‘টাকা দিয়ে বিপদ কিনেছি’

সিলেট থেকে বসনিয়া আসা সাইফুর রহমানের এখন পর্যন্ত ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে৷ ওমান-দুবাই সাগর পাড়ি দিয়ে আসার পর আর ফেরত যাওয়ার চিন্তা করা সম্ভব না বলেও জানান তিনি৷ তবে যেভাবে কষ্ট করে জঙ্গলে থাকতে হচ্ছে, নির্যাতন সহ্য করে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করতে হচ্ছে, তাতে এখন আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন তিনি৷ এখন কেউ যদি কেউ ১০ লাখ টাকাও তাকে দিতে চায়, তাহলে পাঁচ লাখ টাকা লস দিয়েও দেশে ফেরত যেতে চান তিনি৷

ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে এখন বসনিয়ার জঙ্গলে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন মাদারিপুরের ইয়াসিন খান৷ ওমানে ফ্লাইবোর্ডের কারখানায় দীর্ঘদিন কাজ করেছেন তিনি৷ কিন্তু দালালের খপ্পরে পড়ে বেতন পাননি ছয় মাস৷ ফলে ইউরোপে স্থায়ী হওয়ার স্বপ্নে ওমান থেকে ইরান, তুরস্ক, গ্রিস, ম্যাসিডোনিয়া, সার্বিয়া হয়ে বসনিয়া আসেন তিনি৷ এই রাস্তা অতিক্রম করতে তার লেগেছে দুই বছর৷

মেরাজ শেখের বাড়ি গোপালগঞ্জ৷ বিজনেস ভিসায় তুরস্ক এসে সেখান থেকে অবৈধভাবে গ্রিসে আসেন তিনি৷ বসনিয়ার জঙ্গলে অতি কষ্টে থাকলেও এখনও বাঙালি খাবারের মায়া ছাড়তে পারেননি৷ কষ্ট করে জল, চাল ও লাকড়ি সংগ্রহ করে জঙ্গলেই চলছে ভাত রান্নার আয়োজন৷ এরই মধ্যে বসনিয়ায় তার এক বছর হয়ে গেছে৷ তিনবার সীমান্ত পাড়ির চেষ্টা চালিয়েছেন তিনি৷ খরচ হয়ে গেছে ১৩ লাখ টাকা, আরো অন্তত চার লাখ টাকা লাগবে বলে মনে করছেন মিরাজ৷

একদিন আগেই ‘গেমে’ গিয়ে স্লোভেনিয়ার পুলিশের হাতে আটকা পড়েন মৌলভীবাজারের শেখ লাকী৷ বসনিয়ায় ফেরত পাঠানোর আগে সীমান্তে তাকে ক্রোয়েশিয়া পুলিশ মারধরও করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি৷ ওমানে পাঁচ বছর কাটিয়েও দেশে পরিবারকে তেমন একটা আর্থিক সাহায্য করতে পারেননি তিনি৷ ফলে পরিবারের কথা চিন্তা করেই ফ্রান্সে যাওয়ার লক্ষ্যে রওয়ানা হয়েছেন লাকী৷ খরচ হয়ে গেছে ১৭ লাখ টাকা৷

মধ্যপ্রাচ্য থেকে অনেকেই সাগর পথে ইরান, তুরস্ক বা গ্রিস আসেন৷ এ পথে মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে বলে ডয়চে ভেলেকে জানান রেহান আহমেদ৷ এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকবার সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ক্রোয়েশিয়া প্রবেশের চেষ্টা করেছেন তিনি৷ প্রতিবারই ধরা পড়েছেন পুলিশের হাতে৷

ক্রোয়েশিয়া সীমান্ত পাড়ি দেয়ার সময় পুলিশের নির্মম নির্যাতনের চিত্র ডয়চে ভেলেকে দেখাচ্ছেন সুনামগঞ্জের নিখিল৷ জাতিসংঘের অভিবাসী বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইওএম তাকে সীমান্ত থেকে নিয়ে এসেছে৷ এখন মিরাল ক্যাম্পে স্থান পেয়েছেন তিনি৷ নিখিলের সারা গায়ে পুলিশের লাঠির বাড়ির দাগ৷

সিলেটে রাজনৈতিক আক্রোশের শিকার হয়ে এখন বসনিয়ার মিরাল ক্যাম্পে আছেন বলে দাবি শায়েল আহমেদের৷ গ্রিস ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হলেও সেখান থেকে অন্য দেশে যাওয়া বেশ কষ্টকর৷ এজন্য বাধ্য হয়ে এখন বসনিয়ায় এসে সেখান থেকে ইটালি বা ফ্রান্স যাওয়ার চেষ্টা করছেন শায়েল৷

ডান হাতে ১৪টি সেলাই, একটি রগ কেটে গেছে একেবারেই৷ হাতে এখন আর শক্তিও পান না সিলেটের শফিক মিয়া৷ তার অভিযোগ, পুলিশের কুকুর কামড়ে তার এই অবস্থা করেছে৷ এখন চার মাস ধরে মিরাল ক্যাম্পে আছেন শফিক৷ তবে এরই মধ্যে তার কয়েক লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে৷ ফলে দেশে ফেরার সুযোগও আর দেখছেন না তিনি৷ সুস্থ হয়ে উঠলেই আবার সীমান্ত পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করবেন বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন শফিক৷