দিল্লি বিধানসভার ভোট শান্তিতে, কেজরিওয়ালের হ্যাটট্রিক হবে?
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আপ কি পরপর তৃতীয়বার একার ক্ষমতায় দিল্লিতে সরকার গঠন করতে পারবে, নাকি নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের চেষ্টা সফল হবে এবং দিল্লি বিধানসভায় আবার বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে? কংগ্রেস কি অন্তত একটা আসন পলাবে? বুধবার এই সিদ্ধান্ত নেবেন দিল্লির ভোটদাতারা। ফলাফল জানা যাবে আট ফেব্রুয়ারি।
দিল্লিতে ভোটের প্রচার থেকে ভোটগ্রহণপর্ব পুরোটাই সাধারণত খুবই নিরুত্তাপ হয়। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে তুলনা করলে দিল্লির ভোটকে নিস্তরঙ্গ লাগবে। বুথেও চাপা উত্তেজনা নেই। বুথের বাইরে কোনো মারামারি সচরাচর হয় না। আপ ও বিজেপি-র মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও তার প্রতিফলন কর্মীদের মধ্যে সচরাচর পড়ে না।
সকাল থেকেই দিল্লির বুথগুলিতে ভোটদাতারা ভিড় জমিয়েছেন। দিল্লিতে সাধারণত বেলা দশটা-এগারোটা পর্যন্ত ভালো ভোট পড়ে। আবার বিকেলের দিকে মানুষ ভোট দিতে যান। দুপুরের দিকে খুব বেশি মানুষ বুথ-মুখি হন না। এবারও সকালের দিকে বুথে মানুষের ভিড় দেখা গেছে।
সকাল নয়টা পর্যন্ত নয় শতাংশ ভোট পড়েছে।
কী বলছে রজনৈতিক দলগুলি
বাঙালিপ্রধান চিত্তরঞ্জন পার্ক এলাকার ছবিটাও একই। বিজেপি নেতা সলিল নন্দী ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''এবার পুলিশ একটু বেশি কড়াকড়ি করছে। আগে বুথকর্মীরা মোবাইল সুইচ অফ করে নিয়ে যেতেন। এবার তাদের মোবাইল নিয়ে যেতে দেয়া হচ্ছে না।''
আপ নেতা অনুপ ঠাকুর ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''সকাল থেকে উৎসবের আমেজেই ভোট হচ্ছে। দিল্লির ঐতিহ্য বজায় থাকছে। চিত্তরঞ্জন পার্কে সকাল থেকে মানুষ বুথে আসছেন। ভোট দিচ্ছেন। চলে যাচ্ছেন। তবে খুব বেশি লাইন হচ্ছে না।''
ভোট দিলেন রাষ্ট্রপতি
ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে ভোট দিলেন। ভোট দিয়েছেন ভারতের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আতিশি, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও সকাল সকাল ভোট দিয়েছেন।
কেজরিওয়াল কি পারবেন?
দিল্লিতে এবার ত্রিমুখি লড়াই। আপ, বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, সাবেক উপ মুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়া দীর্ঘদিন জেলে থাকার পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। কেজরিওয়াল দিল্লি-জুড়ে প্রচারের ঝড় তোলার চেষ্টা করেছেন।
একই কাজ করেছে বিজেপি। শুধু দিল্লির নেতারাই নয়, ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে নেতারা এসে প্রচার করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী, রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার-সহ রাজ্যের নেতারা গিয়ে জনসভা করেছেন।
কংগ্রেসও বিভিন্ন রাজ্য থেকে কর্মী ও নেতাদের নিয়ে এসে প্রচার করেছে। দিল্লিতে প্রায় সব রাজ্যের মানুষ আছেন। তবে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান ও পশ্চিমবঙ্গের মানুষের সংখ্য়া প্রচুর। তাই এই সব রাজ্য থেকে নেতাদের নিয়ে এসেছে সব দলই।
এরপরেও যে প্রশ্নটা রয়েছে, কে এবার জিততে পারে? প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত রায়চৌধুরী ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''এবার তীব্র লড়াই হচ্ছে। বিজেপি দিল্লি দখল করতে এবং কেজরিওয়ালকে হারাতে ঝাঁপিয়েছে। গত কয়েকটি বিুধানসভা নির্বাচনে দেখা গেছে, বিজেপি ৩৫ শতাংশের মতো ভোট পায়। তারা অন্তত সেই ভোট ধরে রাখতে পারবে। প্রশ্ন হলো, কেজরিওয়ালের দলের ভোট কমবে কিনা, কমলে সেটা কোনদিকে যাবে?''
জয়ন্ত মনে করেন, ''এখানে দলিত ভোট একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে। গত নির্বাচনে সেই ভোটের সিংহভাগ আপ পেয়েছিল। কিন্তু কংগ্রেস এবার দিল্লিতে তাদের এই পুরনো ভোটব্যাংক উদ্ধার করার চেষ্টা করছে। কংগ্রেস মুসলিম ভোটেরও দাবিদার। তবে অনেক মুসলিমের মনে হচ্ছে, কেজরিওয়ালই বিজেপি হারাতে পারবেন। তাই তাদের ভোট আপ-এ যেতে পারে। আর দিল্লির মধ্যবিত্তদের কেজরিওয়ালের উপর মোহভঙ্গ হয়েছে।''
সলিল নন্দী মনে করছেন, গত দুইবারের তুলনায় বিজেপি এবার অনেক ভালো জায়গায় আছে। ভোটদাতারা কেজরিওয়ালকে নিয়ে আর আগের মতো উন্মাদনা দেখাচ্ছেন না।
কিন্তু অনুপ ঠাকুর নিশ্চিত যে, আসন কমলেও আপই সরকার গঠন করতে পারবে। দিল্লির গরিব মানুষ এখনো কেজরিওয়ালের সঙ্গে আছেন।
জিএইচ/এসজি