1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার আদায়ে আদালতই ভরসা?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১

তৃতীয় লিঙ্গকে পিছিয়ে পড়া নাগরিকের মর্যাদা দিয়ে পড়াশোনা ও সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ দিতে হবে৷ সাত বছর আগে রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট৷ তবু রূপান্তরকামীদের দুয়ারে দুয়ারে ঠোক্কর খাওয়ার ইতিহাসে ছেদ পড়েনি একটুও৷

https://p.dw.com/p/3ori9
Indien LGBT
ছবি: DW/P. Samanta

নদিয়ার করিমপুরের সুমন প্রামাণিক৷ তিনি বহু লড়াই করে সুমনা হয়েছেন৷ অনাথ আশ্রমে পালিত সুমনা বরাবরই প্রথম সারির পড়ুয়া ছিলেন৷ কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে সোনার পদক পাওয়ার পরের স্বপ্ন গণিতে অধ্যাপনা৷ কিন্তু আর্থিক বাধা কাটিয়ে ইউজিসির নেট পরীক্ষায় বসতে পারছিলেন না তিনি৷ কেন?

পরীক্ষার ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে সুমনা জানতে পারেন, কলা বিভাগের পরীক্ষায় সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে তৃতীয় লিঙ্গের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে৷ অথচ বিজ্ঞান বিভাগে তার বালাই নেই৷ দু'টি প্রবেশিকা পরীক্ষাই ইউজিসি-র৷ কর্তৃপক্ষকে বলেও কোনো সুরাহা হয়নি৷ তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি হয়েও ফি মকুব, বয়সে ছাড়ের বিষয়ে কোনো সমাধান পাননি সুমনা৷ তখন তিনি দ্বারস্থ হন হাইকোর্টের৷ সুমনা ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘রূপান্তরকামীদের অর্থনৈতিক বা সামাজিক আশ্রয় নেই৷ টিউশন পড়িয়ে বাড়িভাড়া আর নিজের খাওয়ার খরচ চালাই৷ কী করে নেট পরীক্ষার হাজার টাকা জোগাড় করি আমি? শুধু বিজ্ঞান নিয়ে পড়েছি বলে সংরক্ষণ পাব না?''

আদালতের রায়

এই অভিযোগ নিয়ে ইউজিসির নীতির সমালোচনা করেন হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য৷ তাঁর পর্যবেক্ষণ, এই নীতিতে সুপ্রিম কোর্ট ও সংবিধানকে লঙ্ঘন করা হয়েছে৷ ইউজিসি-কে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়ে অবশেষে সুমনার পক্ষেই রায় দিয়েছেন তিনি৷
এই প্রথম নয়৷ ২০১৪ সালেই যুগান্তকারী নালসা রায়ে দেশের শীর্ষ আদালত রূপান্তরকামীদের তৃতীয় লিঙ্গের মর্যাদা দিয়েছে৷ সরকারি স্তরে পড়াশোনা ও চাকরির ক্ষেত্রে তাঁদের অনগ্রসর শ্রেণীর সুযোগসুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে৷ কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, সংরক্ষণ নেই৷ ছাড় নেই বয়সে, এমনকি পরীক্ষার ফি-তেও৷ যা অমান্য করছে ২০১৪ সালের সুপ্রিম কোর্টের রায়কেই৷

সমাজ কি মেনে নিয়েছে?

গত স্বাধীনতা দিবসে কলকাতার দুই রুটের বেসরকারি বাস তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য আসন সংরক্ষণ চালু করে৷ প্রগতিশীল সমাজ দেখেছিল, ভেদাভেদ ভুলে সকল মানুষকে সম্মান জানানো হচ্ছে৷ কিন্তু শুধু এটাই বাস্তব নয়৷ আবার এই শহরেই তৃতীয় লিঙ্গের কয়েকটি চরিত্র একটি বেসরকারি চ্যানেলের বাংলা ধারাবাহিকে যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়৷ তা সত্ত্বেও এক বছর পর হঠাৎই সেটা বন্ধ করে দেওয়া হয়, কোনো উপযুক্ত কারণ না দেখিয়েই৷ এরকমই অভিজ্ঞতা সুমনারও৷ তিনি বলেন, ‘‘সমাজ কিছুই বদলায়নি৷ শিক্ষিত মানুষরাও এ ব্যাপারে ভীষণ সংকীর্ণ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার পাশে কেউ বসত না৷ আমার সহপাঠীরা ক্লাসে প্রত্যেক মুহূর্তে আমাকে আলাদা করে রাখত৷ মানসিকভাবে অনেক নিপীড়নও করেছে৷ আজ গৃহশিক্ষক হিসেবেও আমাকে কম বেতন দেওয়া হয় অন্যদের চেয়ে৷''

‘‘সমাজ বদলায়নি, শিক্ষিতরাও এ ব্যাপারে সংকীর্ণ’’: সুমনা প্রামাণিক

সমাজ ও পরিস্থিতি পাল্টায়নি৷ তাই বারে বারে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয় তাঁদের৷ গত সেপ্টেম্বরে কলকাতা হাইকোর্টের একটি নিয়োগ নিয়ে হাইকোর্টের বিরুদ্ধেই মামলা করেছিলেন রূপান্তরকামী আইনজীবী অঙ্কন বিশ্বাস৷ নিয়োগের ফর্মে তৃতীয় লিঙ্গের উল্লেখই ছিল না৷ অঙ্কনের মামলার পর পরই নতুন নির্দেশিকা জারি করে হাইকোর্ট৷ অঙ্কন বলেন, ‘‘২০১৪ এর পরে ট্রান্সজেন্ডার প্রোটেকশন অ্যাক্ট চালু হয় ২০১৯ সালে৷ তাতেও রূপান্তরকামীদের জন্য সরকারের ডেভেলপমেন্ট স্কিম নিয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলা নেই৷''  সমাজের বন্ধ দরজা খুলতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ অঙ্কন-সুমনারা৷ সুমনা কৃতী মৃৎশিল্পীও হতে চান৷ সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই সরস্বতী পুজো৷ সেই উপলক্ষে তিনি গড়ে তুলেছেন বিদ্যার দেবীর মৃন্ময়ী মূর্তি৷

কিন্তু মানুষকে নিজের অধিকার পেতে এজলাসে যেতে হয় কেন? সেই প্রশ্ন তুলেছেন রূপান্তরকামী আন্দোলনের মুখ রঞ্জিতা সিনহা৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যেটা সাধারণ নাগরিক হিসেবে পাওয়ার কথা ছিল, তার জন্য কোর্টে কেন যেতে হবে? এতে বোঝা যাচ্ছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার কেবল কথাই বলে যাচ্ছেন৷ কোনো কাজই হচ্ছে না৷ সংরক্ষণ পেতে গেলে যদি কোর্টে যেতে হয়, তাহলে সংবিধান কেন বলছে সব মানুষের সমান অধিকার?''