1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
রাজনীতিআফগানিস্তান

‘‘তালেবানকে অবশ্যই মেয়েদের স্কুলে ফেরার অনুমতি দিতে হবে’’

১৫ আগস্ট ২০২২

সাবেক আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে ডিডাব্লিউকে বলেন, এক বছর আগে তালেবানরা ক্ষমতা দখল করার পর কেন তিনি দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও যাননি৷ তার কথায়, ‘‘ওরা চলে যাবে, আমরা আবার ফিরে আসব৷’’

https://p.dw.com/p/4FXJf
হামিদ কারজাইয়ের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ডিডাব্লিউয়ের সান্দ্রা পিটার্সমান
হামিদ কারজাইয়ের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ডিডাব্লিউয়ের সান্দ্রা পিটার্সমানছবি: Ahmad Sear Yousfzai

ডয়চে ভেলে: আপনাকে আপাতদৃষ্টিতে বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না৷  মিস্টার কারজাই, আপনি কি তালেবানের হাতে বন্দি?

হামিদ কারজাই: না৷ ঠিক তা নয়৷ তবে বিদেশভ্রমণ সম্ভব নয়, তারা আমাকে এটা বলেছে৷কাবুলের ভিতরে কোথাও গেলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিকঠাক কি না আমরা তাদের জিজ্ঞাসা করি৷তাদের জানিয়ে দেয়া হয়, আমি কোনো জায়গায় যাচ্ছি এবং তারা আমাদের একটি এসকর্ট বা পাহারার ব্যবস্থা করে দেয়৷ এসকর্ট আমাকে সেখানে নিয়ে যায়৷

ডয়চে ভেলে: এটা কি কাবুলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নাকি আপনাকে শহরের সীমানা অতিক্রম করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে?

আমি এখনো সেটা করিনি৷ তাই আমি জানি না৷ আমি এখনও তাদের বলিনি যে আমি প্রদেশগুলি পরিদর্শন করতে যাচ্ছি৷আমি মনে করি শীঘ্রই যাওয়া উচিত, শরৎ তো এসে গেল৷তারপর আমরা জানতে পারব৷

ডয়চে ভেলে: গত বছর তালেবান যখন ক্ষমতায় আসে তখন ইসলামিক রিপাবলিকের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিদের মতো আপনি কেন দেশ ছেড়ে যাননি?

ব্যস, এটা আমাদের দেশ৷ এটা আমাদের বাড়ি৷ যখন পরিস্থিতি কঠিন হয়ে যায় তখন আপনি আপনার বাড়ি ছেড়ে যাবেন না৷আপনি আপনার বাড়িতে থেকে পরিস্থিতি ঠিক করুন৷ বিষয়টা এমনই সহজ৷

ডয়চে ভেলে: তাহলে এখন যদি সুযোগ পান, আপনি বাইরে যাবেন না?

কখনো না৷ কখনোই না৷

ডয়চে ভেলে: আপনার তিনটি ছোট মেয়ে আছে৷ আফগানিস্তানে তাদের জন্য আপনি ভবিষ্যৎ দেখতে পান? কী ধরনের ভবিষ্যৎ?

আমি চাই তাদের ভবিষ্যৎ পৃথিবীর অন্য যেকোনো শিশুর মতোই সুন্দর হোক৷ এটি আমাদের ভবিষ্যতের জন্য,আমাদের সন্তানদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন৷ আমার মেয়েরা এখানে কাবুলে পড়াশোনা করছে৷ বড় মেয়ে মালালার বয়স ১০, ও সে ষষ্ঠ থেকে সপ্তম শ্রেণিতে উঠবে৷ পরিস্থিতি এখন যেমন দাঁড়িয়েছে, তার মানে সে তার শিক্ষা চালিয়ে যেতে পারবে না৷

ডয়চে ভেলে: তাহলে আপনি কী করবেন? তালেবান নিষেধাজ্ঞা জারির ফলে সে যদি স্কুলে যেতে না পারে, তাহলে আপনি কি তাকে বিদেশে পাঠাবেন?

আমার সামনে এবং অন্যান্য কয়েক হাজার আফগান পরিবার এবং পিতামাতার সামনে ঠিক এটাই প্রশ্ন৷ আমাদের মেয়েরা যখন মাধ্যমিক বা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার বয়সে পৌঁছাবে তখন আমরা কী করবো? দেশত্যাগ করা মানে দেশ ছেড়ে যাওয়া সুতরাং, আমাদের সন্তানদের বা আমাদের কন্যাদের শিক্ষার অধিকারের জন্য আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে৷ হাল ছাড়লে চলবে না৷

গোপন স্কুলে পড়ালেখা শিখছে আফগান মেয়েরা

ডয়চে ভেলে: কিন্তু শিক্ষার এত ইচ্ছা থাকলে তালেবান কেন তা করছে না?

