1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দিনাজপুরে বাঁধ সংস্কারের প্রতিবাদ, কৃষকের মৃত্যু

সমীর কুমার দে ঢাকা
৭ নভেম্বর ২০২০

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার আশুরার বিলে বাঁধ সংস্কার বিষয়ে আন্দোলন চলছে৷ বাঁধ সংস্কারের প্রতিবাদে আট দিন ধরে অনশন করছেন কয়েকশ কৃষক৷ অনশনকারী এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে বলে আন্দোলনকারীরা জানালেও পুলিশ বলছে ভিন্ন কথা৷

https://p.dw.com/p/3kzaR
Bangladesch Landwirte protestieren gegen den Bau eines Staudamms in Dinajpur
ছবি: Samir Kumar Dey/DW

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার আশুরার বিলে বাঁধ সংস্কার বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলন চলছে৷ বাঁধ সংস্কারের প্রতিবাদে আট দিন ধরে অনশন করছেন কয়েকশ কৃষক৷ অনশনরত এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে বলে আন্দোলনকারীরা জানালেও পুলিশ বলছে ভিন্ন কথা৷

বাঁধ সংস্কার করা হলে বিলটিতেফসল উৎপাদনক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে দাবি কৃষকদের৷ তবে স্থনীয় প্রশাসন বলছে, বিলে কোন ব্যক্তিগত সম্পত্তি নেই৷ বাঁধ মেরামতে বাধা প্রদান করছে ‘ভূমি দখলকারীরা'৷ জমি উদ্ধার করে বিলের পানি ধরে রাখার জন্য জন্য ক্রসড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে।

এলাকাবাসী জানায়, দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে আশুরার বিলে ফসল উৎপাদন করছেন কৃষকরা৷ ২০১৯ সালে সরকার নবাবগঞ্জ শেখ রাসেল জাতীয় উদ্যান সংস্কারের নামে আশুরার বিলে একটি বাঁধ নির্মাণ করে৷ সে সময় এলাকার লোকজন বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদ জানালে এই এলাকার ২৪ জন গ্রামবাসীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৭০০ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়৷

Bangladesch Landwirte protestieren gegen den Bau eines Staudamms in Dinajpur
ছবি: Samir Kumar Dey/DW

বাঁধটি নির্মাণের ফলে জেলার নবাবগঞ্জ, বিরামপুর ও ফুলবাড়ী উপজেলার প্রায় ৩৫ হাজার পরিবারের উপার্জন বন্ধ হয়ে যায়, দাবি এলাবাসীরা৷

ভেতরে পানি জমে থাকায় কৃষকরা সেখানে আর চাষাবাদ করতে পারেন না৷ এ বছর বন্যায় বাঁধটি ভেঙ্গে গেলে কয়েকদিন আগে উপজেলা প্রশাসন এটি পুনঃনির্মাণের জন্য খনন যন্ত্র নিয়ে আসে৷ এ সময় বাধ নির্মাণে বাধা দেয় গ্রামবাসী৷ গত আট দিন ধরে বাঁধের উপর অনশন ও বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছেন তারা৷

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আন্দোলনকারী কৃষক গোলাপ সরকার অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ তাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় তিনি মারা যান৷ সরকার নবাবগঞ্জ উপজেলার গোলাপগঞ্জ ইউনিয়নের হরিপুর আদর্শ গ্রামের জব্বার সরকারের ছেলে৷ এছাড়াও প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আরও ছয়জন অসুস্থ হয়েছেন৷

‘৫০ বছর ধরে এখানে আবাদ করছি’

অনশনে অংশ নেওয়া কৃষক রেজাউল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা গত আট দিন ধরে এখানে অনশন করছি৷ অনশন চলাকালে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গোলাপ সরকার অসুস্থ হয়ে পড়লে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পথে তিনি মারা যান৷ এছাড়াও আট দিন ধরে অনশনে থাকা সিরাজুল ইসলাম, গফুর আলী, আইজুল ইসলাম, দিলবার আলী ও সাদেক আলীসহ আরো ছয়জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন৷ তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে আমরা এবং আমাদের পূর্বপুরুষরা এই আশুরার বিলে বিভিন্ন ফসল আবাদ করছি৷ কিন্তু আমাদের ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পত্তির উপর সরকার বাঁধ নির্মান করেছে, যা নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে৷ চলতি বছরের বন্যায় বাঁধটি ভেঙ্গে যায়৷ বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার পর উপজেলা প্রশাসন থেকে আবারও বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা করছে৷ আমরা বাঁধ নির্মাণ করতে দিব না৷ বাঁধ নির্মাণ করা হলে আমরা ওই জমিতে কোন ফসল উৎপাদন করতে পারব না৷''

