1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দুর্নীতি-বিতর্কের বোঝা মাথায় নিয়ে নূরুল হুদা কমিশনের বিদায়

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২

দুর্নীতি-অনিয়ম আর নানা ধরনের বিতর্কের বোঝা মাথায় নিয়েই সোমবার বিদায় নিচ্ছে কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন (ইসি)৷

https://p.dw.com/p/46zK1
ছবি: bdnews24

এই কমিশনের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো দুর্নীতির অভিযোগ উঠে৷ রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে ইসির বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের দাবিও করেন বিশিষ্ট নাগরিকেরা৷ আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় নিকৃষ্ঠতম একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের কথাও বলেছেন বিশিষ্টজনেরা৷

তবে নিজেকে ব্যর্থ মানতে রাজি নন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা৷ সোমবারও বিদায়ী ব্রিফিংয়ে তিনি দাবি করেছেন, নিরপেক্ষতা এবং সাফল্যের সঙ্গে তারা দায়িত্ব পালন করেছেন৷ সব নির্বাচন পরিপূর্ণভাবে শেষ করেছেন৷ তার দাবি, দায়িত্ব পালনে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে৷ তবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কিছু ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন তিনি৷ এ কারণে শতভাগ সফলতা অর্জন করতে পারেনি৷ নির্বাচনে অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, যা নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি৷ আইনের মাধ্যমে নির্বাচনকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার চেষ্টা ছিল৷

এই কমিশনকে কতটুকু সফল বলবেন? জানতে চাইলে দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ  করে আসা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আপনি যদি সব বাদ দিয়ে শুধু ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনকে দেখেন, সেখানে যে অন্যায়-অবহেলা হয়েছে, শতাধিক মানুষ মারা গেছে এর দায়িত্বও তারা  নিতে রাজি নয়৷ এমনকি তারা কতগুলো স্টেটমেন্ট দিয়ে গেছে এটা আমাদের নির্বাচনী এলাকার মধ্যে নয়৷ আমরা এতদিন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে একটুকু বুঝতে পারি, কোনটা নির্বাচনী এলাকা৷ শুধু ওই ৪০০ গজ না৷ সংবিধান তাকে যে ক্ষমতা দিয়েছে, আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সেই ক্ষমতা তিনি ব্যবহার করেননি৷ বাংলাদেশের মানুষ এরকম নিকৃষ্টতম নির্বাচন আগে দেখেনি৷ অনেক উদাহরণ আছে কমিশনের পক্ষপাতিত্ব, ভুল সিদ্ধান্ত এমনকি এই কমিশনের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে৷ যা আগের কোনো নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে উঠেনি৷ তাহলে আমি কেমন করে তাদের একটা হাই মার্ক দেবো?’’

বাংলাদেশের মানুষ এরকম নিকৃষ্টতম নির্বাচন আগে দেখেনি: শারমিন মুরশিদ

২০১৭ সালের ১৫ ফেরুয়ারি শপথ নেওয়া বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে সোমবার৷ সংবিধানের নির্দেশনা অনুাযায়ি ইসির মেয়াদ পাঁচ বছর৷ নতুন ইসি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে৷ ইসি নিয়োগ আইন অনুযায়ী, নতুন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সার্চ কমিটি গঠিত হয়েছে৷ এই কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে ১০ জনের নাম সুপারিশ করবে৷ এই ১০ জনের তালিকা থেকেই সিইসিসহ নতুন কমিশনের পাঁচজনকে নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি৷ সার্চ কমিটি গঠনের পর থেকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে এই নাম পাঠাতে হবে৷ সেই হিসেবে নাম সুপারিশের জন্য আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় পাচ্ছে কমিটি৷

নিজেদের পাঁচ বছরের কাজের মূল্যায়ন জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি কখনই নিজের কাজের মূল্যায়ন করি না৷ এখনও করতে চাই না৷ তবে এটুকু বলতে পারি, আইনের মধ্যে থেকে কাজ করার চেষ্টা করেছি৷ নির্বাচনী সীমানা বিতর্ক, এনআইডি কার্ড- এগুলো নিয়ে যে সমস্যা ছিল, সেটার সমাধান করার চেষ্টা করেছি৷ নতুন কমিশনের প্রতি আমার আহবান থাকবে, আমাদের কমিশনকে নিয়ে সুশীল সমাজ ও সাংবাদিকেরা যেভাবে বিতর্ক তুলেছিলেন তারা যেন সেই বির্তর্কের উর্ধ্বে উঠে কাজ করেন এবং ভালো নির্বাচন উপহার দেন৷’’