এটি এমন একটি প্রশ্ন যার তাদের উত্তর তাদের খুব শীঘ্রই দিতে হবে৷ অবশ্যই মেয়েদের স্কুলে যেতে দিতে হবে৷ সেখানে কোনো আপস নেই৷ আমি তাদের এটি খুব স্পষ্টভাবে বলেছি৷ আমরা আফগান মেয়েদের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হতে দেব না৷ কোনোভাবেই না৷

অতএব, এটি পরিবর্তন করার জন্য আমাদের আফগানিস্তানের সকলকে, দেশের বাকি অংশ হিসাবে এবং তালেবানকেও একত্রিত হতে হবে৷ এটা তালেবানের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত হোক বা বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত হোক, আমাদের এটা পরিবর্তন করতে হবে৷

ডয়চে ভেলে: আপনি ‘বাইরে থেকে আরোপিত' বলতে কী বোঝাতে চাইলেন?

দেখুন, পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ইসলামাবাদে ইসলামী বিশ্বের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে শুনেছেন আপনি৷ সেখানে উনি বলছেন, আফগান মেয়েরা স্কুলে যায় না, উনি আফগান ঐতিহ্যের উপর দোষারোপ করার চেষ্টা করছেন৷ যা ভুল, সম্পূর্ণ ভুল৷

তালেবান শাসনে আফগান মেয়েদের ষষ্ঠ শ্রেণি পেরোলে স্কুলে যাওয়া নিষেধ
তালেবান শাসনে আফগান মেয়েদের ষষ্ঠ শ্রেণি পেরোলে স্কুলে যাওয়া নিষেধছবি: WAKIL KOHSAR/AFP/Getty Images

ডয়চে ভেলে: কিন্তু আফগানিস্তানে মেয়েদের স্কুলে নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে পাকিস্তানের আগ্রহ কেন?

একটি দুর্বল আফগানিস্তান, যে আফগানিস্তান যা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে না, যে আফগানিস্তান যা দারিদ্র্যের মধ্যে রয়েছে, সেটাই চায় তারা৷ আর অভাব মানেই দারিদ্র্য৷ মেয়েদের শিক্ষার অভাব মানে সামর্থের অভাব৷মেয়েদের শিক্ষার অভাব মানে সমাজের অর্ধেক, সমাজের অন্তত অর্ধেক মানুষ আসলে শিক্ষিত নন৷ তাই সমাজের অন্তত অর্ধেক সংখ্য মানুষ উৎপাদনে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না৷এটা যথেষ্ট দুর্বল এবং বঞ্চিত আফগানিস্তান৷ তাই পাকিস্তানের কাছে এ ছাড়া আর অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে না৷

ডয়চে ভেলে: প্রেসিডেন্ট জো বিডেনের মতে, কাবুলের কেন্দ্রস্থলে একটি ড্রোন হামলায় আল কায়েদা নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরিকে হত্যা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ প্রচুর তালেবান প্রতিনিধির বসবাস এমন একটি এলাকা তাদের টার্গেটে রয়েছে৷ আফগানিস্তান কি আবার বিশ্ব সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক হয়ে উঠছে?

আফগানিস্তান কখনোই বৈশ্বিক সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক ছিল না৷ আফগানিস্তান বিশ্ব সন্ত্রাসের শিকার ছিল৷ আফগান জনগণ সন্ত্রাসবাদের সবচেয়ে বড় শিকার৷ আফগান জনগণ বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের শিকার হওয়া প্রতিটি মানুষের  প্রতি অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে সমবেদনা জানায় কারণ আমরা আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত  হয়েছি৷ আফগান জনগণ ১১ সেপ্টেম্বরে হামলায় নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানায় কারণ আমরাই তো প্রথমে হামলার শিকার হয়েছি৷ আফগানরা সন্ত্রাসের শিকার এবং দুর্ভাগ্যবশত, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শিকার৷ তাই আমরা এর কিছুই চাই না৷ যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা জাওয়াহিরিকে হত্যা করেছে৷

তালেবান বলেছে যে তারা জাওয়াহিরির উপস্থিতি বা কাবুলে অবস্থান সম্পর্কে অবগত নয় এবং তারা তদন্ত করবে৷ তাই তদন্ত হোক৷

ডয়চে ভেলে: আপনি যদি চোখ বন্ধ করেন নিজেকে গত বছরের সেই সময়ে নিয়ে যান৷আন্তর্জাতিক সৈন্যরা বিদ্যুতের গতিতে দেশ ছাড়ছে৷ কাবুলে তালেবানের অতর্কিত হানা৷ তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি, পালিয়ে যাচ্ছেন, আফগান সেনা যুদ্ধ করছে না, তরুণ আফগানেরা বিমানে আঁকড়ে ধরে দেশ ছেড়ে পালাতে চাইছে, তারপর সেখান থেকে পড়ে যাচ্ছে৷ কে দায়ী এ জন্য?

