1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানির কসাইখানায় শ্রমিকদের ‘আধুনিক দাসত্ব’

১৩ মে ২০২০

বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার পরপরই পশ্চিম জার্মানির একটি কসাইখানার প্রায় আড়াইশ শ্রমিক কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন৷ ওই শ্রমিকরা জরাজীর্ণ ডর্মে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গাদাগাদি করে বাস করেন৷

https://p.dw.com/p/3c99L
Symbolbild Schlachthof Fleisch Skandal
জার্মানির একটি কসাইখানাছবি: Getty Images

ডর্মের অবস্থা দেখতে সেখানে যাওয়া ডয়চে ভেলের একজন প্রতিনিধি এক শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলেছেন৷ যদিও ওই শ্রমিক নিজের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি৷

নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়া অঙ্গরাজ্যের ছোট্ট গ্রাম রোজেনডায় ইটের তৈরি দোতলা একটি ডর্মে বসবাস করেন ৫০ বছরের এই ব্যক্তি৷ যিনি রোমানিয়া থেকে জার্মানিতে এসেছেন৷ ইংরেজি বা জার্মান কোনো ভাষাতেই তিনি ঠিকঠাক কথা বলতে পারেন না৷

ওই ব্যক্তি ডয়চে ভেলেকে জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে তাদের ডর্মটি লকডাউন করা হয়েছে৷

বাড়ি লকডাউন করার অর্থ যে বাড়ির সবাইকে কোয়ারান্টিনে থাকতে হবে এবং অবশ্যই বাড়ি থেকে বের হওয়া যাবে না- তা তিনি জানেন না বলেই মনে হয়েছে ডয়চে ভেলের প্রতিনিধির৷ ওই ব্যক্তি কাগজের তৈরি একটি মাস্ক পরে ছিলেন৷ যেটির ফিতা তাঁর ঘাড়ের উপর আলগা ভাবে ঝুলছিল৷

তিনি ওয়েস্টফ্লাইস নামে একটি কসাইখানায় কাজ করেন৷ যেখানে তার সঙ্গে রোমানিয়া, বুলগেরিয়া এবং পোল্যান্ডের আরো কয়েকশ শ্রমিক আছেন৷ সেখানে কয়েকজন শ্রমিকের করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ার খবর প্রকাশের পর কর্তৃপক্ষ কসাইখানাটি আপাতত বন্ধ করে দিয়েছে৷

পরে সোমবার বিকালে জানা যায়, কসাইখানাটির অন্তত ২৪৯ জন কর্মীর কোভিড-১৯ ‘পজেটিভ’৷ আক্রান্তদের অনেকেই বিদেশি শ্রমিক৷ করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য ওয়েস্টফ্লেইসের ৯৩০ জন কর্মীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়৷

রোমানিয়ার ওই ব্যক্তি জানেন না, তিনি যে ডর্মে থাকেন সেখানে রোমানিয়ার কতজন আছেন৷ কিছুটা হিসাব করে তিনি বলেন, ১২ জন বা তার বেশি হতে পারে৷ ভবনের মেইলবক্সে থাকা নাম দেখলে বোঝা যায় সংখ্যাটা এর বেশি৷ কিন্তু ভবনের কোথাও ভাইরাসের কারণে সেটি লকডাউন করার চিহ্ন নেই৷ না কোনো সরকারি নোটিস, না হাতে লেখা কোনো চিঠি৷

প্রতিনিধি যখন ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন আরো কয়েকজন রোমানীয় শ্রমিক কাছের একটি সুপারমার্কেট থেকে বাড়ি ফেরেন৷

কোনো মালিক বিদেশ থেকে আনা নিজেদের এসব শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তার দায়িত্ব নিচ্ছেন না বলে মনে করেন কোসফেল্ড গ্রিন পার্টির মুখপাত্র অ্যান-মনিকা৷

তিনি বলেন, ‘‘স্থানীয় পৌরসভা, অঞ্চল এবং রাজ্য কর্তৃপক্ষ এ সংকট সমাধানের চেষ্টা না করে বরং সমস্যাটাকে একজন আরেকজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন৷ কেউই দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে না৷

‘‘তার একটা কারণ হতে পারে, ওয়েস্টফ্লেইস সাবকনট্রাক্টরের মাধ্যমে পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব ইউরোপের দেশগুলো থেকে কর্মীদের নিয়োগ দেয়৷ সেক্ষেত্রে শ্রমিকদের কেউ আক্রান্ত হলেই কেবল জার্মানির সরকারি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা তাদের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারেন৷ কর্মীদের ডর্মে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া নিয়ে ওই সাবকনট্রাক্টররা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন বলেও আমার মনে হয় না৷’’

বিদেশ থেকে আসা এসব শ্রমিকদের সঙ্গে এমন অমানবিক ব্যবহার এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের কষ্ট দেয়৷ কসাইখানার শ্রমিকদের ডর্মের কাছেই বসবাস করা এক নারী বলেন, ‘‘তারা গরীব মানুষ৷ তাদের অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় সংক্রমিত হওয়ার জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে৷’’

স্থানীয় অনেকে এখন সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে ওই ডর্মের কাছের সুপারমার্কেটে যাওয়া বাদ দিয়েছেন, যেখানে সাধারণত শ্রমিকরা যায়৷

ডর্ম থেকে ১৫ মিনিট গাড়ি চালিয়ে গেলেই ওয়েস্টফ্লেইস কসাইখানার প্রধান প্রবেশ দ্বার৷ সেখানে পেটার কোসেন নামে এক ব্যক্তি ও তার বন্ধুরা রোমানীয় ওই শ্রমিকদের পক্ষে প্লাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন৷ প্লাকার্ডে লেখা ‘আধুনিক দাসত্বের অবসান চাই’৷

তিনি বলেন, ‘‘কয়েক সপ্তাহ ধরে বিপর্যয় চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে৷ অনেক শ্রমিক স্যাঁতস্যাতে ডর্ম বা জরাজীর্ণ বাড়িতে বসবাস করেন৷ সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বসবাস অসম্ভব৷ তারা যে বাসে করে কসাইখানায় যাতায়াত করেন সেটাতেও গাদাগাদি করে বসতে হয়৷’’

এ ঘটনায় স্থানীয় পৌরসভার কাজের ধরন ও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে৷ যেখানে সোমবার থেকে নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়া অঙ্গরাজ্যে লকডাউনের বেশ কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে৷ সেখানে, এ ঘটনার কারণে কোসফেল্ড পৌরসভাকে আগামী অন্তত ১৮ মে পর্যন্ত লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ মানতে হবে৷

মিওড্রাগ সরিচ/এসএনএন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান