1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঢেলে সাজানো হচ্ছে জার্মানির পরিত্যক্ত কয়লাখনি অঞ্চল

২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কয়লার ব্যবহার প্রশ্নের মুখে পড়ছে৷ জার্মানি পুরোপুরি কয়লা বর্জনের রোডম্যাপ স্থির করার পাশাপাশি খনি অঞ্চলের টেকসই রূপান্তরের প্রতিও মনোযোগ দিচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/4WeNS
Deutschland Lausitzer Seenland  Geierswalde See Partwitzer See
ছবি: picture alliance/Andreas Franke

জার্মানির পূ্র্বাঞ্চলে গ্রোসকোশেন গ্রাম৷ বার্লিনের প্রায় দেড়শো কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পোল্যান্ডের সীমান্তের কাছে অখ্যাত জায়গাটি একহার্ড হোইকার বাইক রেন্টালের বিপুল চাহিদার কারণে অঞ্চলের পর্যটকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে৷

২০ বছর আগে হোইকা যখন তাঁর ব্যবসা শুরু করেছিলেন, তখন কেউ বিশ্বাসই করে নি যে লাউসিৎস নামের এই অঞ্চল আদৌ কোনো পর্যটক আকর্ষণ করতে পারবে৷ কয়লাখনির জন্য পরিচিত এই অঞ্চলের গঠন অনেকটা চাঁদের পৃষ্ঠের মতো৷ একহার্ড বলেন, ‘‘সবাই আমাকে প্রশ্ন করতো, তুমি কী করো? মানুষকে গর্ত দেখাও? সে সময় মানুষের মনমেজাজ ভালো ছিলো না৷ তখন ওপেন কাস্ট মাইনের অনেক পিট তখনো চালু ছিলো৷ আজ স্থানীয় মানুষ অতীত নিয়ে গর্ব করে৷''

লাউসিৎসের কয়লা শিল্পে এক সময়ে প্রায় ৮০,০০০ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে৷ কিন্তু গত শতাব্দীর নব্বাইয়ের দশকের শেষে জার্মানির জ্বালানি খাতের কাঠামো ঢেলে সাজানো হয়৷ সে সময়ে অনেক খনি বন্ধ হয়ে যায়৷ প্রায় ৯০ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই করা হয়৷ প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে একজন সেই অঞ্চল ছেড়ে চলে যান৷ বর্তমানে জার্মানি ২০৩৮ সালের মধ্যে কয়লার ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে৷ লিগনাইট উত্তোলনের শেষ ওপেন কাস্ট মাইনও বন্ধ হয়ে যাবে৷

খনিগুলি ধাপে ধাপে ইউরোপের সবচেয়ে বড় হ্রদ এলাকায় রূপান্তরিত করা হচ্ছে৷ প্রায় সাড়ে তিনশো বর্গ কিলোমিটার জুড়ে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে৷ এই উদ্যোগ লাউসিৎস অঞ্চলকে পরিবেশবান্ধব ছুটি কাটানোর জায়াগা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সাহায্য করছে৷

আজ এই অঞ্চলে চওড়া সাইকেল ট্র্যাক, হোটেল ও নানা সৌধ শোভা পাচ্ছে৷ ‘রাস্টি নেল' নামের এক সৌধ শিল্পাঞ্চলের অতীত চিত্র তুলে ধরছে৷ টাওয়ারের উপর থেকে দর্শকরা আরেকটি হ্রদের নির্মাণকাজ দেখতে পারেন৷ অতীতের ওপেন কাস্ট মাইনে ধীরে ধীরে ভূগর্ভস্থ পানি ভরা হচ্ছে৷

সেই এলাকায় সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ৷ বহু দশকের খনন কাজের কারণে সেখানকার মাটি বেশ আলগা৷ ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত বেড়ে চলায় পায়ের নীচে মাটি ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে৷ লাউসিৎস খনি সংগঠনের প্রতিনিধি ফিলিপ সোলটাউ বলেন, ‘‘কয়েক প্রজন্ম ধরে এই কাজ চলবে৷ মৌলিক পুনর্গঠনের উদ্যোগের আওতায় আমাদের আরো ৩০,০০০ হেক্টর জমি নিরাপদ করে তুলতে হবে৷ নির্দিষ্ট কিছু প্রযুক্তিরও উন্নতি করতে হবে৷ যেমন জমির ক্ষতি না করে মাটি শক্ত করার ‘ব্লাস্ট ইনডিউস্ড কমপ্যাকশন' পদ্ধতি পরীক্ষা করছি৷''

এখনো পর্যন্ত গোটা এলাকার রূপান্তর সত্যি নাটকীয়৷ এমন কাজ করার কোনো পূর্বনির্ধারিত ব্লুপ্রিন্টও নেই৷

গাড়িতে করে প্রায় আধ ঘণ্টা দূরে গেলে গ্রিনহাউস নামে পরিচিত এক জায়গায় তিন হাজারেরও বেশি প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতি নতুন বাসা পেয়েছে৷ জায়গাটি জীববৈচিত্র্যের ‘হটস্পট' হয়ে উঠেছে৷ ইকোলজিস্ট হিসেবে স্টেফান ব়্যোরশাইড বলেন, ‘‘প্রকৃতি কীভাবে মানুষের সাহায্য ছাড়াই নিজস্ব শক্তি দিয়ে আবার জমি দখল করছে, আমরা সেটা দেখতে পাচ্ছি৷ এই জায়গাটির ভালোই উন্নতি হয়েছে৷ জার্মানির একটি প্রজাতি এখানেও ভালোভাবে বেড়ে উঠেছে৷ সেটা হলো ‘বুশগ্রাস'৷

স্টেফান ব়্যোরশাইড সেই সব ইকোলজিস্টদের একজন, যিনি এই এলাকায় হস্তক্ষেপ না করে প্রকৃতির হাতে তুলে দেবার পরামর্শ দিয়েছিলেন৷

লাউসিৎস এখন সবুজ পর্যটন গন্তব্য হয়ে উঠেছে৷ শিল্পাঞ্চলের ঐতিহ্যের ইতিহাস সম্পর্কে পর্যটকদের ধারণা দিতে বেশ কিছু কর্মসূচি চালু হয়েছে৷

জার্মানির প্রায় ৫০ শতাংশ জ্বালানি ইতোমধ্যেই পুনর্ব্যবহারযোগ্য উৎস থেকে আসছে৷ সে দেশের কয়লা-পরবর্তী জীবনযাত্রার রোডম্যাপ ভারতের মতো অন্যান্য দেশেরও কাজে লাগতে পারে৷

নিকোল রিসইয়ুডিট শালার/এসবি