বর্তমান নির্বাচন কমিশন ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ সংবলিত জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করেছে৷ একই সঙ্গে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ ও জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন-২০২১ প্রণয়ন করেছে৷ এই কাজগুলোকে কমিশনের ভালো কাজ হিসেবে দেখছেন বিশিষ্টজনেরা৷ ইভিএম ব্যবহারকেও কেউ কেউ ইতিবাচক বলেছেন৷

বর্তমান কমিশনকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সর্বশেষ যে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হয়ে গেল, সেখানে অংশগ্রহণ ছিল কিন্তু আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর নির্বাচন কমিশনের কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল বলে মনে হয় না৷ এখানে অনেক প্রাণহানি হয়েছে এবং সংঘাত হয়েছে৷ আবার নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সফল নির্বাচন হয়েছে৷ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনও ভালো হয়েছে৷ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনও যথেষ্ট বিতর্কিত ছিল৷ আর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে তো জাতীয়-আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বিষয়গুলো উঠে এসেছে৷ এখানে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি৷ প্রার্থীরা প্রচারণা চালাতে পারেনি৷ ভোটারেরা ভোট দিতে পারেনি৷ অন্য কেউ ভোট দিয়ে দিয়েছে সে ধরনের অভিযোগও আছে৷ ইভিএম ব্যবহারের চেষ্টা হয়েছে সেটা ভালো৷ কিন্তু যাদের জন্য এই আয়োজন তাদের সম্পৃক্ত করা যায়নি৷’’

অন্য কেউ ভোট দিয়ে দিয়েছে সে ধরনের অভিযোগও আছে: আলী ইমাম মজুমদার

বর্তমান কমিশনের নির্বাচন পরিচালনার কাজে বর্তমান সরকার কখনোই নির্বাচন কমিশনের ওপর প্রভাব বিস্তার করেনি বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের৷ সোমবার এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেন তিনি৷ তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে সর্বদাই নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করা হয়ে থাকে৷

তবে বর্তমান কমিশনের শুরু থেকেই কমিশনার মাহবুব তালুকদার নানা অনিয়মের প্রতিবাদ করেছেন৷ সোমবার দুপুরে নির্বাচন কমিশনে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে ওই নির্বাচনে গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্রের লাশ পড়ে আছে৷ এই লাশ সৎকারের দায়িত্ব কে নেবে? দেশে মানবাধিকার নেই, মানবিক মর্যাদা নেই৷ গণতন্ত্র না থাকলে এসব থাকে না৷ বিশ্বে সম্মানজনক রাষ্ট্র হিসেবে আসীন হতে হলে গণতন্ত্রের শর্তসমূহ অবশ্যই পূরণ করতে হবে৷ নির্বাচনের নামে সারাদেশে এমন অরাজকতা কখনো কাঙ্খিত ছিল না৷ তৃণমূল পর্যায়ে এই নির্বাচন দ্বন্দ্ব-সংঘাতের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে দিয়েছে৷ নির্বাচন কমিশন গঠন আইন বাধ্যতামূলক৷ তবে আইনটি সব রাজনৈতিক দলের কাছে গ্রহণযোগ্য না হলে, সংকটের সমাধান হবে না৷ আমি সব সময় নীরব জনগোষ্ঠীর মূখপাত্র হয়ে কথা বলেছি৷’’

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কাজ মূল্যায়ন করতে গিয়ে মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘একটা গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের কাছে জনগণের যে প্রত্যাশা থাকে সেটা পূরণে এই কমিশন চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে৷ নির্বাচন কমিশনের উপর যে দায়িত্ব ছিল, সেই দায়িত্ব তারা পালন করতে পারিনি৷ বিশেষ করে এই কমিশনের অধীনে যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি হয়েছে সেটি অত্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে৷ এর আগে কখনও এমন প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন আমরা পাইনি৷ সবকিছু মিলিয়ে নতুন যে কমিশন আসছে তাদের কাছে আমার প্রত্যাশা এই কমিশনের ব্যর্থতাগুলো পর্যালোচনা করে তারা সুন্দর একটা নির্বাচন জাতিকে উপহার দেবেন৷ তাহলেই সংকটের সমাধান হতে পারে৷’’

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন...

ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি সমীর কুমার দে৷
সমীর কুমার দে ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য