1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ট্রান্সজেন্ডার নারীদের নিয়ে সাঁতার কর্তৃপক্ষের ভুল ধারণা

২২ জুন ২০২২

আন্তর্জাতিক সাঁতার ফেডারেশন (ফিনা) ট্রান্সজেন্ডার নারীদের নারী ক্যাটাগরি থেকে নিষিদ্ধ করেছে৷ এমন নিয়মের ফলে অনেক ট্রান্সজেন্ডার নারী সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন না৷

https://p.dw.com/p/4D4a3
Symbolbild I Schwimm-Wettbewerb
ছবি: PantherMedia/picture alliance

 

কিন্তু এমন সিদ্ধান্তের ফলে সমাজে ট্রান্সজেন্ডার নারীরা আরো পিছিয়ে পড়বে এমন সম্ভাবনা তৈরি হয়৷               

সাঁতার প্রতিযোগিতার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিনা সম্প্রতি এই নিয়মটি চালু করে৷ এতে বলা হয়, বয়ঃসন্ধিকালে কখনো টেস্টোটেরনের পরিমাণ বেশি থাকলে সে ক্ষেত্রে ট্রান্সজেন্ডার নারীরা উচ্চ স্তরের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন না৷ এমন সিদ্ধান্তের ফলে অধিকাংশ ট্রান্সজেন্ডার নারীই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ হারাবেন৷        

তার আগে আন্তর্জাতিক রাগবি প্রতিযোগিতা থেকে ট্রান্সজেন্ডার নারীদের অংশগ্রহণ বিষয়ে একই নিয়ম আরোপ করা হয়৷ 

এ বিষয়ে বিশ্ব সাইক্লিং সংস্থাও অবশ্য বিধিনিষেধ আরোপ করেছে৷ গত সপ্তাহে সংস্থাটি ট্রান্সজেন্ডার নারীদের হরমোনের পরিমাণের সীমা অর্ধেক করেছে ৷

এসব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ট্রান্সজেন্ডার নারীদের অংশগ্রহণের বিষয়ে বিভিন্ন নিয়মনীতি তৈরি করা হয়েছে৷

যদিও তথ্য-উপাত্ত বলছে, ট্রান্সজেন্ডার নারী ক্রীড়াবিদরা সিসজেন্ডার পুরুষদের সমতুল্য নয়৷ সিসজেন্ডার পুরুষ বলতে তাদের বুঝানো হয় যারা জন্মসূত্রে পুরুষ এবং নিজেদের পুরুষ বলে মনে করেন৷           

হরমোনের চিকিৎসা কী?

লিঙ্গ নিশ্চয়তার হরমোন চিকিৎসা হলো যখন কোনো ট্রান্সজেন্ডার নারী ইস্ট্রোজেন পরিপূরকের মাধ্যমে তাদের হরমোন কমায়৷ এর লক্ষ্য হলো, ট্রান্সজেন্ডার নারীদের টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ সিসজেন্ডার নারীদের পর্যায়ে নিয়ে আসা৷      

এ ধরনের চিকিৎসা ব্যক্তির শারীরিক অস্বস্তি দূর করে এবং ট্রান্সজেন্ডার ক্রীড়াবিদদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়৷

Blair Hamilton
ব্লেয়ার হ্যামিলটন, ডয়চে ভেলেছবি: Privat

যারা টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ কমার চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের সাধারণত লম্বা হাড়, শক্তিশালী পেশি এবং রক্তে অক্সিজেন সমৃদ্ধ হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বেশি থাকে৷

তবে টেস্টোস্টেরন কমানোর ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পেশি দুর্বল হয় এবং পেশি গঠনের সক্ষমতাও কমে যায়৷ তাছাড়া হিমোগ্লোবিনের ঘনত্বও সিসজেন্ডার নারীদের পর্যায়ে নামিয়ে নিয়ে আসে৷ আর ইস্ট্রোজেন সাপ্লিমেন্ট ট্রান্সজেন্ডার নারীদের শরীরের চর্বির পরিমাণ অনেক বাড়িয়ে দেয়৷           

