ঢাকার ঈদ বাজার: দাম বেশি, বিক্রি কম
ঈদের বাকি আর মাত্র কয়েকদিন৷ ঢাকার বিভিন্ন ফুটপাত, মার্কেট, শপিং মলগুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা৷ তবে সবকিছুর দাম বেশি বলে অভিযোগ ক্রেতাদের৷
সুতি কাপড়ের চাহিদা বেশি
তীব্র গরমের কারণে ক্রেতারা ভারী ও জাঁকজমকপূর্ণ কাপড়ের বদলে সুতি ও আরামদায়ক কাপড়ের দিকে বেশি ঝুঁকছেন বলে জানান বিক্রেতারা৷ চাহিদা বেশি থাকায় দামও বেশি হাঁকা হচ্ছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের৷
গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা
১৫ রোজার পর থেকে তীব্র গরম কেনাকাটায় ব্যাপক প্রভাব ফেলছে৷ একে বিক্রেতারা অনেক বেশি দাম হাঁকছেন, তার উপর রোজা থেকে গরমে কেনাকাটা অসম্ভব হয়ে উঠছে, বলছেন ক্রেতারা৷
দাম অনেক বেশি
প্রায় সব ক্রেতা অভিযোগ করে বলেন, এবারের ঈদে জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি৷ যে কারণে তারা প্রয়োজনীয় কেনাকাটা না করেই ফেরত যাচ্ছেন৷
কেনাকাটা করছেন অন্য ধর্মাবলম্বীরাও
ঢাকার নিউ মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, বসুন্ধরা সিটির মতো মার্কেটগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে মুসলমানদের পাশাপাশি হিন্দুসহ অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরাও কেনাকাটা করছেন৷ তারা জানান, দোকানগুলোতে ঈদ উপলক্ষে কালেকশন ভালো থাকায় বছরের একটা উল্লেখযোগ্য কেনাকাটা তারা ঈদের সময় করে থাকেন৷
বিয়ের কেনাকাটা করছেন অনেকে
ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোডে বিয়ের সামগ্রী পাওয়া যায় এমন দোকানের বিক্রেতারা জানান, যাদের বিয়ে ঈদের ঠিক পরপরই, তারাই মূলত বিয়ের সামগ্রীগুলো এখন কিনে নিয়ে যাচ্ছেন, কারণ ঈদের পর একটা লম্বা সময় দোকানপাট বন্ধ থাকবে৷
এক আগুনে শেষ ব্যবসা
১৫ এপ্রিল ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটের দক্ষিণ ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঐ মার্কেটসহ গাউছিয়া মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, নূরজাহান মার্কেট, নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষতি হয়েছে, বলছেন ব্যবসায়ীরা৷ অগ্নিকাণ্ডের পর ঘটা করে আশেপাশের মার্কেটগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়ায় তারা আরো বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হন বলে জানান৷
কেনাকাটার ভার নারীদের কাঁধেই
ফুটপাত, শপিং মল ও বিপণী বিতানগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতাদের অধিকাংশই নারী৷ পুরুষেরা পেশাগত কারণে ব্যস্ত থাকায় ঈদের কেনাকাটার ভার নারীদের উপরই বর্তায় বলে জানান একাধিক নারী ক্রেতা৷
ফুটপাতে ভিড় সবচেয়ে বেশি
বিভিন্ন মার্কেট, শপিং মল, অভিজাত এলাকায় দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতে ঘোরার পর দেখা যায়, ফুটপাতে ভিড় সবচেয়ে বেশি৷ কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতারা বলেন, দাম কম হওয়ায় প্রায় সব শ্রেণির ক্রেতাই ফুটপাতে আসছেন৷
বড় ডিসকাউন্ট দিয়েও মিলছে না ক্রেতা
ঢাকার নিউ মার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, পুলিশ প্লাজা কনকর্ডসহ বিভিন্ন মার্কেট ও শপিং মলে গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন দোকানে বড় ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়েছে৷ তবে তাতেও ক্রেতাদের কাঙ্খিত সাড়া পাচ্ছেন না বলে জানান বিক্রেতারা৷
ঈদের ফ্যাশনে ম্যাচিং ট্রেন্ড
নতুন জামাকাপড়ের পাশাপাশি জুতা, কানের দুল, হাতের ব্রেসলেট, চুড়ি, গলার মালা ইত্যাদি মিলিয়ে কিনতে পছন্দ করেন ক্রেতারা৷ জিগাতলা থেকে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কলেজ শিক্ষার্থী জানান, জামা-জুতা কেনা শেষ, সেসবের সাথে মিলিয়ে এখন বাদ বাকি জিনিসপত্র কেনাকাটা চলছে৷
ছেলেদের মূল আকর্ষণ জুতা ও পাঞ্জাবি
ছেলেদের পাঞ্জাবি ও জুতার দোকানে বেশ ভিড় দেখা গেছে৷ কারণ জানতে চাইলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া সাব্বির আহমেদ জানান, সারাবছর অন্যান্য কাপড় কেনা হলেও ঈদে পাঞ্জাবি আর জুতাটাই কেনা হয় বেশি৷
গভীর রাত পর্যন্ত কেনাকাটা
দিনের বেলা অফিসের ব্যস্ততা, গরম, ইফতারের প্রস্তুতি ইত্যাদি কারণে ইফতারের পরে শপিং মল ও মার্কেটগুলোতে ভিড় দেখা যাচ্ছে৷ সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে ঈদের কেনাকাটা৷
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে
গাউছিয়া মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, নিউ মার্কেটে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের প্রধান ক্রেতা মূলত মধ্য ও নিম্নবিত্ত শ্রেণি৷ নিত্তপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামছাড়া মূল্যে সবার নাভিশ্বাস দশা৷ এই অবস্থায় মানুষ যা না হলেই না, শুধু তাই কিনছেন৷ এর প্রভাব পড়েছে ঈদের কেনাকাটাতেও৷
শপিং মলেই ইফতার
দিনের অধিকাংশ সময়ে কাজের ব্যস্ততা থাকায় বিকেলেই মূলত ঈদের কেনাকাটা করতে বের হওয়া হয়৷ আর সন্ধ্যায় ইফতারের সময় হওয়াতে যে যেখানে পারেন, ইফতার সেরে নেন৷ সেক্ষেত্রে মার্কেট ও শপিং মলের ফুডকোর্টগুলোতে ইফতারের সময় ক্রেতাদের ভিড়ে তিলধারণের জায়গা থাকে না৷
যানজট
নিউ মার্কেট, বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, পুলিশ প্লাজাসহ অভিজাত এলাকার শপিং মল এলাকাগুলোতে দিনব্যাপী প্রচণ্ড যানজট দেখা যায়৷ ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা জানান, ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই আইনের তোয়াক্কা করেন না, বিধায় এই সময়টাতে প্রচণ্ড যানজট সৃষ্টি হয়৷
সেমাই ছাড়া ঈদ অসম্পূর্ণ
ঈদের কেনাকাটায় নতুন জামাকাপড়ের পাশাপাশি সেমাই, চিনি, দুধ কেনা চাই৷ বাজারে রয়েছে নানা ব্র্যান্ডের, নানা মানের সেমাই৷ তবে দাম গতবারের তুলনায় ২০-৩০ শতাংশ বেশি হওয়ায় ক্রেতারা কম করেই কিনছেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা৷