‘দমনের রাজনীতি করে কেউ টিকে থাকতে পারেনি’
২৭ ডিসেম্বর ২০১৯ডয়চে ভেলে : ডাকসু ভিপি নুর তো প্রায়ই মার খাচ্ছে? কেন বারবার তার উপর হামলা?
মোহাম্মদ নাসিম: সে তো ডাকসুর মতো একটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত ভিপি৷ এই হামলা খুবই দুঃখজনক৷ আজকেও দেখলাম তার উপর যারা হামলা করেছে তাদের দুইজন গ্রেপ্তার হয়েছে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংগঠনের মধ্যে এত বেশি অছাত্র, এত বেশি অনুপ্রবেশকারী, যে কারণে প্রায়ই এই ধরনের ঘটনা ঘটছে৷ এটা খুবই দুঃখজনক৷ এখানে আমার মতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার৷ যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে৷
বাংলাদেশে দমন পীড়নের রাজনীতি কবে থেকে শুরু?
সত্যি কথা বলতে গেলে বলতে হবে, এটা জিয়াউর রহমানের সময় শুরু হয়েছে৷ জিয়াউর রহমানের সময় সামরিক আইন জারি করে বিরাজনীতিকরণের কাজটা উনিই তো করে গেছেন৷ ওই সময় সামরিক আইনের ফলে সন্ত্রাস, ছাত্রদের দিয়ে গুণ্ডামি করানো শুরু হয়৷ যা এরশাদের সময়েও অব্যাহত ছিল৷
এরশাদ শাসনামলে এই ধরনের ঘটনা কেমন ছিল?
সব আমলেই এটা বেশি ছিল৷ এটার ভুক্তভোগী আমরা, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা৷ তখন যে পরিমাণ দমন পীড়ন হয়েছে সেটা কল্পনা করা যায় না৷ রাজনীতিকদের দমন করার জন্য এরশাদ-খালেদা জিয়া সব ধরনের পদক্ষেপই নিয়েছেন৷ বলতে গেলে এখনো সেটার ছিটেফোঁটা রয়ে গেছে৷
বর্তমান সরকারের সময় দমন পীড়ন বেড়ে গেছে বলে বলা হচ্ছে?
এখন কিন্তু এমন ঘটনা ঘটলে সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে৷ যে ঘটনাগুলো ঘটে সেটা অনাকাঙ্খিত৷ সরকার যখনই জানতে পারে তখনই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে৷ অনেকে গ্রেপ্তার হচ্ছে, অনেককে বহিষ্কার করা হচ্ছে৷ আমাদের সরকারই কোনো ঘটনা ঘটলে দলীয় চিন্তা বাদ দিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে৷
বিরোধী মতাদর্শের মানুষ এখন সবচেয়ে বেশি নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন?
এটা ঠিক না৷ বরং আমরা বেশি নির্যাতিত হয়েছি৷ আমাদের নেত্রী কারারুদ্ধ হয়েছেন৷ খালেদা জিয়ার সময় নির্যাতনের সকল মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল৷ অনেক নেতা, এমপি খুন হয়েছেন৷ প্রত্যেক নেতাই নির্যাতিত হয়েছেন৷ আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে রাখা হতো৷ রাজনৈতিকভাবে কাউকে দমন করছি, এটা কেউ বলতে পারবে না৷
আপনার দৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি দমনের রাজনীতি হয়েছে কোন আমলে?
বলতে হলে, সবচেয়ে বেশি দমনের রাজনীতি হয়েছে জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার আমলে৷ এরশাদের আমলে হয়েছে, কিন্তু সবচেয়ে বেশি হয়েছে খালেদা জিয়ার আমলে৷ তখন তো আমাদের নেত্রীসহ সব নেতাকে মারার জন্য গ্রেনেড হামলা হয়েছে৷ তখন তো আওয়ামী লীগের কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি৷
দমনের রাজনীতির শেষ পরিণতি কি?
দমনের রাজনীতি করে কেউ টিকে থাকতে পারেনি৷ এখন গণতন্ত্র আছে, সংসদ আছে৷ কথা বলার অধিকার পরিপূর্ণভাবে আছে৷ মিডিয়ার স্বাধীনতা আছে৷ এখন ইচ্ছেমতো লেখা যায়৷ আমরা প্রত্যেকটা ঘটনার নিন্দা জানাই৷ পাশাপাশি ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে৷
কেউই তো নিপীড়ন করে টিকে থাকতে পারেনি৷ তারপরও কেন এই নিপীড়ন?
ক্ষমতাসীন দলের অনেকেই ক্ষমতাকে ব্যবহার করতে চায়৷ তারা তো প্রশ্রয় পাচ্ছে না৷ দেখেছেন, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷ ক্ষমতাকে ব্যবহার করে বাড়াবাড়ি অনেকেই করতে চায়৷ এটা তো অসম্ভব কিছু না৷ এখনে অনেক বেশি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে৷
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ কি?
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে অব্যাহত রাখতে হবে৷ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যত বেশি শক্তিশালী হবে ততই উত্তরণ ঘটবে৷ অন্য দেশেও এটা হয়৷ এই ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে সবসময়ই পদক্ষেপ নিতে হবে৷ আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি৷
বর্তমান সরকারের সময়ে যতগুলো ঘটনা ঘটেছে, তার সবগুলোতেই কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?
সবগুলোতেই নেওয়া হয়েছে৷ বুয়েটের ঘটনা দেখেন৷ নুরের উপর হামলার ঘটনা দেখেন৷ বিলম্ব হতে পারে কিন্তু সব ঘটনাতেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷
এত ব্যবস্থা নেওয়ার পর কেন ছাত্রনেতাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না?
এটা আমাদের জন্যও দুশ্চিন্তার বিষয়৷ এত ব্যবস্থা নেওয়ার পরও কেন হচ্ছে? তবে উপর পর্যায়ে এখন আর নেই, নিচের দিকে হয়ত আছে৷ আমার মনে হয় ধীরে ধীরে এটা কমে যাবে৷ যারা এটা করছে তারা ছাত্রলীগের নামধারী৷ তারা ছাত্রলীগ করে কিনা সন্দেহ আছে৷
আরো বেশি মনিটরিং দরকার কি-না?
মনিটরিং না হলে ব্যবস্থা নিচ্ছি কিভাবে৷ সরকার প্রধানের এ ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা আছে৷ আশা করি কমে যাবে৷ না কমলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