চর্বির কারণে শারীরিক চলাফেরায় সমস্যা হয়৷ আর শরীরের পেশি এর ঠিক বিপরীত কাজটি করে৷ ফলে, কোনো ব্যক্তির শরীরে চর্বির পরিমাণ যত কম তাদের ভাল ক্রীড়াবিদ হয়ে উঠার সুযোগ তত বেশি৷

ট্রান্সজেন্ডার নারীদের নারী হিসেবে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার নিষিদ্ধ করার যে যুক্তি দেওয়া হচ্ছে তা হলো, এই ক্রীড়াবিদদের শরীরে বয়সন্ধিকালীন সময়ে উচ্চমাত্রার টেস্টোস্টেরন ছিল৷

পরিসংখ্যান যা বলছে

ট্রান্সজেন্ডার নারীদের বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্তই তাদের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ভিত্তিক হওয়া প্রয়োজন৷ কিন্তু এসকল ব্যক্তিদের ক্রীড়াক্ষেত্রে উপস্থিতি কম থাকায় তাদের বিষয়ে পরিসংখ্যানেরও যথেষ্ট ঘাটতি রযেছে৷  

২০২১ সালে আট জন ট্রান্সজেন্ডার নারী ও আটজন সিসজেন্ডার নারী ও পুরুষের একটি গবেষণায় বলা হয়, ট্রান্সজেন্ডার নারীদের শক্তি সিসি নারীদের মতো কম নয়৷ তবে আবার তা সিসজেন্ডার পুরুষদের মতে বেশিও নয়৷  

কিন্তু গবেষণায় সিস নারী ও সিস পুরুষদের ফ্যাট-ফ্রি মাসের শক্তির অনুপাতে হিসেব করে দেখা গেছে যে তারা সমান৷ বিপরীতে, ট্রান্সজেন্ডার নারীদের শারীরিক শক্তি তাদের ফ্যাট-ফ্রি মাসের অনুপাতে হিসেব করে দেখা গেছে, তারা সিস নারী ও সিস পুরুষদের তুলনায় শতকরা ১৯ভাগ কম শক্তিশালী৷

এত দ্রুত সিদ্ধান্ত না নেই

এমন পরিসংখ্যান দেখে বলা যায়, সিসজেন্ডার পুরুষ ও ট্রান্সজেন্ডার নারীরা কখনোই সমান নয়৷ যদিও আমার আশঙ্কা, ফিনার সিদ্ধান্তের মূল ভিত্তি ছিল এটি৷

ট্রান্সজেন্ডার নারীরা লিঙ্গ নিশ্চয়তার হরমোন চিকিৎসার আগে থেকেই মানসিকভাবে আলাদা থাকেন৷ তাছাড়াও তাদের বেলায় আরো অনেক সামাজিক ও মানসিক বিষয়ের প্রভাব রয়েছে৷

তাই আমার মনে হয়, ফিনার ওই সিদ্ধান্ত আসলে ত্রুটিপুর্ণ৷

আমার দৃঢ় বিশ্বাস, টেস্টোস্টেরন কমিয়ে আনা এবং সেই সঙ্গে ইস্ট্রোজেন সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে ক্রীড়াক্ষেত্রে নারীদের ক্যাটাগরি তৈরি করা উচিত৷

অবশ্য ফিনার এই সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণ করার এবং এ সিদ্ধান্ত কেন ভুল সে উত্তর দেওয়ার দায়িত্ব আমরা যারা এ বিষয়ে গবেষণা করছি তাদের৷ দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, গবেষণালব্ধ ফলাফল হাতে পেতে কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লেগে যাবে৷

আর এমন প্রয়োজনীয় তথ্য হাতে পাওয়ার আগ পর্যন্ত চলুন আমরা ট্রান্সজেন্ডার নারী ক্রীড়াবিদদের দোষী করা থেকে বিরত থাকি৷ কেননা, তারা ইতিমধ্যেই সমাজে নানাভাবে বঞ্চিত হয়ে আসছে৷