তিন হাজার কোটি টাকার স্বীকারোক্তি শামীমের
৫ নভেম্বর ২০১৯তবে এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছু জানায়নি দুদক৷
দুদকের পাঁচ সদস্যের একটি টিম জিজ্ঞাসাবাদ করছে জি কে শামীমকে৷ জানা গেছে, দুই বছর আগে একটি রাজনৈতিক দলের সহযোগী সংগঠনকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এক অনুষ্ঠান উপলক্ষে চার কোটি টাকা দেন তিনি৷ ওই সংগঠনকে মাসে দিতেন ৫০ লাখ টাকা৷ আর যেকোনো ধরনের অনুষ্ঠান হলেই দিতেন ১০ লাখ টাকা৷ সংগঠনটির শীর্ষ নেতাকে এরই মধ্যে অপসারণ করা হয়েছে৷
এর বাইরে গণপূর্তের প্রকৌশলী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কর্মচারীদের তিনি নিয়মিত মাসোহারা দিতেন৷ তার এই মাসোহারায় রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ ও প্রশাসন, সাংবাদিক এবং সেলিব্রেটি বা তারকারাও রয়েছেন৷ তারকাদের তিনি মূলত দেশে ও দেশের বাইরে প্রমোদ ভ্রমণে পাঠাতেন৷
জি কে শামীম গণপূর্তের অধীনে ঠিকাদারির একচ্ছত্র কাজ করলেও তার সিন্ডিকেটে ওয়াসা, মেডিক্যাল, এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড আছে৷ এসব প্রতিষ্ঠানে ঠিকাদারি যারা করেন তাদের একটি অংশ তার সিন্ডিকেটের সদস্য৷
দুদক সাত দিনের রিমান্ডে জি কে শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে রোববার থেকে৷ আর যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে সোমবার থেকে৷
জি কে শামীমের সম্পদ কত?
জানা গেছে জি কে শামীম জিজ্ঞাসাবাদে এখন পর্যন্ত তিন হাজার কোটি টাকার সম্পদের কথা স্বীকার করেছেন৷ বাংলাদেশ ছাড়াও সিংগাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় তার সম্পদ রয়েছে বলে জানিয়েছেন৷ তিনি দুবাইতে বসবাসের কথা ভাবছিলেন৷ ডিসেম্বর মাসেই সেখানে তার ফ্ল্যাট কেনার কথা ছিল৷
জি কে শামীমের অসুস্থতার দাবি
রোববার জি কে শামীমকে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনার পর পরই বুকে ব্যথার কথা জানান তিনি৷ এরপর দুদকের নিজস্ব চিকিৎসক ডেকে এনে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়৷ চিকিৎসক সবকিছু পরীক্ষা করে স্বাভাবিক বললে তিনি জিজ্ঞাসাবাদ এড়াতে ব্যর্থ হন৷ জানা গেছে, এখন জি কে শামীম স্বাভাবিকভাবেই সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন৷ তবে তাকে যেকোনো প্রশ্ন একাধিকবার জিজ্ঞাসা করলে তিনি বেশ ভেবেচিন্তে জবাব দেন৷
দুদকের লক্ষ্য
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর দুদক এ পর্যন্ত নয়টি দুর্নীতির মামলা করেছে, যার মোট আসামি ১৬ জন৷ জি কে শামীমের বিরুদ্ধে মামলায় ২৯৭ কোটি আট লাখ ৯৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনেছে দুদক৷ আর খালেদের বিরুদ্ধে পাঁচ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৮৫৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আনা হয়েছে৷ জানা গেছে, দুদক মামলার চার্জশিটে তাদের অবৈধ সম্পদের ব্যাপারেই সীমাবদ্ধ থাকবে৷ তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বা সুবিধাভোগীদের বিষয় থাকবে না৷ তারা এসব ব্যাপারে বাড়তি যে তথ্য দিচ্ছেন তা দুদকে আর্কাইভ আকারে নথিভূক্ত করা হবে৷ ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে এইসব তথ্য নিয়ে আলাদা তদন্ত হবে৷ দুদক যুবলীগ নেতা সম্রাট, আরমান, মিজান ও রাজীবের বিরুদ্ধেও মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে৷
জি কে শামীম বা খালেদকে জিজ্ঞাসাবাদে কী তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তা নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোন কিছু জানায়নি সংস্থাটি৷ তবে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন জিজ্ঞাসাবাদ চলছে৷ জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য আমরা যাচাই বাছাই করব৷ আমরা দেখব এরমধ্যে কতটুকু সারবত্তা আছে৷ তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নেবো আরো মামলা হবে কিনা বা আমরা কতটুকু এগুবো৷ তার আগে কিছু বলা যাবে না৷’’
মামলার ধরন:
গত ২০ সেপ্টেম্বর যুবলীগ নেতা জি কে শামীম ও তার সাত দেহরক্ষীকে গুলশানের বাসা থেকে আটক করে র্যাব৷ এরপর পর্যায়ক্রমে খালেদ, সম্রাট ও আরমানসহ ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে ২৭৩ জনকে আটক করা হয়৷ তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ টাকা, অস্ত্র, মাদক ও ক্যাসিনো সরঞ্জাম৷
শামীম, খালেদ, সম্রাট ও আরমানদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক, অর্থ পাচার এবং দুর্নীতি দমন আইনে তিন ধরনের মামলা হয়েছে৷ এরইমধ্যে র্যাব জি কে শামীম ও তার সাত দেহরক্ষীর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনের মামলায় চার্জশিট দিয়েছে৷
শুরুতে শামীমকে আটকের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে৷ এরপর র্যাব তদন্তের দায়িত্ব পায়৷ ডিবি উত্তরের উপ কশিনার মশিউর রহমান বলেন, ‘‘জিজ্ঞাসাবাদে আমরা কী পেয়েছি তা প্রকাশ করা যাবে না৷ তবে আমরা যা পেয়েছি তা সবই র্যাবকে পাঠিয়েছি৷ আমরা প্রধানত তার অর্থের উৎস, সুবিধাভোগী, সম্পদের পরিমাণ এইসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি৷’’
এদিকে র্যাব জিজ্ঞাসাবাদকালে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, তাদের উদ্ধৃত করে সংবাদ মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে যে তথ্য পরিবেশন করা হচ্ছে ওই তথ্য তারা দেননি৷ আর মঙ্গলবার চেষ্টা করেও র্যাবের দায়িত্বশীল কারোর বক্তব্য পাওয়া যায়নি৷