তেলের খোঁজে শত্রুদের সঙ্গেও আপোশের প্রচেষ্টা
১০ মার্চ ২০২২বিশ্বের একটি বড় সংকট কীভাবে অন্য চলমান সংকটের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলা তা স্পষ্ট করে দিচ্ছে৷ ভ্লাদিমির পুটিনের উপর চাপ আরও বাড়াতে সে দেশ থেকে পেট্রোলিয়াম, গ্যাস ও কয়লা আমদানি বন্ধ বা সীমিত করার পথে এগোতে চায় পশ্চিমা জগত৷ কিন্তু নিজস্ব অর্থনীতির স্বার্থে সরবরাহের বিকল্প পথ ছাড়াই এমন চরম সিদ্ধান্ত নেওয়া মোটেই সহজ নয়৷ অন্তত পেট্রোলিয়ামের ক্ষেত্রে বিকল্প উৎস হিসেবে এবার নজর পড়েছে একঘরে হয়ে থাকা দুই দেশের উপর৷ বহু বছরের নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরান ও ভেনেজুয়েলা বিশ্ব পেট্রোলিয়াম বাজার থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে৷ দ্রুত আপোশের মাধ্যমে এই দুই দেশ থেকে আবার তেল আমদানি সম্ভব করার জন্য আগ্রহ বাড়ছে৷ বর্তমান মার্কিন প্রশাসন সৌদি আরবের সঙ্গেও রাজনৈতিক স্তরে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে আসছিল৷ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবার সৌদি যুবরাজ মহম্মদ বিন সুলতান বা এমবিএস-এর সঙ্গেও আপোশের পথে যাবার কথা ভাবছে ওয়াশিংটন৷ তবে এমন প্রচেষ্টার ঝুঁকিও কম নয়৷ কারণ এই তিন দেশের সঙ্গেই রাশিয়ার যথেষ্ট নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে৷
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বুধবার বলেন, কূটনৈতিক পথে অ্যামেরিকার বহুমুখী স্বার্থ এগিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা চলছে৷ অর্থাৎ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মূল্যবোধের রাজনীতির যে অঙ্গীকার করেছিলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তা আপাতত ধামাচাপা রাখার ইঙ্গিত দিলেন তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷
এমন বাড়তি গুরুত্ব পেয়ে বিশেষ করে ইরান ও ভেনেজুয়েলা আরও ছাড় আদায় করার চেষ্টা করবে বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ৷ ভিয়েনায় পরমাণু চুক্তির নতুন সংস্করণের লক্ষ্যে আলোচনার শেষ পর্যায়ে ইরানের দাবি উপেক্ষা করা কঠিন হয়ে উঠতে পারে৷ ভেনেজুয়েলার মাদুরো প্রশাসনও অ্যামেরিকার সঙ্গে সরাসরি কূটনৈতিক আলোচনায় যতটা সম্ভব সুবিধা আদায়ের চেষ্টা চালাতে পারে৷ ভেনেজুয়েলা সদিচ্ছার প্রমাণ দিতে ইতোমধ্যেই দুই মার্কিন বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে এবং বিরোধী পক্ষের সঙ্গে সংলাপের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে৷ তবে এই দুই দেশের সঙ্গে দ্রুত রফা সম্ভব হলেও আবার যথেষ্ট পরিমাণ অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম উৎপাদন করতে কিছুটা সময় লাগবে৷
সৌদি আরবের এমবিএস-এর সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতির বিষয়টি আরও জটিল৷ সৌদি যুবরাজ পুটিনের সঙ্গে সুসম্পর্কের ভিত্তিতে বিশ্বের পেট্রোলিয়াম বাজারের উপর আরও নিয়ন্ত্রণ পেয়েছেন৷ করোনা সংকট কমে যাওয়ার পরেও বাড়তি চাহিদা মেটাতে তিনি মোটেই উৎপাদন বাড়ানোর পথে যান নি৷ বর্তমানে ইউক্রেন সংকটের ফলে ঘাটতি দূর করতে সে দেশ ইচ্ছা করলেই উৎপাদন বাড়াতে পারে৷ কিন্তু সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশগজির হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত এমবিএস পশ্চিমা জগতে ব্রাত্য হয়ে যাওয়ায় মোটেই সেই পথে এগোচ্ছেন না৷ বাইডেন প্রশাসন তাকে ‘হারানো মর্যাদা' ফিরিয়ে দিলে তিনি তেলের ঘাটতি মেটাতে রাজি হবেন কিনা, সে বিষয়ে এখনো কোনো নিশ্চয়তা নেই৷ সম্প্রতি তিনি বাইডেনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলতেও আগ্রহ দেখান নি বলে সংবাদ মাধ্যমের একাংশে দাবি করা হয়েছে৷
বাইডেন প্রশাসনও বিষয়টিকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রবল চাপের মুখে পড়তে পারে৷ বিশেষ করে ইরানের সঙ্গে আপোশের প্রশ্নে দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যেই যথেষ্ট প্রতিরোধ কাজ করছে৷ তার নিজের ডেমোক্র্যাটিক দলে সৌদি যুবরাজের সঙ্গে আপোশের যথেষ্ট বিরোধিতা কাজ করছে৷ ফলে মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে এমন পদক্ষেপ বাইডেনের জন্যও সহজ হবে না৷
এসবি/কেএম (এপি, রয়টার্স)