1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

টাইটানিকের খোঁজ

১০ এপ্রিল ২০১২

একশ বছর আগে ১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিল উত্তর অ্যাটলান্টিকের বরফ শীতল পানিতে ডুবে গিয়েছিলো টাইটানিক৷ তাকে খুঁজে পেতে বিজ্ঞানীদের অপেক্ষা করতে হয়েছে দশকের পর দশক৷ কারণ তখনও প্রযুক্তির দৌড় সমুদ্রের এতটা গভীর পর্যন্ত পৌঁছেনি৷

https://p.dw.com/p/14a3T
FILE - In this April 10, 1912 file photo, the liner Titanic leaves Southampton, England on her maiden voyage to New York City. Five days into her journey, the ship struck an iceberg and sank, resulting in the deaths of more than 1,500 people. The first interviews of survivors, and the first impressions of people across the world, of the ill-fated Costa Concordia cruise liner that ran aground and tipped over in Italy, Saturday, Jan. 14, 2012, are yielding predictable comparisons to the Titanic tragedy. (AP Photo, File)
১৯১২ সালের ১০ এপ্রিল যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটনে টাইটানিকছবি: AP

জাহাজটি কোথায়

টাইটানিক ডুবে যাওয়ার পর এর উদ্ধারের কথা ভেবেছিলো এর মালিক ব্রিটিশ কোম্পানি হোয়াইট স্টার লাইন৷ প্রথমে তারা ভেবেছিলো পুরো জাহাজটির ভেতর পিংপং বল ভরে ফেলা হবে, তাহলে হয়তো জাহাজটি ভেসে উঠবে৷ নয়তো অত্যন্ত শক্তিশালী চুম্বক অথবা বিশাল আকারের কোন বেলুনের সাহায্যে জাহাজটিকে সমুদ্রের গভীর থেকে তুলে আনা হবে৷ কিন্তু সেসব পরিকল্পনাই সার, কারণ জাহাজটি যে কোথায় ডুবে আছে সেটিই তারা জানতো না৷

ফরাসি-মার্কিন প্রচেষ্টা

ফরাসি আর মার্কিন বিজ্ঞানীরা শেষ পর্যন্ত টাইটানিক খুঁজে পান৷ তবে ততদিনে পার হয়ে গেছে ৭৩ বছর৷ তার আগে ১৯৭৭, ১৯৮০, ১৯৮১ এবং ১৯৮৩ সালে টাইটানিক উদ্ধারের জন্য উত্তর অ্যাটলান্টিকে ব্যাপক তল্লাশি চালানো হয়৷ তবে কোন সাফল্য আসেনি৷ ১৯৮৫ সালে আবারও অভিযান শুরু হয়৷ ফ্রেঞ্চ রিসার্চ ইন্সটিটিউট ফর এক্সপ্লোরেশন অব দ্য সি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস এর উডস হোল ওশেনোগ্র্যাফিক ইন্সটিটিউশন এর একটি দল এবার মাঠে নামে, অর্থাৎ সমুদ্রে নামে৷ তাদের জাহাজটির নাম ছিল ল্য সুরোয়া৷ এই দলের অন্যতম অভিযাত্রী ছিলেন ফরাসি গবেষক জঁ লুই মিশেল৷ তিনিই প্রথম সমুদ্রের বুকে টাইটানিককে দেখতে পান৷

The MS Balmoral cruise ship leaves for the Titanic memorial cruise from Southampton, England, Sunday, April 8, 2012. Nearly 100 years after the Titanic went down, a cruise with the same number of passengers aboard is setting sail to retrace the ship's voyage, including a visit to the location where it sank. The Titanic Memorial Cruise is set to depart Sunday from Southampton, where the Titanic left on its maiden voyage. The 12-night cruise will commemorate the 100th anniversary of the sinking of the White Star liner. With 1,309 passengers aboard, the MS Balmoral will follow the same route as the Titanic. Organizers are trying to recreate the onboard experience minus the disaster from the food to a band playing music from that era. Organizers said people from 28 countries have booked passage, including relatives of some of the more than 1,500 people who died when the Titanic collided with an iceberg and sank on April 15, 1912.(Foto:Chris Ison. PA/AP/dapd) UNITED KINGDOM OUT NO SALES NO ARCHIVE
টাইটানিক ধ্বংসের একশ বছর পর তারই স্মরণে এমএস বালমোরালের সমুদ্র যাত্রাছবি: AP