কৃষকের মৃত্যুর ব্যাপারে জানতে চাইলে নবাবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অশোক কুমার চৌহান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাঁধ সংস্কার না করার দাবিতে অনশন ও নানা কর্মসূচি পালন করছে গ্রামবাসী৷ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজের বাড়িতে গোলাপ সরকার অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ সেখানেই তিনি মারা যান৷''

তিনি বলেন, ‘‘সরকার অনশনে মারা গেছেন বলে যে প্রচারণা করা হচ্ছে সেটা ঠিক নয়৷ তবে তিনি অনশনে যোগ দিয়েছিলেন এটা সত্যি৷ শুক্রবার সকাল ১০টায় তাকে দাফন করা হয়৷ পরিবারের অভিযোগ না থাকায় লাশের ময়না তদন্ত করা হয়নি৷’’

Bangladesch Landwirte protestieren gegen den Bau eines Staudamms in Dinajpur
ছবি: Samir Kumar Dey/DW

এদিকে, শনিবারও কয়েকশ নারী-পুরুষ বাঁধকে ঘিরে অবস্থান করছেন৷ সরকারি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলাবেন বলে জানান তারা৷

তবে আন্দোলনকারী কৃষকদের ভাড়াটে হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন নবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘ওরা খাস জমিতে এতদিন চাষাবাদ করে খেয়েছে৷ এখন সরকার এই জমিকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা দিয়েছে৷ এক হাজার ৫০০ একর জমিতে বনভূমির সঙ্গে ৫০০ একর জলাভূমি নিয়ে এই উদ্যান৷ এই জলাভূমির পুরোটাই সরকারি খাস জমি৷ এখানে কারো ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি নেই৷ তাদের এই দাবি একেবারেই অযৌক্তিক৷’’

‘ওরা খাস জমিতে চাষাবাদ করেছে’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১০ সালে নবাবগঞ্জ উপজেলার শালবনকে শেখ রাসেল জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে সরকার৷ ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে উদ্যানের ভিতর দৃষ্টিনন্দন ৯০০ মিটার দীর্ঘ আঁকাবাঁকা শেখ ফজিলাতুন্নেছা কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয়৷ ওই বছর বিলের পানি রক্ষায় বগুড়া ও দিনাজপুর জেলা ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্বাহী প্রকৌশল ও বিএডিসি'র যৌথ উদ্যোগে উদ্যানের পূর্ব পাশে ১৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা ব্যয়ে ক্রসড্যাম নির্মাণ করা হয়৷ এছাড়াও চলতি বছর পর্যটকদের সুবিধার জন্য ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে গোলচত্তর, শৌচাগার, রাস্তার উন্নয়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু হয়৷

নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুন নাহার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ক্রসড্যাম নির্মাণের পর গত জানুয়ারীতে আশুড়ার বিলেও অবৈধ জমি দখলচক্রের লোকজন বাঁধটি কেটে দেয়৷ এরপর দিনাজপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রায় ৫ লক্ষ টাকা খরচ করে বাঁধটি মেরামত করে৷ কয়েকমাস আগে দুই দফা বন্যায় ক্রসড্যামের পাশে নির্মাণ করা বাঁধটি আবারো ভেঙে যায়৷ স্থানীয় প্রশাসন গত কয়েক দিন আগে ভেঙে যাওয়া বাঁধটি মেরামতের উদ্যোগ নিলে সেখানে ভূমি দখলকারীরা বাধা প্রদান করে৷''

তিনি বলেন, ‘‘স্থানীয় প্রশাসন সেই জমিগুলো উদ্ধার করে বিলের পানি ধরে রাখার জন্য ক্রসড্যাম নির্মাণ করে৷ এতে শুরু থেকেই চক্রটি বাধা দিয়ে আসছিল৷ তাদের সাথে কয়েকদফা আলোচনাও করেছি আমরা৷ বিকল্প প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু তারা কোন প্রস্তাবেই রাজি নন৷’’