ডয়চে ভেলের জন্মের ৬৫ বছর
৩ মে ২০১৮‘‘দূরবর্তী দেশগুলোর প্রিয় শ্রোতারা'' – এই শব্দগুলো দিয়েই ১৯৫৩ সালের ৩ মে জার্মানির আন্তর্জাতিক সম্প্রচারকেন্দ্র ডয়চে ভেলের কার্যক্রম শুরু করেছিলেন তৎকালীন জার্মান প্রেসিডেন্ট টেওডোর হয়েস৷ জার্মানির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক চিত্র বিদেশে শ্রোতাদের কাছে তুলতে ধরতে জন্ম হয়েছিল দেশটির আন্তর্জাতিক রেডিও কেন্দ্রটির৷
শুরুতে শর্টওয়েভে এবং শুধুমাত্র জার্মান ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচার করতো ডয়চে ভেলে৷ সম্প্রচারকেন্দ্রটিতে প্রথম বিদেশি ভাষা যোগ করা হয় ১৯৫৪ সালে৷ আর ১৯৯২ সালে টেলিভিশন অনুষ্ঠান শুরু করে৷ এর কিছুদিন পরেই যাত্রা শুরু করে ইন্টারনেটে৷
‘‘অবশ্যই শর্টওয়েভের দিনগুলো অনেক সহজ ছিল,'' বলেন ডয়চে ভেলের মহাপরিচালক পেটার লিমবুর্গ৷ ‘‘তবে ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এবং আমাদের সহযোগীদের নেটওয়ার্ককে ধন্যবাদ৷ এসবের কল্যাণে এখন আমরা আগের চেয়ে অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারছি৷ আমরা সংবাদ, ব্যাকগ্রাউন্ড এবং মতামতধর্মী কন্টেন্ট তৈরি করছি, যেগুলো আধুনিক ফ্যাশনে এবং আমাদের বৈচিত্রময় ও আমাদের লক্ষ্যের ভিত্তিতে অপেক্ষাকৃত তরুণ শ্রোতা, পাঠক, দর্শকের চাহিদা অনুযায়ী প্রকাশ করা হচ্ছে৷''
লিমবুর্গ গত সাড়ে চারবছর ধরে ডয়চে ভেলের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন৷
রেডিওর চেয়ে অনেক বেশি কিছু
ডয়চে ভেলে রেডিওর যুগ থেকে অনেক দূরে চলে গেছে৷ প্রতিষ্ঠানটি এখন চারটি ভাষায় টেলিভিশন অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে, পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অডিও কন্টেন্ট এবং ত্রিশটি ভাষায় ওয়েবসাইট৷ মোটের উপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডয়চে ভেলের বিস্তৃত উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়৷
একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সংবাদ গ্রহণের প্রক্রিয়াতেও পরিবর্তন এসেছে৷ স্মার্টফোনের মাধ্যমে সংবাদ পাওয়া মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে৷ আগে যারা শ্রোতা ছিলেন এখন তারা অনুসারীতে পরিণত হচ্ছেন৷
ডয়চে ভেলের একাডেমি ১৯৬৫ সাল থেকে এখন অবধি বিশ্বের কয়েক হাজার সাংবাদিককে প্রশিক্ষণ দিয়েছে৷ জার্মান সরকারের মন্ত্রীরা যখন বিদেশ সফরে যান, তখন তারা প্রায়ই ডয়চে ভেলের হাইব়্যাংকিং সহযোগীদের সাক্ষাৎ পান যারা তাদের উপর ডয়চে ভেলের প্রভাব সম্পর্কে বর্ণনা করেন৷
কঠিন সময়
ডয়চে ভেলে প্রতিষ্ঠার পর ৬৫ বছর পার হলেও বিশ্বের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বেশকিছু ক্ষেত্রে এখনো ১৯৫৩ সালের মতোই রয়ে গেছে৷ নতুন শীতল যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়ছে আর বাকস্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এখনো অনেক দেশে হুমকির মুখে রয়েছে৷ চীন এবং ইরানে এখনো আংশিকভাবে নিষিদ্ধ রয়েছে ডয়চে ভেলে, যা এক অর্থে উদ্বেগজনক, আবার অন্যদিক থেকে চিন্তা করলে প্রমাণ হয় যে ডয়চে ভেলে তার নীতিতে অটল থাকায় এমন বাধার মুখে পড়ছে৷
কফির আমন্ত্রণ
ডয়চে ভেলের বন এবং বার্লিন কার্যালয়ে বিশ্বের ৬০টি দেশের ৩,৪০০ কর্মী কাজ করছেন, যা প্রতিষ্ঠানটিকে জার্মানির সবচেয়ে বহুসাংস্কৃতিক সম্প্রচার কেন্দ্রের স্বীকৃতি দিয়েছে৷ পাশাপাশি সময়ের সাথে সাথে ডয়চে ভেলের আফ্রিকা, এশিয়া এবং ল্যাটিন আমেরিকার প্রতিনিধিদের সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে৷
ডয়চে ভেলের বিস্তৃতি সম্পর্কে জানাতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সাংবাদিক সান্দ্রা পেটার্সম্যান ২০০০ সালের এক ঘটনার কথা স্মরণ করেন৷ সেসময় তিনি একদল চিকিৎসকের সঙ্গে সাংবাদিক হিসেবে ইরিত্রিয়ায় গিয়েছিলেন৷ তখন এক গ্রামের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি লক্ষ্য করেন যে, একটি গাছের নীচে একদল মানুষ ব্যাটারিচালিত ছোট্ট একটি রেডিওতে প্রচারিত অনুষ্ঠান শুনছেন৷ আমারিক ভাষায় প্রচারিত সেই অনুষ্ঠানের মর্মার্থ কিছু না বুঝলেও সান্দ্রা বুঝতে পারেন সেটি ডয়চে ভেলে থেকে প্রচারিত অনুষ্ঠান৷ সেসময় নিজেকে ডয়চে ভেলের সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিলে স্থানীয় জনতা তাঁকে তাৎক্ষণিক কফির দাওয়াত দেন৷
পেটার্সম্যান আফগানিস্তানেও একইরকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন যেখানে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে টেলিভিশন না থাকলেও তথ্য পেতে তারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন৷ তাদের তথ্যক্ষুধা মেটায় রেডিও অনুষ্ঠান৷ ডয়চে ভেলের আরো অনেক সাংবাদিকও এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন, যা তাদের মধ্যে কাজের আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ৷
আন্তর্জাতিক একাধিক জরিপে দেখা গেছে, ডয়চে ভেলের ৯৬ শতাংশ ব্যবহারকারীই প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্বস্ত মনে করে৷ প্রতি সপ্তাহে ১৫০ মিলিয়নের বেশি মানুষ ডয়চে ভেলে থেকে নানা তথ্য পেয়ে থাকেন, আর এই সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে৷
ক্রিস্টফ স্ট্রাক/এআই