সমুদ্র তল্লাশি

জাহাজটি ঠিক কোন জায়গাটিতে ডুবে আছে, সেটি বের করা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ৷ ল্য সুরোয়া জাহাজের গবেষকরা প্রথমে প্রায় ৪০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা বেছে নেন৷ এরপর তারা পানিতে নামান সোনার এবং ম্যাগনেটোমিটার যন্ত্র৷ এই যন্ত্রগুলো প্রতিফলিত শব্দতরঙ্গের সাহায্যে সমুদ্রের পানিতে ধাতু শনাক্ত করতে পারে৷ ওই সময় ফরাসিদের কাছে ছিলো সেরা প্রযুক্তির সোনার যন্ত্র৷ অন্যদিকে মার্কিনীদের কাছে ছিলো যন্ত্রচালিত ডুবুরি বা ছোট্ট ডুবোজাহাজ৷ তাতে ছিলো ক্যামেরা৷ প্রথমে অভিযাত্রীরা পানির ১৫ থেকে ২০ মিটার গভীরে সোনার নামিয়ে ধাতু শনাক্তের চেষ্টা করেন৷ এজন্য ল্য সুরোয়া জাহাজটিকে এক কিলোমিটার আগে পিছে চালনা করা হয়৷ এভাবে গোটা ৪০০ কিলোমিটার সমুদ্র এলাকাকে ছোট ছোট বক্সের মত করে ভাগ করা হয় এবং সেসব জায়গায় তল্লাশি চলতে থাকে৷ একদিন হঠাৎ করেই সোনার মেশিন ধাতু বস্তুর সিগন্যাল দিতে থাকে৷

অত্যাধুনিক ডুবোজাহাজ

১৯৮৫ সালের ২৫ আগস্ট, ল্য সুরোয়া ক্নর নামে আরেকটি জাহাজকে ডাকে৷ সেই জাহাজটিতে ছিলো রিমোট কন্ট্রোল চালিত একটি ডিপ সি ভেহিকল যার নাম আর্গো৷ এর ভেতরে করে এবার অভিযাত্রী জঁ লুই মিশেল ও তার সঙ্গীরা সমুদ্রের গভীরে ডুব দেন৷

Workers finish painting exterior of the Titanic Museum in Branson, Mo., Tuesday, March 7, 2006. Visitors will enter through the iceberg. (AP Photo/John S. Stewart)
ব্র্যানসনে টাইটানিক জাদুঘরে রঙের কাজ শেষ করার পথে কর্মীরা, এই বরফের স্তূপের মধ্য দিয়েই দর্শকদের জাদুঘরে প্রবেশ করতে হয়ছবি: AP

পহেলা সেপ্টেম্বর, আর্গো নামছে সমুদ্রের গভীরে৷ ভেতরে টিভি স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন মিশেল৷ সেদিনের ঘটনা তিনি বর্ণনা করেন এভাবে, ‘‘প্রথমে সমুদ্রতলে আমি অস্বাভাবিক কিছু দেখতে পাই৷ জিনিসটি নড়ছিলো৷ আর কয়েক মিটার সামনে এগুনোর পর কী যেন চকচক করে উঠলো৷ তার মানে সেটা কোন ধাতু হবে৷ আর্গোতে থাকা ক্যামেরাটি আরও খানিকটা সামনে নেওয়ার পর আরও ধাতু দেখতে পেলাম৷ আমরা দেখলাম একটি রেলিং এর টুকরো....এটা আসলে জাহাজের একটা টুকরো৷'' কিন্তু তখনও অভিযাত্রীরা জানতেন না যে এটাই টাইটানিক৷

অবশেষে খোঁজ মিললো

নতুন আবিষ্কারের উত্তেজনায় ডিপ সি ভেহিকল আর্গো আরও খানিকটা এগিয়ে যায়৷ মিশেল বলেন, ‘‘আমরা ক্রমে আরও ভাঙ্গা ধাতুর টুকরো দেখতে পেলাম৷ কয়েক মিটার এগুনোর পর সবচেয়ে বড় টুকরোটি দেখতে পেলাম চার মিটার ব্যাস ও আট মিটার উঁচু৷ আমি সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পেলাম এটা জাহাজের বয়লার এবং এটা টাইটানিক, কারণ ছবিতে আমি এটাই দেখেছিলাম৷''

ডুবে যাওয়ার সময় টাইটানিক দুই টুকরো হয়ে যায়৷ আর সেটি পাওয়া যায় সর্বশেষ এসওএস এর স্থল থেকে ২১ কিলোমিটার দূরে৷ জাহাজের ক্রুর এই ভুলের কারণে অভিযাত্রীরা বহু বছর ধরে ভুল জায়গায় চষে বেড়িয়েছেন৷ তবে শেষ পর্যন্ত মানুষের নাগালে আসে টাইটানিক৷ সমাপ্তি ঘটে বহুদিনের অজানা এক অধ্যায়ের৷

প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম (এএফপি)
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন