জেএনইউ-তে বিক্ষোভ দেখালে জরিমানা বা বহিষ্কার
১২ ডিসেম্বর ২০২৩দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়(জেএনইউ)-তে যে কোনো ধরনের প্রতিবাদের ক্ষেত্রে কড়া নিয়ম চালু করা হলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টরের অফিসের তরফে জারি করা নতুন ম্যানুয়ালে বলা হয়েছে, প্রশাসনিক ও শিক্ষাগত কোনো ব্লকের একশ মিটার বা ৩২৮ ফুটের মধ্যে কোনোরকম বিক্ষোভ দেখানো চলবে না। ধরনা, অনশন, দেওয়াল লেখা, পোস্টার লাগানো, একজোট হয়ে দরাদরি করার চেষ্টা-সহ যে কোনো ধরনের বিক্ষোভের উপরেই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অধ্যাপক বা কর্মীর বাড়ির কাছেও প্রতিবাদ জানানো যাবে না।
যদি কেউ নিষেধাজ্ঞা না মানেন, তাহলে ২০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে অথবা কর্তৃপক্ষ চাইলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাস্টিকেট করতে পারে অথবা দুইটি সেমিস্টার পর্যন্ত বহিষ্কার করতে পারে। যদি দেশবিরোধী কোনো স্লোগান দেয়া হয়, জাতপাত, ধর্মবিরোধী স্লগান ওঠে, তাহলে দশ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।
চিফ প্রোক্টরের অফিসের তৈরি করা এই ম্যানুয়ালকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল গত ২৪ নভেম্বর অনুমোদন দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আগাম অনুমতি ছাড়া ক্যাম্পাসের ভিতরে নবীনবরণ, বিদায় সম্বর্ধনা, ডিজে পার্টি-সহ কোনোরকম পার্টি কর যাবে না। এই ধরনের পার্টি করলে ছয় হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে বা জেএনইউ-র কমিউনিটি সার্ভিসে অংশ নিতে হবে।
কেন এই ব্যবস্থা?
জেএনইউ-র ভাইস চ্যান্সেলর শান্তিশ্রী পণ্ডিত ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, ''নতুন কোনো নিয়ম চালু করা হচ্ছে না। এই নিয়মগুলি ১৯৬৯ সাল থেকেই চালু আছে। সেগুলি একটু ফাইন টিউনিং করা হয়েছে। দিল্লি হাইকোর্টের নির্দেশের পর সেগুলিকে আইনগত দিক থেকে আরো শক্তিশালী করা হয়েছে।''
বিনা অনুমতিতে ক্যাম্পাসে নবীনবরণ-সহ অন্য পার্টি করলে ছয় হাজার টাকা জরিমানা প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেছেন, ''নবীনবরণে মাদক ও মদ ছিল। নয় মাস আগে নর্মদা হস্টেলে জন্মদিনের পর্টিতে সহিংসতা হয়েছিল। ক্যাম্পাসে আইন ও শৃঙ্খলা বজায় রাখাটা আমার দায়িত্বের উপরে পড়ে।''
চিফ প্রোক্টর জনার্দন ঝা বলেছেন, ''এই নথি এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল অনুমোদন করেছে।'' কিন্তু ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের রিপোর্ট বলছে, এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য ও অ্য়াসিস্টেন্ট প্রফেসর ব্রক্ষ্মপ্রকাশ সিং জানিয়েছেন, ''কাউন্সিলের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে ঠিকভাবে আলোচনা হয়নি এবং উপযুক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি। মন্তব্য ও পর্যবেক্ষণ দেয়ার শেষদিন ছিল ১২ ডিসেম্বর।''
ছাত্র ইউনিয়নের বক্তব্য
জেএনইউএসইউ এই নির্দেশিকা প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে। একটা বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, ''এই নির্দেশিকার অর্থ, খোলাখুলি আলোচনা, বিরোধ, বিক্ষোভ, যৌক্তিক মতবিনিময় বন্ধ করে দেয়া। বিক্ষোভ দেখালেই জরিমানা বা শাস্তি দেয়া। এমনকী কর্তৃপক্ষ যদি মনে করেন, কোনো ছাত্রের আচরণ অনৈতিক, তাহলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে।''
তারা বলেছে, ''পড়ুয়ারা ঐক্যবদ্ধ থেকে যেন এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায়। জেএনইউ ভয়হীন চিন্তাভাবনা, পড়াশুনোয় সর্বোচ্চ মানে পৌঁছনো এবং মৌলিক চিন্তাভাবনার জন্য বিখ্যাত। সেসবের মূলে আঘাত করার চেষ্টা চলছে।''
অন্য প্রতিক্রিয়া
এই বিশ্ববিদ্য়ালয়ের সাবেক ছাত্র সুদেশ বর্মা ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''প্রশাসনিক ব্লক, ক্লাসরুম, শিক্ষকদের বাসস্থানের সামনে প্রতিবাদ করা মানে অন্য়ের অসুবিধা করা। প্রতিবাদ জানানোর জন্য একটা নির্দিষ্ট জায়গা করে দেয়া উচিত। যেখানে কারো অসুবিধা না করে প্রতিবাদ জানানো যাবে।''
সুদেশ বলেছেন, তারা যখন ছাত্র ছিলেন, তখন প্রতিবাদ হতো। কিন্তু এখন বিক্ষোভের চরিত্র বদলেছে। তা অনেক বেশি কট্টর রূপ নিয়েছে। সেটাও দেখতে হবে।
দিল্লির প্রবীণ নাট্যপরিচালক সিদ্ধার্থ দাশগুপ্ত ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''মুক্ত চিন্তা ও প্রতিবাদের জায়গা অবশ্যই থাকতে হবে। ভারতের প্রমুখ বিস্ববিদ্যালয়ে এভাবে প্রতিবাদ বন্ধ করার চেষ্টা ঠিক নয়। এভাবে বিক্ষোভ আটকানো সম্ভব বলেও আমার মনে হয় না। এটা মাথায় রাখা দরকার যে, পড়য়ারা স্বাভাবিকভাবেই প্রতিবাদী হন।''
জেএনইউ-র এক অধ্যাপকের সঙ্গে ডিডাব্লিউ যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তিনি শুধু বলেছেন, প্রশাসনিক ব্লকের সামনে প্রতিবাদ দেখানো যাবে না বলে হাইকোর্ট আগেই জানিয়েছিল। এখন তার পরিধি অনেকখানি বাড়ানো হলো। জেএনইউ-তে প্রতিবাদের, বিক্ষোভের একটা ঐতিহ্য আছে। এটা মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
জিএইচ/এসজি (পিটিআই)