ইতিহাস গড়লো সৌরবিমান
২৬ জুলাই ২০১৬কোনো ধরনের জ্বালানি ছাড়া, শুধুমাত্র সৌরশক্তির ওপর নির্ভর করে পুরো পৃথিবী ঘুরে এলো সুইস বিমান ‘সোলার ইম্পাল্স ২’ ৷ প্রাকৃতিক, কারিগরিসহ নানারকম চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে সাড়ে ষোল মাসের অভিযান শেষে ৪২,০০০ কিলোমিটার আকাশপথ পাড়ি দিয়ে সর্বশেষ উড্ডয়নস্থল কায়রো থেকে আবুধাবি বিমানবন্দরে বিমানটি অবতরণ করান সুইস চালক বার্ট্রান্ড পিকার্ড৷ গত বছরের ৯ই মার্চ এই আবুধাবি থেকেই বিশ্বভ্রমণ শুরু হয়েছিল সোলার ইম্পাল্স ২-এর, যা শেষ হয় ২৬শে জুলাই৷
এই বিশাল যাত্রাপথে বিমানটি উড়াল দিয়েছে মোট ১৭ বার৷ ৪ ঘণ্টা ৪১ মিনিটের ছোট ফ্লাইট থেকে শুরু করে ১১৭ ঘণ্টা ৫২ মিনিটের দীর্ঘ, ক্লান্তিকর যাত্রাও রয়েছে সেই পথে৷ দু’জন প্রতিষ্ঠাতা, প্রকৌশলী-ব্যবসায়ী আন্দ্রে বোর্শবার্গ ও মনোবিশেষজ্ঞ এবং বেলুনচালক বার্ট্রান্ড পিকার্ড মিলে চালিয়েছেন বিমানটি৷ পিকার্ড এর আগে ১৯৯৯ সালে ‘ব্রেইটলিং অরবিটার ৩’ নামে একটি বেলুনে করে একটানা বিশ্বভ্ৰমন করার রেকর্ডও গড়েছিলেন৷
‘ক্লিন এনার্জি’ বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয় এমন শক্তির উৎসকে জনপ্রিয় করতে এই পরীক্ষামূলক প্রকল্পের সূচনা হয় ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে, ‘সোলার ইম্পাল্স ১’ বিমানের প্রথম উড্ডয়নের মধ্যে দিয়ে৷ তারপর অনেক সাফল্য ব্যর্থতার গল্প পেরিয়ে ‘সোলার ইম্পাল্স ২’-এর জন্ম হয় ২০১৪ সালে৷ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ও দূরপাল্লার যাত্রার পর ২০১৫ সালের ৯ মার্চ আবুধাবি থেকে এটি বিশ্ব প্রদক্ষিণে বের হয়, সেই বছরের আগস্ট মাসের মধ্যে তা সম্পন্ন করার প্রত্যয় নিয়ে৷ তবে ২৮শে জুন জাপানের নাগোয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই পর্যন্ত প্রায় ১১৮ ঘণ্টার এক ফ্লাইটে ৭,২১২ কিলোমিটার অতিক্রম করতে গিয়ে বিমানটির ব্যাটারিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং নতুন করে অর্ডার করতে হয়৷ অবশ্য সেই ফ্লাইটটি জ্বালানিবিহীন যে কোনো বিমানের দীর্ঘতম (সময় ও দূরত্ব – দুই হিসেবেই) উড্ডয়নের রেকর্ড সৃষ্টি করে৷
এরপর ভৌগোলিক ও কারিগরি কারণে ‘সোলার ইম্পাল্স ২’-কে হাওয়াইতেই থাকতে হয় ২০১৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত৷ উত্তর গোলার্ধের দিন ছোট হয়ে আসতে থাকার কারণে বিমানটি সেই বছর আর যাত্রায় ফেরেনি৷ তাই ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে পরীক্ষামূলক ফ্লাইটের মাধ্যমে বিমানটিকে প্রস্তুত করে নেয়া হয় এবং অবশেষে ২৮শে এপ্রিল বিমানটি তার বিশ্বপ্রদক্ষিণ পুনরায় শুরু করে৷
জানা যায়, এই বিমানটির ককপিট (চালকের কক্ষ) একটি পাবলিক টেলিফোন বক্সের সমান৷ এতে চালককে অধিক উচ্চতায় থাকার সময় অক্সিজেন মাস্ক পরতে হয়৷ এছাড়া চালক এক নাগাড়ে ২০ মিনিটের বেশি ঘুমানোর সময়ও পান না৷