1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
পরিবেশস্পেন

দাবদাহে তাপমাত্রাই স্বাস্থ্যঝুঁকির একমাত্র কারণ নয়

১৮ আগস্ট ২০২৪

ইউরোপের দেশ স্পেনে টানা ২১ দিন ধরে চলছিল দাবদাহ৷ তীব্র তাপদাহে পুড়ছিল দেশটির মাদ্রিদ, বার্সেলোনা এবং জারাগোজা৷

https://p.dw.com/p/4jaqJ
বার্সেলোনার সমুদ্রতট
মানুষের স্বাস্থ্যের উপর তাপদাহের প্রভাব শুধুমাত্র উচ্চ তাপমাত্রাতেই সীমাবদ্ধ নয়৷ছবি: Marc Asensio/NurPhoto/IMAGO

গবেষকেরা বলছেন, এমন তাপদাহ মানুষের স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে৷

তবে শুধু উচ্চ তাপমাত্রাই নয়, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বিষয়াদিও মানুষের স্বাস্থ্যের উপর তাপদাহের প্রভাব ব্যাখ্যা করতে পারে বলে জানান মাদ্রিদের কার্লোস ৩ হেলথ ইনস্টিটিউটের গবেষক জুলিও ডিয়াজ৷

এই গবেষকের মতে, মানুষের স্বাস্থ্যের উপর তাপদাহের প্রভাব শুধুমাত্র উচ্চ তাপমাত্রাতেই সীমাবদ্ধ নয়৷ এর প্রভাব বোঝা যেতে পারে মানুষের আয়, বয়স, সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা এবং গরমের সময়ে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ কীভাবে জীবনযাপন করছে তার উপর৷    

গবেষণায় স্পেনে তাপদাহের প্রভাব ব্যাখ্যা করেন এই গবেষক৷

তিনি বলেন, ‘‘আমরা স্পেনকে ১৮২টি অঞ্চলে ভাগ করে দেখেছি তাপমাত্রা কতো ডিগ্রি হলে মানুষ মারা যায়৷ আমরা দেখলাম, সেভিইয়েতে ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রাকে তাপদাহ বলা যাচ্ছে না আবার উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় কোরুনাতে ২৬ ডিগ্রি তাপমাত্রাই তাপদাহ৷''

তিনি আরো জানান, ‘‘তাপদাহের সময়ে তিন ভাগ মানুষ হিটস্ট্রোকে মারা যান৷ তাপমাত্রা শরীরের অন্যান্য রোগকে প্রভাবিত করে যার ফলে মানুষের মৃত্যু হয়৷

এই গবেষক আরো জানান, তাপদাহের প্রথম ধাপে দ্বিতীয় ধাপের তুলনায় বেশি মানুষ মৃত্যু ঝুঁকিতে থাকে৷ কারণ প্রথম ধাপে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হওয়া দ্বিতীয় ধাপে এই সংখ্যা কমে আসে৷ তৃতীয় ধাপে তা আরো কমে আসে৷ আর এ কারণে তাপদাহের প্রথম পর্বে বেশি মানুষের মৃত্যু ঝুঁকি থাকে৷

মানুষের স্বাস্থ্যের উপর তাপদাহের প্রভাব বিশ্লেষণ করে এর সঙ্গে আর্থ-সামাজিক সম্পর্কের বিষয়টিও দেখতে পান এই গবেষক৷

তিনি জানান, দরিদ্র এলাকাগুলোতে তাপমাত্রার বৃদ্ধির প্রভাব বেশি৷

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘‘তিন জনের একটি রুমে যেখানে মাত্র একটি জানালা রয়েছে এবং কোনো এয়ার কন্ডিশন বা ফ্যান নেই সেই রুমে উচ্চ তাপমাত্রার প্রভাব যেই ভিলাতে একটি সুইমিং পুল আছে সেখানকার চেয়ে বেশি৷আবার এটি শুধুমাত্র এয়ার কন্ডিশন বা ফ্যান থাকা না থাকর চেয়ে সেটি চালাতে পারার সক্ষমতার উপর নিভর করে৷ তাপদাহের সময়ে স্পেনে বিদ্যুতেরর দাম আকাশচুম্বী হয়েছিল৷''

তিনি জানান, হিটস্টোক তখনই হয় যখন কোনো ব্যাক্তি এমন তাপমাত্রায় থাকেন যেই তাপমাত্রা তার শরীর নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না৷ ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সূর্যের নিচে শারীরিক অনুশীলন করলে এবং শরীর যদি তাপমাত্রাকে ৩৭ ডিগ্রিতে নামিয়ে আনতে না পারে তাহলে ঝুঁকি তৈরি হয়৷

তার কথায়, ‘‘আপনার শরীর যখন তাপমাত্রাকে ৩৭ ডিগ্রিতে ধরে রাখতে না পারে তখন আপনার মস্তিষ্কসহ শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দেয়৷''

উল্লেখ ২০০৩ সালে ইউরোপে সবচেয়ে ভয়াবহ তদাপদাহের ঘটনা ঘটেছির৷ ১৫ দিনের ওই তাপদাহে ৭০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল৷

এই গবেষকের মতে, মানুষ আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে উঠে৷ ১৯৯৩ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত তাপদাহের উপরের প্রতি ডিগ্রি তাপমাত্রায় স্পেনে মৃত্যুর হার ১৪ ভাগ বেড়েছিল৷ আর ২০০৩ সালের পর এটি ৩ ভাগের বেশি বাড়েনি৷

মানুষ কীভাবে অভ্যস্ত হযে উঠছে তার উদাহরণ দিতে গিয়ে এই গবেষক জানান, মাদ্রিদের মতো শহরে আগে কখনো (গরমের সময়) প্রবীণদেরকে শর্টস পরে বাইরে বের হতে দেখা যায়নি৷ কিন্তু এখন দেখা যায়, তারা সবাই শর্টস পরে, মাথায় একটি টুপি দিয়ে, হাতের পানির বোতল নিয়ে বাইরে বের হচ্ছে৷  

আরআর/আরকেসি (এএফপি)