ড. ইউনূসের জামিনের মেয়াদ ১৪ আগস্ট পর্যন্ত
৪ জুলাই ২০২৪ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আইনজীবী খাজা তানভীর আহমেদ এ তথ্য জানান৷ তিনি বলেন, এই মামলায় পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১৪ আগস্ট দিন ঠিক করেছেন আদালত৷ ঢাকার শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) এম এ আউয়াল (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) আজ এই আদেশ দেন৷ বাকি তিনজন হলেন-গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান৷
এ মামলায় গত ১ জানুয়ারি ড. ইউনূসসহ চারজনকে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত৷ একই সঙ্গে প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়৷
রায় ঘোষণার পর উচ্চ আদালতে আপিল করার শর্তে ড. ইউনূসসহ চারজনকে এক মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছিলেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত৷ ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে মামলাটি করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগের শ্রম পরিদর্শক (সাধারণ) এসএম আরিফুজ্জামান৷
মামলার নথি অনুসারে, আইএফইডি কর্মকর্তারা ২০২১ সালের ১৬ আগস্ট ঢাকার মিরপুরে গ্রামীণ টেলিকমের অফিস পরিদর্শন করে শ্রম আইনের বেশকিছু লঙ্ঘন খুঁজে পান৷ সেই বছরের ১৯ আগস্ট গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠিয়ে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটির ৬৭ কর্মচারীকে স্থায়ী করার কথা ছিল, কিন্তু তা করা হয়নি৷
এছাড়া, কর্মচারীদের পার্টিসিপেশন ও কল্যাণ তহবিল এখনো গঠন করা হয়নি এবং কোম্পানির যে লভ্যাংশ শ্রমিকদের দেওয়ার কথা ছিল তার পাঁচ শতাংশও পরিশোধ করা হয়নি৷
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংবাদ সম্মেলন প্রসঙ্গ
আদালতের রায় ঘোষণার পর বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করা হয়-প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে তার সঙ্গে বসার কথা বলেছিলেন, এ ব্যাপারে আগ্রহ আছে কি না? উত্তরে ড. ইউনূস বলেন, ‘‘আমি এটা শুনলাম এবং তালিকা করলাম যে কী কী বলেছেন তিনি৷ তালিকাতে সবকটাই হলো আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ৷ আমি টাকা পাচার করেছি, বিদেশে বহু প্রতিষ্ঠান করেছি, ট্যাক্স ফাঁকি দেই ইত্যাদি৷ এগুলো হলো তদন্তের বিষয়, বিতর্কে বিষয় নয়৷ এটা আইন-আদালতের বিষয়, বিচার বিভাগের বিষয়৷ এখানে বিতর্কের কী আছে বা ডায়ালগের কী আছে-আমি তো কিছু পেলাম না! কাজেই আমার মনে হয়, এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই৷ আর যেসব বিষয় তিনি উত্থাপন করেছেন অভিযোগ হিসেবে, সেগুলোর জবাব আমরা বহুবার দিয়েছি-একবার না৷ আপনাদের হয়তো স্মরণ আছে, ২০১২ সালে আমরা এগুলো বলতে বলতে এত বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিলাম, শেষে গ্রামীণ ব্যাংকের ২৯টি প্রশ্ন ও তার জবাব বলে একটা তালিকা করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন আকারে ছাপিয়ে দিয়েছিলাম৷ ওটা পড়লে ওগুলোর জবাব ওখানেই পেয়ে যাবে৷ এটা নতুন করে আর জবাব খুঁজতে হবে না৷''
ড. ইউনূস আরও বলেন, ‘‘আমার ট্যাক্সের ব্যাপারে কোনোদিন সরকারের পক্ষ থেকে, এনবিআরের (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) পক্ষ থেকে আমার জন্য কোনো মামলা করাই হয়নি, কাজেই ট্যাক্স ফাঁকির বিষয়টি আসলো কোত্থেকে এটা বুঝতে পারছি না৷ কাজেই এগুলো হলো তদন্তের বিষয়৷ আবারও আলোচনা করতে চান, করুক৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমার একটা জিনিস ভালো লেগেছে তার কথায়, তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ এনেছেন৷ যেসব অভিযোগ এনেছেন, এগুলো গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে৷ ইতিমধ্যে আইন-আদালতে ঘোরাঘুরি করে একটা জিনিস শিখেছি যে, প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যখন অভিযোগ করা হয়, তখন চেয়ারম্যান এবং বোর্ড সদস্য সবাইকে অভিযোগ করা হয়৷ গ্রামীণ ব্যাংকের যারা চেয়ারম্যান ছিলেন, যারা বোর্ড সদস্য ছিলেন, তারাও অভিযুক্ত হবেন৷ কাজেই তাদের নিয়ে আসতে হবে৷''
ড. ইউনূস বলেন, ‘‘গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন প্রথমে ইকবাল মাহমুদ সাহেব, প্রফেসর ইকবাল মাহমুদ অত্যন্ত সম্মানী ব্যক্তি৷ তার পরে প্রফেসর কায়সার হোসেন, প্রফেসর রেহমান সোবহান, ড. আকবর আলি খান, তবারক হোসেন; তারা সবাই অভিযুক্ত হবেন৷ কাজেই আমার খুব ভালো লাগবে তাদের সঙ্গে আসা৷ আমি তখন ম্যানেজিং ডাইরেক্টর-দুই নম্বরে আমি, তারা সব এক নম্বরে এবং খাঁচা যদি ততদিন টিকে থাকে আমরা সবাই মিলে খাঁচার ভেতরে থাকব৷ এটা আমার কাছে খুব ভালো লাগবে৷''
এপিবি/কেএম (ডেইলি স্টার বাংলা)