1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দিল্লির দাঙ্গা নিয়ে সংসদের ভিতরেই হাতাহাতি

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
২ মার্চ ২০২০

উত্তর-‌পূর্ব দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিয়ে সরকার ও বিরোধী পক্ষের সাংসদরা বিবাদে জড়িয়ে পড়লেন৷ বিবাদ গড়ালো হাতাহাতি পর্যন্ত৷ শাসক ও বিরোধী সদস্যদের এই আচরণে ব্যথিত স্পিকার ওম বিড়লা৷

https://p.dw.com/p/3Yl2N
ছবি: picture-alliance/dpa/STR

‘‘‌দাঙ্গাবাজ মুর্দাবাদ, অমিত শাহ মুর্দাবাদ’’ শ্লোগানে কেঁপে উঠলো ভারতের সংসদ৷ লোকসভা ও রাজ্যসভা দুই কক্ষেই বিরোধীদের সম্মিলিত বিক্ষোভে নাজেহাল হতে হলো সরকার পক্ষকে৷ উত্তেজনা গড়ালো দুই পক্ষের হাতাহাতি পর্যন্ত৷ তুমুল শোরগোলের জেরে অধিবেশন স্থগিত করতে বাধ্য হলেন স্পিকার৷ ভারতের সংসদে হইচই বা শোরগোল নতুন কিছু নয়৷ কিন্তু সংসদ কক্ষে সরকার ও বিরোধী পক্ষের সাংসদদের ধাক্কাধাক্কি, হাতাহাতির ঘটনা নজিরবিহীন৷ ঘটনার পর দু পক্ষকে ডেকে পাঠিয়ে সংসেদ মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন স্পিকার৷ যাকে নিয়ে এত কাণ্ড, সেই অমিত শাহ অবশ্য লোকসভায় আসেননি৷

অধিবেশন শুরু হওয়া মাত্র লোকসভায় শ্লোগান দিচ্ছিলেন বিরোধী দলগুলির সাংসদরা৷ প্রথমে একবার সভা মুলতুবি করেন স্পিকার৷ পরে সভার কাজ আবার শুরু হতেই আবার শুরু৷ এরই মধ্যে শোরগোল উপেক্ষা করে জরুরি কিছু সরকারি নথি পেশ করা হয় সংসদে৷ তারপর ‘‌ডাইরেক্ট ট্যাক্স-‌ বিবাদ সে বিশ্বাস ‌২০২০’ নামক প্রস্তাবিত আইন নিয়ে ভাষণ দিতে ওঠেন ভারতীয় জনতা পার্টির সাংসদ সঞ্জয় জয়সওয়াল৷ বিল নিয়ে আলোচনা হলেও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধীদের নাম নিয়ে উস্কানিমূলক ভাষণ দেওয়ার অভিযোগ তুলছিলেন৷ (‌নাম উল্লেখ না করে) টেনে আনছিলেন প্রিয়াঙ্কার স্বামী রবার্ট ভদ্র‌-‌র প্রসঙ্গ৷ তখন বিরোধীদের প্রতিবাদ চলছে৷ বক্তব্যের একেবারে শেষ অংশে বিজেপি সাংসদ বলেন, ‘‘‌কংগ্রেসিদের তথাকথিত মা সোনিয়া গান্ধী এসপার নয় ওসপার-‌এর কথা বলেছেন৷ তিনি সহিংসতা ছড়িয়েছেন৷ তার মন্তব্যের পর সহিংসতা ছড়িয়েছে৷’’ ঠিক এই সময় কংগ্রেসের গৌরব গগৈ‌সহ কয়েকজন সাংসদ ব্যানার ও পোস্টার নিয়ে জয়সওয়ালের পাশে গিয়ে দাঁড়ান৷ বিজেপি সাংসদের আশেপাশে তখন জড়ো হয়েছেন আরো কয়েকজন৷ তাঁরা পোস্টার, ব্যানার ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন৷ বিজেপি‌র এক সাংসদ রমেশ বিধুরি অতি সক্রিয় হয়ে কংগ্রেস সাংসদদের ধাক্কা দিতে শুরু করেন৷ ওদিকে ব্যানার হাতে ওয়েলে দাঁড়িয়ে ছিলেন কংগ্রেসের রামাইয়া হরিদাস৷ তাঁর হাত থেকে টেনে হিঁচড়ে ব্যানার কেড়ে নিতে দেখা যায় এক বিজেপি সাংসদকে৷ রমাইয়াও ততোধিক জোরে তা আবার ছিনিয়ে নেন৷ মাঝে এসে পড়েছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি৷ তিনি উভয়কে বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন৷ এরপর আরেক বিজেপি সাংসদ জসকৌর মিনা রমাইয়াকে ধাক্কা দিয়ে ব্যানার ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন৷ আবার রুখে দাঁড়ান রমাইয়া৷ এতসবের মধ্যেই ভীষণ উত্তেজিত ভঙ্গিতে বিরোধীদের দিকে তেড়ে যেতে দেখা যায় সত্তরোর্ধ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্মিনী চৌবেকে৷ এর ফাঁকে সভা মুলতুবি করেন স্পিকার৷ কিন্তু কংগ্রেস ও বিজেপি সাংসদরা পরস্পরের সঙ্গে হাতাহাতিতে লিপ্ত হয়ে পড়েন৷ পরে রামাইয়া বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে শারীরিক নিগ্রহের অভিযোগ তোলেন৷ লিখিত অভিযোগ জানান স্পিকারকে৷ তাঁর অভিযোগ, দলিত (‌অনগ্রসর)‌ মহিলা বলেই এমন করা হয়েছে৷ পাল্টা অভিযোগ জানিয়েছেন বিজেপি সাংসদ মিনা৷

