দক্ষিণে সাইক্লোনের ধাক্কা না কাটতেই উত্তর-পূর্বে বন্যার আভাস
ভারি বৃষ্টি আর ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তলিয়ে গেছে বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা৷ দেখা দিয়েছে বন্যার শঙ্কা৷ অন্যদিকে রেমালের ক্ষত এখনও কাটেনি দক্ষিণে৷
ভেঙেছে বাঁধ
রোববার বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল৷ জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে বিভিন্ন জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ এর মধ্যে খুলনা, বগেরহাট, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনায় বাঁধ বেশি ভেঙেছে৷ খুলনা বিভাগে ৬১ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ বরগুনায় ১২ কিলোমিটার, পটুয়াখালিতে নয় কিলোমিটার এবং পুরো বরিশাল বিভাগে ৫০ কিলোমিটার বাঁধের ক্ষতি হয়েছে৷
লোকালয়ে পানি
খুলনার কয়রায় রেমালের আঘাতে ভেঙে গেছে দশহালিয়া এলাকার বেড়িবাঁধ৷ লোকালয়ে ঢুকছে পানি৷ উপজেলার আটরা, গোবিন্দপুর, জয়পুরসহ ১২ গ্রামের মানুষ এখনও পানিবন্দি৷ ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন৷
ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ
ঘূর্ণিঝড় রেমালে মেঘনা নদীর জোয়ারে ভোলার মনপুরা উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের বেড়ি বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ ভোলা জেলার মোট ১৩ কিলোমিটার বাঁধ রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷
ধসে পড়েছে বাড়ি
বিভিন্ন জেলায় ঘূর্ণিঝড়ে বহু বাড়ি-ঘর ধসে পড়েছে৷ ছবিতে ভোলার দৌলতখানের পৌর ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিধ্বস্ত কয়েকটি ঘর দেখা যাচ্ছে৷
পানিবন্দি মানুষ
রেমালের প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গ ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে৷ তাতে তৈরি হওয়া জলাবদ্ধতা বৃহস্পতিবারও কাটেনি৷ নারায়ণগঞ্জের ডিএনডি বাঁধের ভেতরে রাস্তাঘাট এখনও ডুবে আছে৷ শিল্পকারখানার বর্জ্য মিশ্রিত পানির দুর্গন্ধে কাটাচ্ছেন সেখানকার মানুষ৷
দুর্যোগ সিলেটে
বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের তেমন ক্ষতিকর প্রভাব পড়েনি৷ কিন্তু রেমাল চলে যাওয়ার পর দুর্ভোগে পড়েছেন সিলেটের মানুষ৷ বুধবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সেখানে স্বল্পমেয়াদী বন্যার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে৷
নিম্নাঞ্চলে দুরবস্থা
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র আশঙ্কার কথা বললেও এরই মধ্যে তলিয়ে গেছে সিলেটের সদর, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট আর গোয়াইনঘাট এলাকার নিম্নাঞ্চল৷ বাড়ি-ঘরেও ঢুকে পড়েছে পানি৷ কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন৷
ত্রাণ তৎপরতা
পানিবন্দি মানুষজন পড়ছেন খাদ্য সংকটে৷ তবে ত্রাণ তৎপরতা শুরু করেছে জেলা প্রশাসন৷
ছুটছেন মানুষ
যাদের পক্ষে সম্ভব হয়েছে তারা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটেছেন৷ নৌকায় করে গবাদি পশু উঁচু স্থানে সরিয়ে নিয়েছেন অনেকে৷
বৃষ্টি
প্রবল বৃষ্টি এই বন্যা পরিস্থিতির একটি কারণ৷ বৃহস্পতিবারের আগের ২৪ ঘণ্টায় সিলেটের দক্ষিণবাগে ১৮০ মিলিমিটার, জকিগঞ্জে ১০৭, জাফলংয়ে ১০১, লাটুতে ১০০, ছাতকে ৭৩, সিলেট সদরে ৮২, লালাখালে ৮১, কানাইঘাটে ৬৬ ও সুনামগঞ্জে ৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে৷ আগামী কয়েক দিনও বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস৷
উজানের ঢল
শুধু বাংলাদেশের বৃষ্টি নয় ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢল পরিস্থিতিকে শোচনীয় করে তুলেছে৷ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার আসামের আট জেলা বন্যাক্রান্ত হয়েছে৷ ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, বরাক নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