1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাংবাদিকের স্মৃতিতে গর্বাচেভের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের সেই দিন

২১ আগস্ট ২০২১

১৯ আগস্ট, ১৯৯১৷ যেদিনটিতে মস্কোয় মিখাইল গর্বাচেভের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল এই জার্মানিতেও৷ ডয়চে ভেলের সাংবাদিক ক্রিস্টিয়ান এফ. ট্রিপের স্মৃতিতে সেই দিনটি....

https://p.dw.com/p/3zIwd
মিখাইল গর্বাচেভ, সাবেক সোভিয়েট ইউনিয়নের নেতাছবি: Pool/Getty Images/M. Ukas

আমি তখন ড্যুসেলডর্ফে স্থানীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেলে রিপোর্টার হিসেবে কাজ করি৷ সবে জার্মানি থেকে ব্রিটিশ সৈন্য সরিয়ে নেয়ার প্রস্তুতিপর্ব নিয়ে একটা রিপোর্ট তৈরি করেছি৷ ১৯ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে রাইন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা ব্রিটিশ সৈন্যদের বিষয়ে ব্রিটেনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে, আমরা তখন সেই ঘোষণা শোনার অপেক্ষায়৷

ততদিনে শীতল যুদ্ধ শেষ৷ সারা ইউরোপে চলছে নিরস্ত্রীকরণ৷ একে একে সব ব্যারাক বন্ধ হচ্ছে৷ জার্মানিতে বলতে গেলে সবাই ‘শান্তির লভ্যাংশ’ উপভোগের অপেক্ষায়৷ হ্যাঁ, বার্লিন প্রাচীরের পতনের পরের সেই সময়টায় ঠিক এমনই ছিল জার্মানির পরিস্থিতি৷ সোভিয়েট ইউনিয়ন তখন আর জার্মানির শত্রু নেই৷ আমরা, অর্থাৎ এই পশ্চিম ইউরোপের সব মানুষ তখন মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি যে মিখাইল গর্বাচেভের নেতৃত্বে সোভিয়েট ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্কের ক্রমোন্নতি হবে, পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতিই হবে ক্রমাগত৷ ‘গোর্বি’ পূর্ব-পশ্চিমের স্থবিরতার অবসান ঘটাবেন- এই বিশ্বাসও খুব জোরালোভাবেই ছিল সবার৷

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই জার্মানিতে রয়েছে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী৷ রাইনডালেন, হারফোর্ড, বিলেফেল্ড, ডর্টমুন্ড হয়ে বিস্তীর্ণ এক অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ব্রিটিশ সৈন্যদের ঘাঁটি৷ সব মিলিয়ে এক লাখের মতো ব্রিটিশ সৈন্য ছিল জার্মানিতে৷ অনেকে পরিবারও নিয়ে এসেছিলেন এখানে৷

যা হোক, তখন ব্রিটিশ সৈন্যদের প্রত্যাবর্তনপর্ব শুরুর সময় অতি আসন্ন৷ সারা বিশ্বে পূর্ব আর পশ্চিমের বিরোধের অবসানপর্বের সূচনাও হবে তার মাধ্যমে৷ কিন্তু ১৯ আগস্টেই হঠাৎ বেজে ওঠে ফোন৷ ফোনের ওপ্রান্ত থেকে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর প্রেস অফিসার চরম উত্তেজনা নিয়ে বলে চলেছেন, ‘‘সব থামান৷ জার্মানি থেকে আমাদের সৈন্য প্রত্যাহারের পরিকল্পনা স্থগিত৷ মস্কোতে অভ্যুত্থান চলছে৷ গর্বাচেভ মারা গেছেন- এমন খবরও শুনছি আমরা৷’’ তিনি আরো জানালেন, ব্রিটেনের ক্যাবিনেট তখন সংকটকালীন জরুরি বৈঠকে বসেছে৷

একটু পরে এজেন্সির খবর- জার্মান চ্যান্সেলর হেলমুট কোল গ্রীষ্মের ছুটি উপলক্ষ্যে লেক ভল্ফগাং-এর অবকাশ যাপন সংক্ষিপ্ত করে শিগগিরই ফিরে আসছেন বন শহরে৷

কয়েক বছর পরে কোল বলেছিলেন মস্কোর সেই অভ্যুত্থানের খবরে তিনি সেদিন বিস্মিত হননি, তাকে বিস্মিত করেছিল আসলে অভ্যুত্থানের টাইমিং৷ সেদিন সন্ধ্যায় টাগেসশাউ-এর মূল প্রতিবেদনে জানানো হয় দলীয় এবং সংসদ নেতাদের সঙ্গে চ্যান্সেলরের জরুরি বৈঠকের খবর৷ বলা বাহুল্য, সেই বৈঠকের উদ্দেশ্যও ছিল মস্কোর অভ্যুত্থান নিয়ে আলোচনা৷

পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ তা তখন কেউই বুঝতে পারেনি৷ তবে আমার পরিষ্কার মনে আছে, সবাই তখন গর্বাচেভের কী হলো তা নিয়েই বেশি ভাবছিল৷ অভ্যুত্থানের তিনদিন পর সোভিয়েট রাষ্ট্রের প্রধানকে যখন আবার দেখা গেল তখন সবার মাঝে যে কী স্বস্তি ছড়িয়ে পড়েছিল তা বলে বোঝানো যাবে না৷

কয়েকদিন পর লিথুয়ানিয়া, লাটভিয়া আর এস্তোনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বন, অর্থাৎ জার্মানির তখনকার রাজধানী শহরে এলেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হান্স-ডিটরিশ গেনশারের সঙ্গে বৈঠক করতে৷ সেখানে আলোচনার মূল বিষয় ছিল কূটনৈতিক সম্পর্ক৷

স্মৃতিকথায় কোল লিখেছিলেন, সোভিয়েট ইউনিয়নের জনগণ ‘গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচার প্রাপ্তির পথে বড় এক বিজয়’ অর্জন করেছিল৷

গর্বাচেভের পর ইয়েলৎসিন

গণভোটে সোভিয়েট ইউনিয়ন টিকিয়ে রাখার পক্ষে রায় এলো না৷ রাশিয়ার মানুষ আরেক রাজনীতিবিদ বরিস ইয়েলৎসিনকে জানার সুযোগ পেলেন৷ রাশিয়ার হোয়াইটা হাউসের সামনে ট্যাংকের ওপর তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন তারা৷ অভ্যুত্থানের সময় জনতার পক্ষে দাঁড়াতেও দেখা গেল তাকে৷ সবার কাছে একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেল, মস্কোর রাজনীতিতে ভিন্ন এক হাওয়া বইতে শুরু করেছে৷

অভ্যুত্থানচেষ্টা মস্কোকে রাজনৈতিক অনুবীক্ষণ যন্ত্রের নীচে নিয়ে এলো, দেখিয়ে দিলো দেশটির ভবিষ্যৎ কত নাজুক৷

ঘটনাক্রমে পশ্চিম জার্মানি থেকে ন্যাটো-ব্রিটিশ সৈন্য ফিরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা কয়েক সপ্তাহ পরেই জানিয়ে দেয়া হয়েছিল৷

ক্রিস্টিয়ান এফ. ট্রিপে/এসিবি