1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ডায়াবেটিস পুরোপুরি নিরাময় করতে জার্মানিতে অভিনব উদ্যোগ

২২ এপ্রিল ২০১৯

ডায়াবেটিস আজও বিশ্বব্যাপী এক বড় সমস্যা৷ রোগীদের সাধারণত সারা জীবন ধরে ওষুধ ও ইনসুলিন ইঞ্জেকশনের উপর নির্ভর করতে হয়৷ কিন্তু প্রথম পর্যায়ে ওজন কমিয়ে ও কিছু নিয়ম মেনে এই রোগ পুরোপুরি দূর করা সম্ভব৷

https://p.dw.com/p/3HDT1
DW Fit und Gesund 29.03.2019 Diabetes heilbar durch Diät
ছবি: NDR

জার্মানিতে প্রায় ৬০ লক্ষ ডায়াবেটিসের রোগী রয়েছেন৷ প্রতিদিন প্রায় হাজারখানেক মানুষ সেই তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন৷ নাটকীয় এই পরিস্থিতির মাঝে এক গবেষণা অনুযায়ী, শুধু ওজন কমিয়ে ডায়াবেটিসের মোকাবিলা করা সম্ভব৷ পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ড. মাটিয়াস রিডেল বলেন, ‘‘আমার কাছে এটা একটা মাইলফলক৷ এটা স্পষ্ট, যে  ডায়াবেটিস নিরাময় করা সম্ভব৷ আগের মতো এই রোগকে আর নিয়তি হিসেবে মেনে নিতে হবে না৷''
ইংল্যান্ডের এই গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে, যে রোগ দেখা দেওয়ার পর প্রথম ৬ মাসের মধ্যে শুধু ওজন কমিয়ে সেটি নিরাময় করা সম্ভব৷ তাতে কোনো ওষুধের প্রয়োজন পড়ে না৷
এক পরীক্ষার আওতায় খাদ্য তালিকার অত্যন্ত কড়া নিয়ম অনুযায়ী অংশগ্রহণকারীদের খেতে দেওয়া হয়েছিল৷ তিন মাস ধরে তাঁদের দিনে শুধু ৯০০ ক্যালোরি পরিমাণ নিউট্রিশন শেক খেতে হয়েছে৷ সেইসঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা তাঁদের পরামর্শ দিয়েছেন৷ বেশ কিছু ব্যায়ামও করতে হয়েছে৷ তার ফল ছিল বেশ চমকপ্রদ৷


যারা ৭ কিলোগ্রাম পর্যন্ত ওজন কমাতে পেরেছেন, তাঁদের মধ্যে ৭ শতাংশ মানুষ পুরোপুরি ডায়াবেটিস ট্যাবলেট ছাড়াই সুস্থ হয়ে উঠেছেন৷ যারা ১৫ কিলো ওজন কমাতে পেরেছেন, তাঁদের মধ্যে ৮৬ শতাংশ এই লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছেন৷ ড. মাটিয়াস রিডেল এ বিষয়ে বলেন, ‘‘এই গবেষণা ডায়াবেটিস চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিপ্লব এনেছে৷ ডাক্তার ও রোগীদের নতুন করে ভাবতে হবে৷ সারা জীবন ধরে ট্যাবলেট ও ইনসুলিন গ্রহণ না করেও রোগ নিরাময় সম্ভব৷''

 

ডিয়র্ক ফন গ্রুবে নিজের ওজন কমিয়ে ইনসুলিন ইঞ্জেকশনের উপর নির্ভরতা কাটাতে পেরেছেন৷ আগে তিনি সব সময়ে কিছু না কিছু খেয়ে যেতেন৷ প্রচুর পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট ও তার মাঝে মিষ্টি জাতীয় খাদ্য৷ এভাবে তিনি মোটা হতে হতে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হন৷ ড. মাটিয়াস রিডেল এই প্রক্রিয়ার ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘শরীরের ইন্দ্রিয়গুলি ও পেটে মেদের আধিক্যই ডায়াবেটিসের প্রধান কারণ৷ যত বেশি চর্বি, তত বেশি  ইনসুলিনের প্রয়োজন হয়৷ ইনসুলিনের প্রয়োজনীয়তা যত বাড়ে, তত বেশি মেদ জমা হয়৷ এই দুষ্টচক্র অনেক মানুষের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক৷ এমনকি মৃত্যুও হতে পারে৷ তাই সেই চক্র ভেঙে দিতে হবে৷''
শরীর কার্বোহাইড্রেটকে গ্লুকোজে পরিণত করে৷ প্যানক্রিয়া বা অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন উৎপাদন করে, যা রক্ত থেকে শর্করা শরীরের কোষে পাঠায়৷ এভাবে রক্তে শর্করার মাত্রা কম থাকে৷
অতিরিক্ত চিনি খেলে কোষগুলি ইনসুলিন প্রতিরোধ করতে শেখে৷ ফলে দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে অগ্ন্যাশয়ের উপর বেশি চাপ পড়ে৷ কোনো এক সময় ইনসুলিন উৎপাদন কমে যায়৷ তখন শর্করা আর রক্ত থেকে কোষের মধ্যে যায় না৷ সেই শর্করা ভাঙতে তখন ইনসুলিন ইঞ্জেকশন দিতে হয়৷ ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ড. ক্র্যোগার বলেন, ‘‘ওজন যত বেশি হবে, ইনসুলিনের প্রভাব তত খারাপ হবে৷ অর্থাৎ আমি ওজন কমানোর চেষ্টা না করলে আমার শরীরের মধ্যের ইনসুলিনের প্রভাবের আরও অবনতি হয়৷ এমনকি আমি ইনসুলিন ইঞ্জেকশন নিলে তার প্রভাবও খারাপ হয়৷ ফলে সহজেই ওজন বাড়তে থাকে৷''
ডিয়র্ক ফন গ্রুবে একজন পুষ্টি বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিয়ে নিজের খাদ্যাভ্যাস বদলে ফেলেছিলেন৷ এভাবে তিনি ২৩ কিলো ওজন কমিয়েছিলেন৷ ফলে তিনি ওষুধ খাওয়াও অনেক কমাতে পেরেছিলেন৷ ড. রিডেল তাঁকে মনে করিয়ে দেন, ‘‘যখন আপনি আমাদের কাছে এসেছিলেন, তখন অনেক ইঞ্জেকশন নিতে হতো৷ আর এখন সামান্য কিছু ট্যাবলেট খেতে হয়৷ এমনটা অব্যাহত থাকলে আরও উন্নতি হবে৷''
ডিয়র্ক ফন গ্রুবে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছেন৷ তবে তিনি অত্যন্ত ব্যতিক্রমী এক দৃষ্টান্ত৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চিকিৎসা হিসেবে পুষ্টি ও ব্যায়ামের উপকারিতা পরখ করার আগেই ডাক্তার ট্যাবলেট ও ইঞ্জেকশন লিখে দেন৷
উলরিকে হাইমেস/এসবি