জার্মানির সামাজিক গণতন্ত্রীদের ১৫০ বছর
১৮৬৩ সালের ২৩শে মে একটি শ্রমিক আন্দোলন থেকে জার্মানির সামাজিক গণতন্ত্রী দল এসপিডি’র জন্ম হয়৷ লাইপসিশ শহরে জন্মের পর এই দলের নেতাকর্মীদের পথচলা সহজ ছিল না – কখনো চূড়ান্ত সাফল্য পেয়েছেন তারা, কখনো হয়েছেন নিপীড়নের শিকার৷
ফিরে দেখা
১৮৬৩ সালে এসপিডির জন্ম থেকে ভিলি ব্রান্ট-এর চ্যান্সেলর হওয়া অবধি একশো বছর সময়ের দিকে তাকালে সে দলের সংগ্রাম সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়৷ ব্রান্ট-এর পর আরো দু’জন চ্যান্সেলর পেয়েছে এসপিডি৷
গোপন বৈঠক থেকে শ্রমিক সংগঠন
শুরুর দিকে এই দলের নেতারা বৈঠক করতেন গোপনে, মোমের আলোতে৷ ১৮৬৩ সালে মূলত ফার্ডিনান্ড লাসাল-এর নেতৃত্বে লাইপসিশ শহরে ‘সাধারণ জার্মান শ্রমিক সমিতি’ গঠিত হয়৷ ১৮৬৪ সাল নাগাদ তাদের সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ৪,৬০০ জনে৷ আর অনুসারীর সংখ্যা অনেক৷
নিষেধ সত্ত্বেও সাফল্য
শিল্পায়ন বেতন এবং খাদ্যের সংস্থান করলেও, শিল্প সম্পৃক্ত কাজ ছিল কঠিন এবং অস্বাস্থ্যকর৷ ফলে শ্রমিক সংগঠনগুলো দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে৷ ১৮৭৮ সালে সমাজতন্ত্র বিরোধী আইন করে শ্রমিক সংগঠনগুলোকে ঠেকানোর চেষ্টা করে সরকার৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও ১৮৯০ সাল নাগাদ বড় আন্দোলন গড়ে তোলে এসপিডি৷
স্কুলে পার্টি সদস্যরা
১৯০৬ সাল থেকে রোজা লুক্সেমবুর্গ এবং আউগুস্ট বেবেল-এর মতো বিখ্যাত সামাজিক গণতন্ত্রীদের বার্লিনের এসপিডি স্কুলে দেখা যেতে শুরু করে৷ বেবেল এই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা৷ ১৯১২ সালে এসপিডি সদস্য সংখ্যা এবং ভোটারের বিচারের জার্মানির সবচেয়ে বড় দলে পরিণত হয়৷
ভাইমার প্রজাতন্ত্র
১৯১৮ সালের ৯ই নভেম্বর এসপিডি রাজনীতিক ফিলিপ শাইডেমান বার্লিনের রাইখস্টাগ-এর সোপান থেকে একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেন৷ এক বছর পর এসপিডি চেয়ারম্যান ফ্রিডরিশ এবার্ট জার্মান রাইশ-এর চ্যান্সেলর হন৷ ১৯৩২ সাল অবধি জার্মানির সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক দল হিসেবে অবস্থান ধরে রাখে এসপিডি৷
নাৎসি শাসকগোষ্ঠীর বিরোধীতা
১৯৩৩ সালের ২৩ মার্চ এসপিডি প্রতিনিধি অটো ভেলস সংসদে হিটলারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন৷ তিনি সে সময় বলেন, ‘‘জনগণ আমাদের স্বাধীনতা এবং জীবন কেড়ে নিতে পারে, কিন্তু একতা কেড়ে নিতে পারবে না৷’’ সেসময় নাৎসি দল এনএসডিএপি’র বিরুদ্ধে ব়্যালিতেও অংশ নেন এসপিডির সাংসদরা৷ সেই ঘটনার কয়েকমাস পরে শ্রমিকদের ইউনিয়নে ভেঙে পড়ে এবং এসপিডিকে জার্মানিতে নিষিদ্ধ করা হয়৷
নিপীড়ন এবং নির্বাসন