সোমবার ছিল বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বের প্রথম দিন৷ অনুমান মতোই দিল্লির সহিংসতা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ইস্তফা দাবি করেন বিরোধী কংগ্রেস, তৃণমূল, শিবসেনা, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি, আরজেডি, ওয়াইএসআর (‌কংগ্রেস)‌-‌সহ সবকটি রাজনৈতিক দলের সাংসদরা৷ ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শন চলে৷ বিক্ষোভরত কংগ্রেস সাংসদদের হাতে ছিল ‘‌শাহ মাস্ট কুইট’ লেখা বড় দুটি ব্যানার, যা নজিরবিহীন৷ প্রায় সবাই পোস্টার হাতে নিয়েছিলেন৷ তাতে লেখা, ‘‌স্টপ হেট স্পিচ’, ‘‌সেভ আওয়ার কান্ট্রি’ ইত্যাদি৷ মুখে শ্লোগান, ‘‌প্রধানমন্ত্রী জবাব দো, গৃহমন্ত্রী ইস্তফা দো’৷ এই বিক্ষোভের জেরে বারবার মুলতুবি করতে হয়েছে সভার কাজ৷ সবমিলিয়ে উত্তাল ছিল সংসদের দুই কক্ষ৷

অন্যদিকে অধিবেশন শুরু আগে দিল্লিতে হিংসার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জবাব চেয়ে সংসদ ভবন চত্বরে মহাত্মা গান্ধী মূর্তির পাদদেশে পৃথকভাবে ধর্ণায় বসেন কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি ও তৃণমূল সাংসদরা৷ তৃণমূল সাংসদরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে রেখেছিলেন৷ রাজ্যসভার ভেতরেও মুখে কালো কাপড় বেঁধে রেখেছিলেন তারা৷ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে রাহুল গান্ধী, অধীর চৌধুরি, শশী থারুররা অংশ নিয়েছিলেন৷ সবার দাবি, ‘‘‌পদত্যাগ করুন অমিত শাহ৷’’