1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ধাতুর খোঁজে ড্রোনের ব্যবহার

২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯

আধুনিক প্রযুক্তির এই যুগে ধাতুর চাহিদা বেড়েই চলেছে৷ কিন্তু অতীতের মতো বিশাল খনি থেকে ধাতু উদ্ধার অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত কারণে কঠিন হয়ে পড়ছে৷ গবেষকরা নতুন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেই অসাধ্যসাধন করার চেষ্টা চালাচ্ছেন৷

https://p.dw.com/p/3Q4la
প্রতীকী ছবিছবি: Getty Images/AFP/E. Cabanis

মূল্যবান ধাতুর সন্ধানে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে৷ জার্মানির ফ্রাইব্যার্গ ইনস্টিটিউট অফ রিসের্সেস টেকনোলজির গবেষকরা সেই লক্ষ্যে একটি ড্রোন তৈরি করেছেন৷ তাতে প্রায় এক লাখ ইউরো মূল্যের পরিমাপের যন্ত্র রয়েছে৷ সেই ড্রোন ম্যাগনেটোমিটারের মতো যন্ত্র নিয়ে বিশাল এলাকা চষে বেড়াতে পারে৷ এভাবে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রে পরিবর্তন শনাক্ত করে আকরিকের সন্ধান করা হয়৷ ফলে এলাহি, জটিল ও ব্যয়বহুল খননকার্যের প্রয়োজন পড়ে না৷

গবেষকদলের সদস্য রিশার্ড গ্লোয়াগুয়েন বলেন, ‘‘আমরা জনবসতির আশেপাশের পরিবেশে যত কম সম্ভব হস্তক্ষেপ করতে চাই৷ এভাবে আমরা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতাও পেতে চাই৷ দক্ষতা ও নিরাপত্তার বিষয়গুলিও গুরুত্বপূর্ণ৷ ড্রোনের মাধ্যমে দূর থেকেই দ্রুত তথ্য সংগ্রহ করা যায়৷’’

ড্রোন দিচ্ছে গুপ্তধনের সন্ধান

তারপর প্রত্যেকটি পরিমাপ যন্ত্রে সংগৃহীত তথ্য একত্র করা হয়৷ ভূতত্ত্ববিদরা এর মাধ্যমে মাটির নীচের কাঠামো শনাক্ত করতে পারেন এবং সেখানে কোন ধাতু পাওয়া যেতে পারে, সে বিষয়ে অনুমান করতে পারেন৷

বিখ্যাত জার্মান আবিষ্কারক আলেক্সান্ডার ফন হুমবল্ট বেঁচে থাকলে এমন প্রাক-অনুসন্ধানের প্রক্রিয়া সম্পর্কে নিশ্চয় উৎসাহিত হতেন৷ কারণ তাঁর আমলে মাটির গভীরে সঞ্চিত সম্পদ খোঁজার কোনো উপায় ছিল না৷ রিশার্ড গ্লোয়াগুয়েন সে যুগের বাস্তব মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘সে আমলে যেখানেই মাটির উপরের স্তরে আকরিক পাওয়া যেত, সেখানেই খনি গড়ে তোলা হতো৷ অর্থাৎ কেউ এমন উৎসের সন্ধান পেলেই খনন করতো৷ এখন আর সেটা সম্ভব নয়, কারণ ভূপৃষ্ঠের প্রায় সবটাই পরীক্ষা করা হয়ে গেছে৷ এবার মাটির গভীরে নজর দিতে হবে৷’’

তখনকার মতো এখনও চারিপাশের পাথর থেকে ধাতু নিষ্কাশন করতে হয়৷ ফ্রাইব্যার্গ ইনস্টিটিউট অফ রিসের্সেস টেকনোলজির আরেক জন গবেষক মার্টিন রুডল্ফ মনে করেন, ‘‘কীভাবে পাথর কাটা হয়, কীভাবে স্ট্যাম্প মিলের মাধ্যমে আকরিক গুঁড়া করা হয়, সে সব জানা জরুরি ছিল৷ শুধু বড় পাথর ভেঙে আলাদা করার প্রক্রিয়ার প্রয়োজন ছিল৷’’

এভাবে শুধু রূপা, লোহা বা টিন নিষ্কাশন সহজ ছিল৷ অন্যদিকে জার্মেনিয়াম, ইন্ডিয়াম বা রেয়ার আর্থের মতো ধাতু উদ্ধার করা কঠিন কাজ৷ আজ উইন্ডমিল, ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যাটারি ও স্মার্টফোনের জন্য এ সব ধাতুর প্রয়োজন হয়৷ মাটির মধ্যে এ সবের ঘনত্ব অত্যন্ত কম৷ এই সব ধাতু কীভাবে ভাঙা পাথর থেকে আলাদা করা যায়, মার্টিন রুডল্ফ সে বিষয়ে গবেষণা করছেন৷

পানি ও রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে ধাতুর জন্য বড় আধারে ফেনাভরা এক তরল সৃষ্টি করা হয়৷ সবকিছু ঠিকমতো চললে পাথরের গুঁড়া থেকে ধাতুর কণা গ্যাসের বুদবুদের মাধ্যমে উপরের স্তরে চলে আসবে৷ তখন একের পর এক ফেনার স্তর ছেঁকে নিতে হবে৷

কিন্তু সমস্যা হলো, এই ফ্লোটেশন প্রক্রিয়া দ্রবণের উপকরণ ও অন্যান্য কারণে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর৷ মার্টিন রুডল্ফ বলেন, ‘‘আমার গবেষণার প্রত্যাশিত লক্ষ্য খুব সহজ৷ ফ্লোটেশন নিয়ে আর গবেষণা নয়, বরং এমন প্রক্রিয়ার খোঁজ চলছে, যার আওতায় কোনো তরল ছাড়াই ধাতু আলাদা করা যাবে৷ এভাবেও কিছু সাফল্য পাওয়া যাবে৷ আমরা সেই কাজই করছি৷’’

ফ্লোটেশন প্রক্রিয়াকে পরিবেশবান্ধব করে তোলাও গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যাতে এভাবে ব্যবহারের পর মূল্যবান ধাতু রিসাইক্লিং করে আবার উদ্ধার করা সম্ভব হয়৷

হুমবোল্টের মতো আধুনিক যুগে গুপ্তধনের সন্ধানের ক্ষেত্রেও বৃহত্তর চিত্র মনে রাখা অত্যন্ত জরুরি৷

মারিয়া লেসার/এসবি