হিটলারের বাহিনী এসপিডির রাজনীতিবিদদের উপর নির্যাতন শুরু করে৷ এ সময় সেদলের অনেক নেতাকে কারাবন্দি করা হয়, অনেককে নির্যাতন এমনকি হত্যা করা হয়৷ ১৯৩৩ সালে প্রাগে এসপিডির নির্বাসিত সংগঠন ‘সোপাডে’ গঠন করেন অটো ভেলস৷ পরবর্তীতে এটি প্যারিসে কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং ১৯৪০ থেকে ১৯৪৫ অবধি কাজ করে লন্ডনে৷
নতুন সূচনা
১৯৪৬ সালে পশ্চিমা জোটের দখলকৃত জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে ধ্বংসস্তুপের মাঝে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দেন এসপিডির চেয়ারম্যান কুর্ট শুমাখার৷ অন্যদিকে সোভিয়েতদের দখলকৃত জার্মান অঞ্চলে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে মিলে ‘সোশ্যালিস্ট ইউনিটি পার্টি (এসইডি)’ গঠন করতে বাধ্য হয় এসপিডি৷ তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির প্রথম নির্বাচনে খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দল সিডিইউ’র কাছে অল্প ব্যবধানে হেরে যায় এসপিডি৷
সাবেক শ্রমিক আন্দোলন থেকে আধুনিক রাজনৈতিক দল
১৯৫৯ সালে গোডেসব্যার্গ প্রোগ্রামের সঙ্গে সঙ্গতি রাখতে নিজেদের সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শের অনেকটাই বিসর্জন দেয় এসপিডি৷ এর ফলে ভোটের বিবেচনায় সমর্থন বাড়াতে সক্ষম হয় দলটি৷ এভাবে ১৯৬৬ সালে সিডিইউ’র সঙ্গে জোট বাধতে সক্ষম হয় এসপিডি এবং ভিলি ব্রান্ট তখন ভাইস-চ্যান্সেলর নির্বাচিত হন৷
ভিলি ব্রান্ট-এর সময়কাল
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এসপিডির প্রথম চ্যান্সেলর নির্বাচিত হন ভিলি ব্রান্ট৷ ১৯৬৯ সালে তিনি ওয়ারশ-র স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ প্রদানের সময় নতজানু হয়ে জার্মানির পররাষ্ট্রনীতি ও বৈদেশিক ভাবমূর্তির ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সংযোজন করেন৷
হেলমুট স্মিট এবং ‘জার্মান শরৎ’
ছবিতে চ্যান্সেলর হেলমুট স্মিটকে (১৯৭৪ থেকে ১৯৮২) ব্যবসায়ী হান্স মার্টিন শ্লায়ার-এর স্ত্রীর সঙ্গে দেখা যাচ্ছে৷ ১৯৭৭ সালে শ্লায়ার-কে উগ্রবামপন্থী গোষ্ঠী ‘আরএএফ’ হত্যা করে৷ সেসময় এই গোষ্ঠীর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড স্মিট সরকারকে চাপের মধ্যে ফেলে দেয়৷ পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গনের বিভিন্ন সংঘাতও সামলাতে হয়েছে তাঁকে৷
নির্বাচনের দিকে নজর
আগামী সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে আঙ্গেলা ম্যার্কেলের বিরুদ্ধে লড়বেন এসপিডি-র পেয়ার স্টাইনব্রুক৷ ইউরোপে আর্থিক মন্দার এই সময়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী স্টাইনব্রুক নিঃসন্দেহে ভালো প্রতিদ্বন্দ্বী৷ কিন্তু বিভিন্ন অবিবেচিত মন্তব্যের কারণে নিজের দলেই বিতর্কিত তিনি৷ মোটের উপর, বিভিন্ন জরিপ বলছে ম্যার্কেলের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে তিনি৷