দুই বছর ধরে স্কুলে থাকে ১২টি পরিবার
গঙ্গায় তলিয়ে গেছে বাড়ি। আশ্রয় মিলেছিল স্কুলে। পুরসভা বলেছিল, নতুন ঘরের ব্য়বস্থা করবে। দুই বছর পরেও কোনো ব্য়বস্থা হয়নি।
ঘর হারানো পরিবার
গঙ্গায় তলিয়ে গিয়েছিল নয়টি ঘর। আশ্রয় মিলেছিল পাশের স্কুলবাড়িতে। দু’বছরেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত। এখনও পুনর্বাসন পেল না ঘর হারানো পরিবারগুলি।
কী ঘটেছিল
২০২২ সালের ১৭ জুন। অন্যান্য দিনের মতো রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে ঘুমোতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন চন্দ্রকুমার রায় লেনের বাসিন্দারা। ঘরের ভিতর হঠাৎই কম্পন অনুভব করেন তারা। আতঙ্কে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন সকলে। চোখের সামনে নিজেদের ঘর গঙ্গায় তলিয়ে যেতে দেখেন তারা।
পঞ্চাশ বছরের বসবাস
আবাসিকদের বক্তব্য, পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে কলকাতার কাশিপুর রতন বাবুঘাট সংলগ্ন এই চন্দ্রকুমার রায় লেনে নয়টি ঘরে ১২টি পরিবার বসবাস করতো।
অস্থায়ী ঠিকানা
২০২২ সালের ১৭ জুনের সেই দুর্ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসন পাশের একটি সরকারি স্কুলে ১২টি পরিবারের ২৫জন সদস্যকে থাকার ব্য়বস্থা করে দেয়।
পুনর্বাসন মেলেনি
এরপর পেরিয়ে গিয়েছে দুটি বছর। অস্থায়ী স্কুলবাড়ি এখনও এই ১২টি পরিবারের স্থায়ী ঠিকানা। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বহুবার আর্জি জানিয়েও সুরাহা হয়নি বলে জানাচ্ছে গৃহহীন পরিবারগুলি।
স্কুলের পরিস্থিতি
কাশীপুরের হরিশংকর বাণীপিঠ হাইস্কুল। এই স্কুলেরই পাঁচটি ক্লাসরুমে ১২টি পরিবারকে থাকতে দেওয়া হয়েছে। দু’টি পরিবারের জন্য বরাদ্দ একটি করে ঘর। এরই মধ্যে শত অসুবিধা সত্ত্বেও দিন কাটাতে হচ্ছে পরিবারগুলিকে। স্কুলের দেওয়ালে শুকোতে দেওয়া হয়েছে জামা কাপড়।
স্কুলের নির্দেশ
স্কুল চলাকালীন ঘরের দরজা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। এমনকি স্কুল যতক্ষণ চলবে ততক্ষণ ব্যবহার করা যাবে না বাথরুমও। অসুবিধার কথা জানাতে জানাতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছেন মানুষগুলি।
স্কুলের সংসার
ব্ল্যাকবোর্ডের সামনে মেলা রয়েছে পরনের কাপড়। গৃহস্থালির জিনিসপত্রে ভরা ক্লাসরুম। এমন দৃশ্য বেশ বিড়ম্বনার। স্কুলের ভিতরে এতগুলো পরিবার থাকায় অসুবিধে হচ্ছে স্কুল চালাতেও, জানালেন প্রধানশিক্ষক বিমলকৃষ্ণ রায়। আক্ষেপের সুরে তিনি জানান, স্কুলের সভাপতি বর্তমান শাসকদলের সঙ্গে জড়িয়ে, কাজেই তিনি যা সিদ্ধান্ত নেবেন, তার উপর অন্য কথা চলতে পারে না।
পাম্পিং স্টেশন
২০২২ সালে রতনবাবু ঘাটে তৈরি করা হয়েছিল একটি পাম্পিং স্টেশন। সেই কাজের জন্য তখন বন্ধ রাখা হয়েছিল পাইপলাইন। স্থানীয়দের অভিযোগ, জলের পাইপলাইন বন্ধ করার তিন দিনের মধ্যেই ফাটল দেখা দিতে থাকে গঙ্গার ধারের বাড়িগুলিতে।
পুরসভার বক্তব্য়
স্থানীয় কাউন্সিলারকে একাধিকাবার জানাতেও সুরাহা না হওয়ায় বাধ্য হয়ে ‘টক-টু মেয়র’ অনুষ্ঠানে সরাসরি কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে ফোন করেন এক ভুক্তভোগী। তারপরই নড়ে চড়ে বসে প্রশাসন।
স্কুল পরিদর্শন
পরদিনই স্কুল পরিদর্শনে আসেন পুরো আধিকারিকেরা। কাউন্সিলার কার্তিক মান্না জানান, যতদিন না পুরসভার তরফ থেকে নতুন পাকা বাড়ি তৈরি করা যাচ্ছে, ততদিন এই অসুবিধা চলবে। তবে কাছেই একটি ৮কাঠার জমি পাওয়া গিয়েছে, যেখানে একটি বাড়ি তৈরি করে ওই সকল গৃগহীন মানুষদের পুনর্বাসন দেওয়া হবে।
অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
একই ঘরে অন্য পরিবারের সঙ্গে সহাবস্থান, বাথরুমের অসুবিধা, রান্নার ধোঁয়া- এমন নানা অসুবিধে সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে স্কুলবাড়িতে বসবাস করতে হচ্ছে এই মানুষগুলিকে। এরই মধ্যে কেউ পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে, কেউ রুটিরুজির তাগিদে চাকরি বাকরি। কেউ প্রশাসনের দরজায় কড়া নাড়ছেন, কেউ আবার পুরোটাই ছেড়ে দিয়েছেন সময়ের হাতে। প্রশ্ন এখন, এই মানুষগুলির সুসময় কি আদৌ ফিরবে?