জুলিয়ান আসাঞ্জকে অ্যামেরিকার হাতে তুলে দেবে না ব্রিটেন
৪ জানুয়ারি ২০২১যুক্তরাষ্ট্রে গুপ্তচরবৃত্তিসহ কয়েকটি অভিযোগেরআসামি জুলিয়ান আসাঞ্জকে সে দেশের হাতে তুলে দেয়ার অনুরোধ ফিরিয়ে দিয়েছেন ব্রিটিশ বিচারক ভেনেসা ব্যারাইটজার৷
বিচারক আসাঞ্জের মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে বলেন, তাকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দিলে কাজটি হবে ‘নিপীড়নমূলক'৷ তিনি বলেন, মার্কিন দেশে ফেরত পাঠালে আসাঞ্জ হয়ত আত্মহত্যা করবেন৷
২০১০ সালে উইকিলিকসের নামে অ্যামেরিকান মিলিটারির প্রায় পাঁচ লাখ নথি ফাঁস করে দেন আসাঞ্জ৷ এসব নথিতে আফগানিস্তান ও ইরাকে মিলিটারির নানা কার্যক্রমের তথ্য রয়েছে৷ এরপর তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ১৮টি অভিযোগ আনা হয়, যার একটি গুপ্তচরবৃত্তি৷ অভিযোগ প্রমাণ হলে তাকে ১৭৫ বছর জেল খাটতে হবে৷
বিচারক মানসিক অবস্থার দোহাই দিলেও, বাক-স্বাধীনতার যুক্তি খারিজ করে দেন৷ তিনি বলেন, ‘‘অপরাধ প্রমাণিত হলে তা বাক-স্বাধীনতার যুক্তিতে সুরক্ষা পাবে না৷''
অবশ্য মার্কিন জেলে একাকী থাকার শঙ্কা আসাঞ্জকে হতাশাগ্রস্ত করে তুলছে বলে মনে করেন বিচারক৷ তিনি বলেন, আসাঞ্জের সেই ‘বুদ্ধি ও দৃঢ়তা' আছে, যা ব্যবহার করে তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন এবং কর্তৃপক্ষ তা ঠেকাতে পারবে না৷
ব্রিটিশ জুডিশিয়াল অফিস পুরো রায়টি টুইট করেছে৷
৪৯ বছর বয়সী জুলিয়ান ১৯৭১ সালে উত্তর-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার টাউনসভিলে জন্মগ্রহণ করেন৷ ২০০৬ সালে তিনি উইকিলিকস নামের একটি ওয়েব প্লাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করেন৷ যে কেউ চাইলে গোপন নথি সেখানে প্রকাশের জন্য দিতে পারত৷
২০১০ সালে উইকিলিকস আলোচনায় আসে৷ তারা তখন ২০০৭ সালের একটি গোপন ভিডিও প্রচার করে, যেখানে বাগদাদে অ্যাপাচি হেলিকপ্টার ব্যবহার করে মার্কিন মিলিটারি ডজনখানেক মানুষকে মেরে ফেলে, যার মধ্যে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দুই সংবাদকর্মী ছিলেন৷
এরপর উইকিলিকস মার্কিন কূটনীতির লাখ লাখ গোপন নথি প্রকাশকরতে শুরু করে৷ সেখানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন থেকে শুরু করে সৌদি রাজপরিবারের সদস্যদের বিষয়ে নানান সমালোচনামূলক বার্তা, আফগান যুদ্ধের মার্কিন অপারেশনের নানা তথ্য ছিল৷
পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে গুপ্তচরবৃত্তিসহ ১৮টি অভিযোগ আনা হয়৷ যৌন নিপীড়নের অভিযোগে বিচার করতে চায় সুইডেন৷ ২০১২ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি লন্ডনে ইকুয়েডরের এম্বেসিতে রাজনৈতিক আশ্রয় পান৷ ২০১৯ সালে তাকে গ্রেফতার করা হয়৷
আসাঞ্জকে গ্রেফতার ও তাকে বিচারের মুখোমুখি আনা সংবাদমাধ্যম ও বাক-স্বাধীনতার ওপর আঘাত বলে মনে করেন অনেকে৷ সোমবার ব্রিটিশ আদালত যেন তাকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে না দেয় সেজন্য বিভিন্ন পর্যায় থেকে আহ্বান জানানো হচ্ছিল৷ জাতিসংঘের বিশেষ দূত নিলস মেলজার বলেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্র অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে অপরাধমূলক কাজ হিসেবে দেখাতে চাইছে৷''
জেডএ/কেএম (এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স)