খুবই দুঃখজনক৷ আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে সেনা প্রত্যাহার করেছে তা ছিল লজ্জাজনক৷ আমাদের জন্য অপমানজনক এবং আমেরিকান জনগণের জন্যও ক্ষতিকর৷

হামিদ কারজাই ২০০২ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আফগানিস্তানের চতুর্থ প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন
হামিদ কারজাই ২০০২ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আফগানিস্তানের চতুর্থ প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করেনছবি: Rahmat Gul/AP Photo/picture alliance

ডয়চে ভেলে: আপনি যখন রাষ্ট্রপতির প্রাসাদে তালেবানের পতাকা দেখেন, যা আপনার বাসভবন থেকে খুব বেশি দূরে নয়, তখন আপনার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয় এমনটা বলা যেতে পারে?

এটা তালেবানের পতাকা৷ তারাই এখন আফগানিস্তানের ক্ষমতায় রয়েছেন৷ আমাদের জাতীয় পতাকা হল কালো, লাল এবং সবুজ পতাকা, যা আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক পতাকা, যা ১৯২০ সাল থেকে সেখানে রয়েছে৷

ডয়চে ভেলে: আফগানিস্তানে এখনকার পরিস্থিতির দিকে তাকালে দেখা যায়, অর্থনীতির সবটাই ভেঙে পড়েছে৷ প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা, অর্থাৎ দুই কোটি মানুষ উচ্চ মাত্রার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন৷আমি দেখেছি বাচ্চারা বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে, এমনকি কাবুলের হাসপাতালগুলোতেও সাহায্য পৌঁছে যাচ্ছে৷ কীভাবে এই পরিস্থিতি থেকে বেরোবে এ দেশ?

একটা উপায় হল আফগানদের মধ্যে ঐক্য জোরদার করা, দেশ পরিচালনার কাজে  আফগান জনগণকে সংযুক্ত করা৷

আমি তালেবান ভাইদের অন্য সব আফগানদের ভাই-বোন বিবেচনা করার আহ্বান জানাচ্ছি৷ এমনকি যারা তাদের বিরুদ্ধে, যারা তালেবানকে প্রতিরোধ করার কথা ভাবে, তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে হবে৷ একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায়, একটি জাতীয় সংলাপে ফিরিয়ে আনতে হবে যাতে আমরা আফগানরা ঐক্যবদ্ধভাবে জনগণের কথা মেনে  একটি উন্নত ভবিষ্যতের দিকে একটি পথ নির্ধারণ করতে পারি৷আমি বারবার তালেবানকে এই অনুরোধ করেছি৷

ডয়চে ভেলে: আফগানিস্তান কি ‘লস্ট কান্ট্রি'?

না৷ এটা ‘লস্ট কান্ট্রি' নয়৷ বিশ্বের এই অংশে প্রাচীনতম দেশ এবং সভ্যতার মধ্যে আমরা একটি৷ আমরা ভালো থাকব৷ এটি আমাদের ইতিহাসের সহস্রাব্দের একটি সামান্য অংশ৷ এটি দূর হবে৷ আমরা নিজেদের পায়ে ভর দিয়ে শক্তিশালী হয়ে আবার ফিরে আসব৷

ডয়চে ভেলে: আফগানিস্তানে কি নারীদের জায়গা রইল না?

এই পরিস্থিতি সাময়িক৷ আফগানিস্তান যদি নারীদের উপযুক্ত দেশ না হয়, তার মানে আফগানিস্তান নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে৷ এটা আমরা কখনো হতে দেব না৷ আফগান নারীরা শিক্ষিত হবে, তারা স্কুলে যাবে৷ তারা ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, সাংবাদিক হবে, সংসদে থাকবে, সবার ভালো করবে৷ সময় আসবে এবং আপনারা এটি দেখতে পাবেন৷

এই সাক্ষাৎকারটি সংক্ষিপ্ত এবং সম্পাদিত৷ সম্পূর্ণ ভিডিও সাক্ষাৎকারটি  শিগগিরই dw.com-এ পাওয়া যাবে৷

সান্দ্রা পিটার্সমান/আরকেসি