচিত ব্যবহার
মার্কিন ধূমপানবিরোধী সংস্থা ট্রুথ ইনিশিয়েটিভ জুলাইয়ে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, নেটফ্লিক্স এর নিজস্ব শোগুলতে ২০১৬-১৭ সালের সিজনের তুলনায় প্রায় তিনগুণ ধূমপানের দৃশ্য দেখিয়েছে৷ আর এসব শোগুলো ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী কিশোর-তরুণদের মাঝে জনপ্রিয় ছিল৷ ২০১৫-১৬ সালের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, ৯২ শতাংশ শোতে ধূমপানের দৃশ্য রয়েছে৷
যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ধূমপায়ী বিষয়ক গবেষক জেমি হার্টম্যান-বয়েস বলেন, বহু বছর ধরে অধূমপায়ীদের ধূমপানে আগ্রহী করতে বেশ সাফল্য দেখিয়েছে তামাকের বিজ্ঞাপন৷
কনক্যাভ ব্র্যান্ড ট্র্যাকিং বিশ্লেষণে দেখা যায়, নেটফ্লিক্সের ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস'-এর তৃতীয় সিজনে অন্তত একশটি ব্র্যান্ডের সিগারেট দেখানো হয়েছে৷ প্রশ্ন আসতে পারে নেটফ্লিক্সের জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে এটা বিজ্ঞাপনের কোনো কৌশল কি-না? তবে এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি৷
ট্রুথ ইনিশিয়েটিভের অনুমান, অন্তত দুই কোটি ৮০ লাখ তরুণ নেটফ্লিক্সের কারণে তামাকের স্বাদ নিয়েছে৷ বিশ্লেষণে আরো দেখা গেছে, তরুণদের ধূমপান আসক্তির ৩৭ শতাংশের জন্য চলচ্চিত্রের দৃশ্যায়ন দায়ী৷
কানাডীয় এক গবেষণা বলছে, ২০০২ থেকে ২০১৮ সালের চলচ্চিত্রগুলোর কারণে ১৭ বছরের কমবয়সী অন্টারিওর এক লাখ ৮৫ হাজার জন ধূমপানে আসক্ত হয়েছেন৷ এর কারণে স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় বেড়েছে অন্তত ৯৯৫ মিলিয়ন ইউরো৷
চলচ্চিত্র কী সত্যিই ধূমপায়ী তৈরি করতে পারে?
চলচ্চিত্রে ধূমপানের দৃশ্যে তাড়িত হয়ে ধূমপানে আসক্ত হওয়ার বিষয়টির সঙ্গে অনেক বিশ্লেষকই একমত নন৷ অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক প্রফেসর এমিরেটাস সাইমন চ্যাপম্যান বলেন, এ কথা বলে তরুণদের ধূমপানে আসক্তির অন্য কারণগুলোকে এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা প্রকাশ পায়৷
অবশ্য এ বিষয়ে সতর্ক থাকা যায় বলে মন্তব্য তাঁর৷ অ্যাডাল্ট রেটিং দিয়ে ধূমপানের দৃশ্য আড়াল করে তরুণদের ধূমপান থেকে বিরত রাখা যাবে বলেও মনে করেন না তিনি৷
‘‘আমি চলচ্চিত্র, সাহিত্য, মঞ্চ কিংবা সঙ্গীতে জনস্বাস্থ্যকে বড় দেখার লোক নই, মানুষ যা দেখতে চায় তা সেন্সর করার পক্ষেও নই'', বললেন সাইমন চ্যাপম্যান৷ তিনি ডয়েচে ভেলেকে বলেন, শিল্পকলায় জনস্বাস্থ্যকে টেনে এনে সেন্সর করা এক প্রকার ‘পিচ্ছিল ঢাল৷'
প্রশ্নের মুখে স্বাভাবিকীকরণ এবং গ্ল্যামারাইজেশন
শিল্প এবং বিজ্ঞাপনের মধ্যে রেখা অঙ্কনকে কঠিন বলে মনে করেন হার্টম্যান-বয়েস৷ তবে কোনো পণ্যকে কোথায় তুলে ধরা হবে এটা বিবেচনায় রাখা জরুরি বলে মনে করেন তিনি৷
দশ বছর বা তারও আগে জনস্বাস্থ্য সংস্থা হিসাবে আমাদের পণ্য স্থাপনের ক্ষেত্রে কী চলছে তার উপর আমাদের আরও দৃঢ় ধারণা ছিল বলে জানান তিনি৷ কিন্তু প্রযুক্তির পরিবর্তনের কারণে এটি এখন কঠিন হয়ে গেছে৷
বিশ্বে বছরে ৮০ লাখ মানুষ ধূমপানজনিত রোগে মারা যাচ্ছে৷ মৃত্যু, অসুস্থতার অন্যতম কারণ হিসেবে ধূমপানকে দায়ি করে, পর্দায় তামাকের দৃশ্যায়ন নিয়ে উদ্বেগ জানান তিনি৷
হার্টম্যান-বয়েস বলেন, ‘‘আমি মনে করি কোনো চলচ্চিত্রই আসলে বলতে চায় না ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ভালো৷'' কিন্তু যা হচ্ছে তাতে ধূমপানকে স্বাভাবিক হিসেবে নেয়া, কখনো গ্ল্যামারের পার্ট হিসেবে দেখা হচ্ছে৷ এর ফলে ধূমপায়ীর সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করেন অক্সফোর্ডের এই গবেষক৷
চার্লি শিল্ড/টিএম