জার্মানির সমাজে ইমামদের সম্পৃক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে
২৯ ডিসেম্বর ২০১০সরকারের ধারণা, এই অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারেন মসজিদের ইমামরা৷ তাইতো ইমামদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে জার্মান সরকার৷
জার্মানির দক্ষিণের শহর কার্লসরুহে'র একটি মসজিদে নামাজ পড়ান ইমাম হারুম ডেমিরেল৷ তুরস্ক সরকার তাঁকে এ কাজে জার্মানি পাঠিয়েছে পাঁচ বছরের জন্য৷ জার্মানিতে বসবাসরত তুর্কিদের ইসলাম শিক্ষা দেয়া তাঁর অন্যতম প্রধান কাজ৷
ডেমিরেল বলেন, ‘‘জার্মানিতে অনেক মুসলমান থাকে৷ যার বেশিরভাগই তুর্কি৷ তাদের ধর্মীয় শিক্ষা দরকার৷ আমি এখানে জানাজায় অংশ নেয়া থেকে শুরু করে সবার সাথে ঈদ, রোজা পালন, সবই করে থাকি৷ তবে আমার প্রধান কাজ ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া৷''
ডেমিরেলের মতো প্রায় নয়শো ইমাম রয়েছেন জার্মানিতে৷ এর মধ্যে প্রায় আটশো জনই তুরস্ক থেকে এসেছেন৷ কিন্তু অধিকাংশ ইমামই জার্মান ভাষা শিখতে ও জার্মান সংস্কৃতির সঙ্গে মিশতে চান না৷ এটাকে একটা সমস্যা বলে মনে করছে জার্মান সরকার৷ কারণ তাদের ধারণা, ইমামরা যদি মসজিদে খুৎবার সময় জার্মান সমাজ, সংস্কৃতি, রীতি-নীতি নিয়ে কথা বলেন তাহলে অভিবাসী মুসলমানদের অনেক সমস্যা মিটে যেতে পারে৷ তাই সরকার একটি নতুন প্রকল্প শুরু করেছে৷ যার মাধ্যমে ইমামদের জার্মান ভাষা শিক্ষা দেয়া হচ্ছে৷ সঙ্গে রয়েছে জার্মানির সংস্কৃতি, খাওয়া-দাওয়া, ইতিহাস ইত্যাদি সম্পর্কে জানা৷
প্রাথমিক পর্যায়ে পাঁচটি শহরে চলছে এই কোর্স৷ পরে সব শহরেই এটা চালুর চিন্তা করছে সরকার৷ তবে কোর্স করতে ইমামদের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে বলে অনেকে বলছেন৷ কারণ সপ্তাহে চারদিন ক্লাস করতে হচ্ছে৷ প্রতিদিন চার ঘন্টা করে৷ পূর্ণকালীন চাকরি করে তাই নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকা অনেকের কাছেই কঠিন বলে মনে হয়৷ যেমন জেয়নেপ সাহিন৷ ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন তিনি৷ সাহিন বলছেন, ‘‘আমি জার্মান শিখতে চাই৷ কিন্তু এটা কঠিন একটা ভাষা৷ তাছাড়া আমার পর্যাপ্ত সময়ও নেই৷ কারণ আমাকে সবসময় কাজ করতে হয়৷ আমি বাচ্চাদের ধর্মীয় শিক্ষা দেই৷ আর নারীদের বিভিন্ন সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করি৷ এসব কিছু করার পর আধ ঘন্টা যাতায়াত করে আমাকে ক্লাসে যেতে হয়৷ যা আমার জন্য কঠিন৷ আমি ছাড়াও আরও অনেকেরই একই সমস্যা বলে জানি৷''
ইমামদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজটি করছে গ্যোয়েটে ইনস্টিটিউট৷ কোর্স কারিকুলাম সম্পর্কে ইনস্টিটিউটের প্রধান আঙ্গেলা কায়া বললেন, ‘‘ভাষা শিক্ষা শেষ হওয়ার পর ইমামদের আশেপাশের কিছু জার্মান প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া হবে৷ যেমন হাসপাতাল, গির্জা, স্কুল ইত্যাদি৷ এর ফলে তারা ঐ জার্মান প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে একটা ধারণা পাবেন''৷
জার্মান অভিবাসী ও শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রী ভুল্ফ ভাল্থের বলছেন, সরকার এই প্রকল্প চালু করেছে কারণ এর ফলে সমাজে একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা দেখেছি ইমামরা দুটো সম্প্রদায়ের মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করেন৷ তুরস্কে তাঁরা শুধুই ধর্মীয় নেতা৷ কিন্তু এখানে তাঁদের কাজ ভিন্ন৷ তাঁরা এখানে অনেকটা উপদেষ্টার মত, অনেকটা রোল মডেল৷ তাই আমরা ইমামদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি শুধু তাঁদের নিজেদের ভালর জন্যই নয়, বরং তাঁরা এই শিক্ষা তাঁদের সম্প্রদায়ের অন্যান্যদের মাঝে বিলিয়ে দেবেন এটাই প্রত্যাশা৷''
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক