1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জিনগত কারণের স্তন ক্যানসার মোকাবিলার প্রচেষ্টা

২ জানুয়ারি ২০২৪

স্তন ও ডিম্বাশয়ের ক্যানসার যে কোনো নারীর জীবন ভারাক্তান্ত করে তুলতে পারে৷ তবে জিনগত কারণে এমন ঝুঁকির মাত্রা বেশি হলে আগেভাগেই পদক্ষেপ নেবার সুযোগ রয়েছে৷ জার্মানির এক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে বিশেষ অগ্রগতি করেছে৷

https://p.dw.com/p/4ang5
যে সব নারীর ক্ষেত্রে ঝুঁকির মাত্রা বেশি, তাদের অত্যন্ত ঘনঘন পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা করাতে হয়৷
যে সব নারীর ক্ষেত্রে ঝুঁকির মাত্রা বেশি, তাদের অত্যন্ত ঘনঘন পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা করাতে হয়৷ছবি: Monkey Business Images/Colourbox

ইয়েসিকা ভালেক নিশ্চিন্ত বোধ করছেন৷ সুস্থ থাকতে মাস ছয়েক আগেই অপারেশন করে তার সব ম্যামারি গ্ল্যান্ড টিস্যু বাদ দেওয়া হয়েছিল৷ নিজের এই সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘‘কারণ আমি জানতাম, এটা আমায় শান্তিতে থাকতে দেবে না৷ অতীতে আমার স্তনে সব সময়ে ব্যথার সমস্যা ছিল৷ সব ঠিকই ছিল৷ সমস্যাটা মানসিক৷ তাই আমি এই পদক্ষেপ বেছে নিয়েছি৷''

কারণ ইয়েসিকার ক্ষেত্রে জীবনে কোনো এক সময়ে বিপজ্জনক টিউমার সৃষ্টির সম্ভাবনা খুবই বাস্তব ছিল৷ অর্থাৎ স্তনের ক্যানসার৷ জিনগত কারণেই এই আশঙ্কা ছিল৷

ইয়েসিকা ও তার খালা বা মাসির পরিবারে কয়েক প্রজন্ম ধরে নানা ধরনের ক্যানসার দেখা গেছে৷ সে কারণে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে৷ পরিবারের কয়েকজন সদস্য অত্যন্ত কম বয়সেও আক্রান্ত হয়েছেন৷ ফলে এই পরিবারে বংশগত প্রবণতার আশঙ্কার মাত্রা অত্যন্ত বেশি৷ ইয়েসিকা বলেন, ‘‘মাত্র ৩৬ বছর বয়সে আমার মায়েরও ব্রেস্ট ক্যানসার হওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই আমার স্তনে লাম্প অনুভব করার ভয় হতো৷ আমারও এমনটা হতে পারে, জেনে মানসিক চাপ আরো বেড়ে গেল৷''

জার্মানির মাইনৎস বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনগত স্তন এবং ডিম্বাশয়ের ক্যানসার গবেষণা কেন্দ্রে ইয়েসিকার মতো নারীরা ঝুঁকির মাত্রা পরীক্ষা করাতে পারেন৷

প্রো. ড. আনেটে হাসেনবুর্গের টিম প্রত্যেক নারীর সঙ্গে সবার আগে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন৷ তিনি জানান, ‘‘সবার আগে কনসাল্টেশনে আসতে হয়৷ বংশ তালিকা সৃষ্টি করে বাড়তি ঝুঁকির মাত্রা খতিয়ে দেখা হয়৷ ঝুঁকির মাত্রা নির্ণয় করতে আমাদের চেক-লিস্ট রয়েছে৷ দশ শতাংশের বেশি হলে আমরা জেনেটিক পরীক্ষা করি৷ কোনো ঝুঁকিপূর্ণ জিন আছে কিনা, তার সন্ধান করি৷''

পূর্ব সতর্কতায় কমতে পারে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি

ব্রেকা-ওয়ান এবং ব্রেকা-টু নামের দুটি ঝুঁকিপূর্ণ জিন সবচেয়ে বেশি দেখা যায়৷ রক্ত পরীক্ষায় এই দুইয়ের মধ্যে কোনো একটি ধরা পড়লে ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকির মাত্রা বাড়িয়ে ৭০ শতাংশ করা হয়৷

ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের ঝুঁকি ৪০ শতাংশ ধরা হয়৷ যে সব নারীর জিন পরিবর্তন ঘটে নি, তাদের ক্ষেত্রে সেই ঝুঁকি অনেক কম, যথাক্রমে ১৩ এবং দুই শতাংশ৷ যে সব নারীর ক্ষেত্রে ঝুঁকির মাত্রা বেশি, তাদের অত্যন্ত ঘনঘন পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা করাতে হয়৷

স্তনের টিস্যু ও ডিম্বাশয় শরীর থেকে পুরোপুরি বাদ দেওয়াও আরেকটি উপায় হতে পারে৷ মাইনৎস বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউমার বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাটরিন স্টেভেন জানেন, যে এমন অপারেশন রোগের আশঙ্কা অনেকটাই কমিয়ে দেয়৷ তিনি বলেন, ‘‘ব্রেকা-ওয়ান এবং ব্রেকা -টু নামের হাই রিস্ক জিন সম্পর্কে সেরা তথ্য আমাদের কাছে আছে৷ দুটি স্তন কেটে বাদ দিলে ঝুঁকি ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ কমে যায়৷ ডিম্বাশয় ও ফ্যালোপিয়ান টিউব সরিয়ে দিলে ক্যানসারের আশঙ্কা ৯৭ শতাংশ কমানো যায়৷''

এমন অপারেশনের ঝুঁকি ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে রোগীদের যথেষ্ট তথ্য দেওয়া হয়৷ নিরাময়ের জন্য বেশ কয়েক মাস সময় লাগে৷ ইয়েসিকারও সেই অভিজ্ঞতা হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘ঝুঁকি কমাতে আমি আবার একই সিদ্ধান্ত নিতাম৷ তবে খুবই যন্ত্রণা হয়েছে৷ তাই আগেই সে বিষয়ে ভালো করে ভাবা প্রয়োজন৷ কিন্তু ক্যানসার ও ব্যথার মধ্যে বাছাইয়ের সুযোগ পেলে ব্যথাই শ্রেয়৷''

ভবিষ্যতে তার ডিম্বাশয়ও দূর করার পরিকল্পনা রয়েছে৷ তবে সন্তান ধারণের ইচ্ছার কারণে ইয়েসিকা সেই অপারেশনের জন্য আরো অপেক্ষা করতে চান৷

মাইকে রাটসমান/এসবি