দিল্লির মসনদ শেষ পর্যন্ত কার?
১৪ মে ২০১৯কোন দল বা জোট সরকার গড়বে? শাসক ও বিরোধী উভয়ের দাবি, তারাই গড়বে সরকার৷ পাশাপাশি আঞ্চলিক দলগুলির মহাজোট সেই দাবি নস্যাৎ করে দিয়ে বলছে, সরকার গঠনের সম্ভাবনায় তারাই এগিয়ে৷
এই জল্পনার অবসান হবে ২৩ মে ভোট গণনার পরেই৷ কিন্ত তার আগেই সরকার গড়া নিয়ে হিসেব-নিকেশ শুরু হয়ে গেছে, সংসদের নিম্নসভা লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে শাসক দল, বিরোধী দল এবং আঞ্চলিক দলগুলির মহাজোট কে ক'টা আসন পেতে পারে৷ শাসক দল বিজেপি এবং প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের ধারণা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা তাদের হাতের মুঠোয়৷ অন্যদিকে আঞ্চলিক দলগুলির দাবি, সরকার গড়ার চাবিকাঠি তাদের হাতেই৷ তবে বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন, শাসক ও বিরোধী দল সরকার গড়ার মতো একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে আঞ্চলিক দলগুলিকে কাছে টানতেই হবে৷ দেখা যাক, বিকল্প সম্ভাবনা কী কী হতে পারে৷
এক, ২০১৪ সালের মতো বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলো এবং শরিক দলগুলিকে নিয়ে এনডিএ (জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট) সরকার গঠন করল৷
দুই, শরিকদের নিয়েও দেখা গেল বিজেপি এনডিএ সরকার গড়তে পারলো না৷ সেক্ষেত্রে শরিক দলকে সরকার গড়তে দিয়ে বিজেপি বাইরে থেকে সমর্থন দিলো৷
তিন, শরিকদের নিয়েও যদি বিজেপি সরকার গড়তে না পারে, সেক্ষেত্রে বিরোধী শিবিরের সবচেয়ে বড় দল হিসেবে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউপিএ (সংযুক্ত প্রগতিশীল জোট) সরকার দিল্লির মসনদ দখল করতে পারে৷
চার, বিরোধী শিবিরের আঞ্চলিক দলগুলি মিলে সরকার গড়লো এবং কংগ্রেস তাদের সমর্থন দিলোবাইরে থেকে৷ এই ফেডারেল ফ্রন্ট সরকার গঠনের লক্ষ্য নিয়ে জোর তত্পরতা চালিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়, অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু, তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে. চন্দ্রশেখর রাও প্রমুখ৷ তামিলনাড়ুর ডিএমকে দলের প্রধান স্টালিন কিন্তু এই জোটে যোগ দেবেন কিনা সে বিষয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করেননি৷
কিন্তু সবথেকে বড় প্রশ্নটা থেকে যাচ্ছে৷ আঞ্চলিক দলগুলির মহাজোটের প্রধানমন্ত্রী হবেন কে? চন্দ্র শেখর রাও দক্ষিণী রাজ্যগুলির কাউকে প্রধানমন্ত্রী করার ইঙ্গিতও দিয়ে এসেছেন৷ এমনটাই শোনা যাচ্ছে৷ কিন্তু সবথেকে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশে (৮০টি আসন) প্রধান দুই দল দলিত নেত্রী মায়াবতীর বিএসপি (বহুজন সমাজ পার্টি) এবং অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টির জোট এখন পর্যন্ত একটু তফাতে থাকতেই পছন্দ করছে৷ কারণ, মায়াবতী মনে করেন, তিনিই ফেডারেল ফ্রন্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রী হবার উপযুক্ত প্রার্থী৷
ষষ্ঠ দফা ভোটেরপরবর্তী পরিস্থিতিতে সরকার গড়া নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক অধ্যাপক উদয়ন বন্দোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘২০১৪ সালের মতো ভোটে মোদী হাওয়া বলে এবার কিছু নেই৷ গত পাঁচ বছরে মোদী সরকারের কর্মকাণ্ডের একটা অভিঘাত তো পড়তেই পারে, বিশেষ করে দুটো বিষয়ের উল্লেখ করা যেতে পারে, একটা হচ্ছে নোটবন্দি (বিমূদ্রাকরণ), অন্যটা হচ্ছে জিএসটি (পণ্য ও পরিষেবা শুল্ক)৷ এই দুটো সিদ্ধান্ত নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং খুচরো ব্যবসায়ীদের যথেষ্ট চাপে ফেলেছে৷ এর একটা ফল তো পড়বেই৷ অনেক আসনে বিজেপি এজন্য ভোট হারাবে৷ সাম্প্রদায়িকতা বা সংখ্যালঘু স্বার্থের কথা যদি বাদও দিই, অর্থনৈতিক দিকগুলো বিজেপির জনপ্রিয়তায় চাপ বাড়িয়েছে৷ মনে হয়, সেটা বিজেপি সরকার এখনো পুনরুদ্ধার করতে পারেনি৷ তবে হ্যাঁ, গ্রামাঞ্চলে কিছু কিছু উন্নয়ন কর্মসূচি মোদী সরকার বাস্তবায়িত করেছে৷ যেমন, গ্রামীণ শৌচালয়, অল্প দামের বাড়িঘর তৈরি ইত্যাদি৷''
সেদিক থেকে কংগ্রেসের সম্ভাবনা কতটা দেখছেন? উত্তরে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক উদয়ন বন্দোপাধ্যায় বললেন, ‘‘কয়েকটা রাজ্যে কংগ্রেস ভালো ফল করবে বলে মনে হয়৷ যেমন, পাঞ্জাব, রাজস্থানে ভালো ফল করতে পারবে৷ এছাড়া ছত্তিশগড়,মধ্যপ্রদেশ এমনকি কেরালাতেও কংগ্রেস আগের চেয়ে ভালো ফল করবে৷ তবে কেন্দ্রে একক সরকার গড়ার মতো অবস্থায় পৌঁছোবে না৷ তখন বাইরের সমর্থন ছাড়া চলবে না৷ সামগ্রিক ছবিটা এখনো পর্যন্ত খুব স্পষ্ট নয়৷ কাজেই ছয়-দফা ভোটের পর কংগ্রেসকে মাঝখানে রেখে বা বাইরে রেখে আঞ্চলিক দলগুলির মহাজোটের সম্ভাবনাই ক্রমশ উজ্জ্বল মনে হচ্ছে৷ অন্তত আমি তাই মনে করি৷''
মহাজোট কি দেশকে একটা স্থিতিশীল সরকার দিতে পারবে? কারণ আঞ্চলিক দলগুলির মতাদর্শের ভিন্নমুখীনতা বারংবার উঠে এসেছে এবং আসছে৷ ‘‘সেক্ষেত্রে সরকার চালাতে দলীয় স্বার্থের সংঘাত দেখা দিতে পারে৷ সহমতে আসা কঠিন হয়ে পড়বে৷ সেই রকম পরিস্থিতিতে বিজেপি সেই সুযোগ নেবে৷ কংগ্রেস যদি ১৪০ কিংবা ১২০-১৩০এর মতো আসন পায় এবং মহাজোট যদি দেড়শ'র মতো আসন পায়, তাহলে সরকার গঠন করতে অসুবিধা হবে না৷ তার পরে কী হবে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না,'' বললেন অধ্যাপক বন্দোপাধ্যায়৷