1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দর্শকদের সামনেই মূর্তি গড়েন যে ভাস্কর

৬ আগস্ট ২০২১

শখকে পেশায় রূপান্তরিত করে দ্রুত আবক্ষ মূর্তি গড়ে তুলতে পারেন ব্রিটিশ এক ভাস্কর৷ স্টুডিও ছেড়ে দর্শকদের মাঝে কাজ করতে ভালোবাসেন তিনি৷ খোদ ব্রিটেনের রানি ও রাজপরিবারের সদস্যরা তার মডেল হয়েছেন৷

https://p.dw.com/p/3ycq2
Madame Tussauds Wax Museum | Wachsfigur von Kamala Harris und Joe Biden
ছবি: Merlin Entertainments

ভাস্কর ফ্রান্সিস সেগেলম্যান লন্ডনের পূর্ব প্রান্তে নিজের স্টুডিওতে প্রবেশ করলে বিশিষ্ট বেহালাবাদক নাইজেল কেনেডি বা প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং ব্রিটেনের সমাজের পরিচিত মুখগুলি নীরব দর্শক হয়ে থাকেন৷ ৭২ বছর বয়সি এই নারী বায়না অনুযায়ী ভাস্কর্য সৃষ্টি করেন৷ ফ্রান্সিস বলেন, ‘‘আসলে হবি বা শখ হিসেবে শুরু করেছিলাম৷ সারা জীবন ধরেই আমি শিল্পী, কারণ আমার আশেপাশের পরিবেশ শিল্পসর্বস্ব৷ আমার দুই সন্তান যখন ছোট ছিল, তখন ছোট ক্লাস করেছিলাম৷ তারপর থেকে ভাস্কর্যই আমার ধ্যানজ্ঞান৷ কখনোই সেই কাজ বন্ধ করতে চাই নি৷ ৩০-৩২ বছর আগে আমি ভাস্কর্যকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলাম৷’’

অত্যন্ত দ্রুত কাজ করা তাঁর বিশেষ প্রতিভার মধ্যে পড়ে৷ মাত্র ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে তিনি আবক্ষ মূর্তি তৈরি করতে পারেন৷ সেগেলম্যান প্রায়ই কোনো ভালো কাজের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে দর্শকদের সামনে কাজ করেন৷ ব্রিটিশ চলচ্চিত্র তারকা জোয়ান কলিন্স, রুশ ব্যালে নর্তকী সের্গেই পলুনিন ও ব্রিটিশ অভিনেতা জোয়ানা লামলির মূর্তি তিনি এভাবেই তৈরি করেছিলেন৷ ফ্রান্সিস বলেন, ‘‘আমি দর্শকদের সঙ্গে কাজ করতে ভালোবাসি৷ অদ্ভুত মনে হলেও একা স্টুডিওতে কাজে ডুবে থাকতে পছন্দ করি না৷ দুই ঘণ্টা ধরে কাজ করার সময় ইতিবাচক ভাবনাচিন্তা ছাড়া ভাস্কর্য ঠিকমতো তৈরি হবে না৷’’

দুই ঘণ্টায় আবক্ষ মূর্তি

২০০০ সালে ফ্রান্সিস সেগেলম্যান প্রিন্স ফিলিপসের ভাস্কর্য তৈরি করার দায়িত্ব পেয়েছিলেন৷ তারপর ২০০৭ সালে রানি এলিজাবেথের ভাস্কর্য তৈরি করার সুযোগ এলো৷ তারপর আনুষ্ঠানিকভাবে রাজপরিবারের ভাস্কর হিসেবে তিনি প্রিন্স চার্লস ও প্রিন্সেস অ্যান-এরও ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য তৈরি করেন৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ফ্রান্সিস সেগেলম্যান বলেন, ‘‘রানির সঙ্গে কাজ করা আমার সারা জীবনের সবচেয়ে অসাধারণ অভিজ্ঞতা৷ তিনি চমৎকার এক নারী৷ অবশ্যই স্নায়ুর উপর প্রবল চাপ অনুভব করেছি, কারণ সব সময় ক্যালিপার দিয়ে মাপজোক করতে হয়েছে৷ তাঁর চুল ও মুখচ্ছবির মাপ নিতে গিয়ে ভীষণ নার্ভাস হয়ে পড়েছিলাম৷’’

এক বছরের মধ্যে ফ্রান্সিস বাকিংহ্যাম প্রাসাদে তিনবার রানির সঙ্গে কাজ করেছেন৷ ২০০৮ সালে রানি নিজে সেই আবক্ষ মূর্তির মোড়ক উন্মোচন করেন৷

তবে ফ্রান্সিস শুধু মান্যগন্য ও বিখ্যাত ব্যক্তিদের মূর্তি তৈরি করেন না৷ তিনি নিজের অত্যন্ত প্রিয় একটি সিরিজ নিয়েও কাজ করছেন৷ ২০১৭ সাল থেকে তিনি নাৎসি আমলের ইহুদি নিধন যজ্ঞে বেঁচে যাওয়া মানুষদের মাথা ভাস্কর্য হিসেবে গড়ে তুলছেন৷ তাঁদের নিয়ে স্থায়ী স্মারক গড়াই এই উদ্যোগের লক্ষ্য৷ ফ্রান্সিস বলেন, ‘‘আমি ভেবেছিলাম, সেই অনুভূতি সামলে উঠতে পারবো না৷ আইভর নামের এক ব্যক্তির মুখচ্ছবি গড়ে তোলার সময় তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আমি কি আপনাকে মা ডাকতে পারি? কারণ আপনি আমাকে নতুন জীবন দিয়েছেন৷ আমার জীবন শেষ হয়ে যায় নি, সেটা চলতেই থাকবে৷ আমি শুধু সেটাই চেয়েছিলাম৷' এ কথা শুনে আমি আরও পরিশ্রম করতে লাগলাম৷ মনে হলো, এই মানুষগুলি মারা যাচ্ছেন, তাই আমি যত বেশি সম্ভব মানুষের মুখ গড়ে তুলতে চাই৷’’

টেমস নদীর তীরে এক লাইভ ইভেন্টে দর্শকরা শুধু ভার্চুয়াল প্রক্রিয়ায় উপস্থিত ছিলেন৷ ফ্রান্সিস সেগেলম্যান এ দিন মালা ট্রিবিক নামের এক নারীর আবক্ষ মূর্তি গড়ে তুলেছেন৷ ১৯৩০ সালে তাঁর জন্ম৷ ইসরায়েলের হলোকস্ট স্মারক কেন্দ্র ‘ইয়াদ ভাশেম' শিল্পীকে সেই দায়িত্ব দিয়েছিল৷ মালা ট্রিবিক জানালেন, ‘‘সাধারণত আমি এমন কিছু করি না৷ বিষয়টিকে আমি ভালোভাবেই নিয়েছি৷ তাঁর কাজ দেখতে হয়তো ভালো লাগবে৷ কারণ কাজের জন্য দক্ষতার প্রয়োজন৷ সেইসঙ্গে তাঁকে দ্রুত কাজ সারতে হবে৷’’

দুই ঘণ্টার মধ্যে কাদামাটি দিয়ে ফ্রান্সিস মালার আবক্ষ মূর্তি গড়ে তুললেন৷ পরে সেটিকে ব্রোঞ্জের ছাঁচে ফেলা হবে৷ ফ্রান্সিস সেগেলমানের কাজের দৌলতে মালা ট্রিবিক ও হলোকস্ট থেকে বেঁচে ফিরে আসা অন্যান্য মানুষ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অমর হয়ে থাকবেন৷

ডিনা ওসিনস্কি/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান