1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দৃশ্যমান পদ্মা সেতু

৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

অনেক বিতর্ক আর বাধা পেরিয়ে অবশেষে বাংলাদেশের নিজস্ব ব্যবস্থাপনা এবং অর্থায়নেই বাস্তবের মুখ দেখছে পদ্মা সেতু৷ শনিবার সেতুর প্রথম স্প্যান বসানো হয়েছে৷ এভাবে ৪১ টি স্প্যানে পূর্ণাঙ্গ হবে এই সেতু৷

https://p.dw.com/p/2l1SA
Bangladesch - Padma Brücke
ছবি: Nasirul Islam, Bangla Tribune

আগামী বছরই পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা৷ শরিয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টে শনিবার সকালে সেতুর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে প্রথম স্প্যান বসানো হয়৷ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্প্যান বসানোর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন৷ সেতু বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তোফাজ্জল হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‘অস্থায়ীভাবে বেয়ারিংয়ের ওপর এই স্প্যান বসানো হলো৷ পরে সুবিধাজনক কোনও এক সময়ে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে এই কাজের উদ্বোধন করবেন৷''

প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘পদ্মা সেতুর রঙ হবে সোনালি৷ তবে রাতে সেতুটিতে জ্বলবে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার আদলে লাল ও সবুজ বাতি৷ পদ্মা নদীর পানির স্তর থেকে ৫০ ফুট উঁচুতে বসছে প্রতিটি স্প্যান৷''

Safiqul.mp3 - MP3-Stereo

তিনি বলেন, ‘‘মূল নদীর মধ্যে ১৫০ মিটার পর পর ৪২টি পিলারের প্রতিটি পিলারে ৬টি করে মোট ২৫২টি পাইল থাকছে৷ এর মধ্যে ২৮টি পাইলের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে৷ ৫৮টি পাইলের কাজ শেষ হয়েছে ৫০ ভাগ৷ এই মুহূর্তে ৫টি স্প্যান বসানোর জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত৷ ইতোমধ্যেই প্রস্তুত করা স্প্যানের লোড টেস্ট করা হয়েছে৷ দেশি-বিদেশি শ্রমিক-প্রকৌশলীরা এই প্রকল্পে কাজ করছেন৷ তদারকি করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ দল৷''

প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে আরো বলেন, ‘‘প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার৷ মোট ৪১টি স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে৷ আমরা প্রতিমাসেই দুই-তিনটি করে স্প্যান বসাবো৷ শেষের দিকে আরো বেশি করে স্প্যান বসবে৷ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরেই আমরা কাজ শেষ করতে চাই৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘বাংলাদেশের নিজস্ব ব্যবস্থাপনা এবং অর্থায়নে এই সেতু হচ্ছে৷ এটা বাংলাদেশের গর্ব৷'' 

পদ্মা সেতু কবে নাগাদ খুলে দেওয়া হতে পারে, সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘‘স্প্যান যখন একটা বসে গেছে এখন আর সময় লাগবে না৷ একটার পর একটা স্প্যান বসতে থাকবে৷ লক্ষ্য অনুযায়ী এই সেতুর কাজ শেষ হবে৷''

তিনি বলেন, ‘‘এ পর্যন্ত সামগ্রিকভাবে পদ্মাসেতুর অগ্রগতি ৪৭ দশমিক ৫ ভাগ৷ মূল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে ৪৯ শতাংশ৷ মাওয়া পয়েন্টে সংযোগ সড়কের কাজ ১০০ ভাগ শেষ৷ জাজিরা পয়েন্টে সংযোগ সড়কের কাজ ৯৯ ভাগ শেষ হয়েছে৷''

প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার৷ প্রস্থ ৭২ ফুট এবং চার লেনের৷ এই সেতুতে ব্যয় হচ্ছে ৩০ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা৷ সেতুতে থাকবে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অপটিক্যাল ফাইবার লাইন পরিবহন সুবিধা৷ চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড এই প্রকল্পে বাংলাদেশি ব্যবস্থাপনায় কাজ করছে৷ মুন্সিগঞ্জের মাওয়া থেকে শরীয়তপুরর জাজিরা পর্যন্ত এই সেতুর বিস্তৃতি৷

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন৷ ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করে৷ পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে আগ্রহ দেখায় বিশ্বব্যাংক৷ সহযোগী হতে চায় এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) ও জাইকা৷ ২০১১ সালে ২৯০ কোটি ডলার ব্যয়ে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পদ্মা সেতু প্রকল্পে জন্য বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করে সরকার৷ এরপর ওই বছরই জাইকা ৪০ কোটি ডলার, আইডিবি ১৪ কোটি ডলার এবং এবং এডিবি'র সঙ্গে ৬২ কোটি ডলারের সঙ্গে ঋণচুক্তি সই হয়৷

কিন্তু ঋণচুক্তির পাঁচ মাসের মাথায় দুর্নীতির অভিযোগ এনে ওই বছর সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন স্থগিত করে৷ ফলে ২০১২ সালের ২৯ জুলাই আনুষ্ঠানিক ভাবে ঋণচুক্তি বাতিল করে দেয় আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি৷ এরপর বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়ন এবং ব্যবস্থাপনায় পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেয়৷

Golam - MP3-Stereo

সিপিডি'র অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মেয়াজ্জেম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পদ্ম সেতু নির্মাণ বাংলাদেশের সক্ষমতার একটি বড় উদাহরণ তৈরি করল৷ বাংলাদেশ এখন শুধু দেশের মধ্যেই নয়, বিদেশেও এধরনের সেতু নির্মাণে সহায়তা করতে পারবে বা নির্মাণ করে দিতে পারবে৷ বাংলাদেশের এটি একটি ব্যতিক্রমী অর্জন৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এই সেতুর কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী এবং দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে কানেকটিভিটি আরো বাড়বে৷ ব্যবসাবাণিজ্য বাড়বে৷ লোকের কর্মসংস্থান হবে৷ আর বন্দর এবং বঙ্গোপসাগরকেন্দ্রিক অর্থনীতিতি চাঙ্গা হবে৷ যা জাতীয় অর্থনীতিতে ইতবাচক প্রভাব ফেলবে৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘এই সেতু আঞ্চলিক যোগাযোগেও নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে৷ বিশেষ করে ভারত, চীন, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে আঞ্চলিক যোগাযোগে গতি আনবে৷ যা বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াবে৷''

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