জার্মানিতে বিশ্বের একমাত্র চকলেট মিউজিয়াম
চলুন, ঘুরে দেখা যাক
সবার জন্য চকলেট
‘চকলেট খায় বাচ্চারা’ – এমনটাই আমরা আগে শুনেছি৷ তবে জার্মানিতে এসে দেখছি চকলেট ছোট, বড় সবার জন্য৷ বাচ্চাদের জন্য অবশ্য আলাদা বিশেষ চকলেট রয়েছে, যেগুলোতে দুধ এবং মিষ্টির পরিমাণ একটু বেশি থাকে৷ আজকাল তো দেখা যায় হৃদরোগীদের ডাক্তাররা কালো বা বিটার চকলেট খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন৷
রাইন নদীর বুকে চকলেট মিউজিয়াম
জার্মানির কোলন শহরের এই মিউজিয়ামটি বিশ্বের প্রথম এবং একমাত্র চকলেট মিউজিয়াম৷ মিউজিয়ামটি দেখে মনে হয় যেন কাঁচ আর ধাতুর তৈরি একটি সুন্দর জাহাজ৷ ৪,০০০ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে চকলেট আর কোকোর পুরনো ইতিহাস বহন করছে এই মিউজিয়ামটি৷
কোলনকে বিশেষ উপহার
চকলেট কোম্পানি ‘স্টলভের্ক’-এর মালিক হান্স ইমহোফ এই মিউজিয়ামটি তৈরি করেন ১৯৯৩ সালে৷ যেখানে চকলেটের ৩,০০০ বছরের পুরনো ইতিহাস নানাভাবে তুলে ধরা হয়েছে৷ বিশেষ ধরণের এই মিউজিয়ামটি হান্স ইমহোফ কোলন শহরকে উপহার দিয়ে দিয়েছেন এবং যার মধ্য দিয়ে তিনি অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছেন৷ ২০০৭ সালে তিনি মারা যান৷
কোকো দানা
কোকোর দানা বা বিচি থেকে তৈরি করা হয় চকলেট৷ মিউজিয়ামের ভেতরের ঘরটিতে শুধু কোকো সম্পর্কেই দেওয়া হয়েছে নানা তথ্য৷ যেমন ২০ জাতের কোকোর পরিচয়, কোকোর চাষ ইত্যাদি৷ কোকো দানার জন্ম ল্যাটিন অ্যামেরিকায়৷ ১৭০০/১৮০০ শতকে এটি প্রথম ইউরোপে আসে ড্রিংক চকলেট হিসেবে৷ এরপর ১৯ ও ২০ শতকে কোকো প্রথম চকলেট আকারে বানানো শুরু হয়৷
বিশেষ আকর্ষণ – চকলেট গাছের ঝরনা
তিন মিটার উঁচু এই সুন্দর ঝরনাটি যে চকলেট মিউজিয়ামের বিশেষ আকর্ষণ, তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ যা দেখে একটুখানি চেখে দেখার লোভ সামলানো যায় না৷ আর সেজন্যই হয়ত বা যারা মিউজিয়ামে ঢোকেন, সবাইকেই একটি করে বিস্কুট গরম চকলেটের মধ্যে ডুবিয়ে খেতে দেওয়া হয়, তার আসল স্বাদ গ্রহণ করার জন্য৷
যে দেশের যে সংস্কৃতি
আসলে বাংলাদেশ বা ভারতে যেমন কোনো উপলক্ষ্য বা কোথাও গেলে মিষ্টি নিয়ে যাওয়ার রীতি রয়েছে, তেমনি জার্মানিতে নিয়ে যাওয়া হয় চকলেট৷ আপনি এখানে কোনো জার্মান বাড়িতে আমন্ত্রিত, কি নেবেন ভাবছেন? না, ভাবনার কিছু নেই৷ অনায়াসেই নিয়ে যেতে পারেন সুন্দর এক বাক্স চকলেট৷ আর যদি কারো পছন্দের চকলেটের নাম জানা থাকে, তাহলে তো সোনায় সোহাগা !
কত রকমের চকলেট
এই ২১ শতকে চকলেট ছাড়া জার্মানদের জীবন ভাবা যায়না৷ লিন্ড, স্টলভের্ক, রিটার স্পর্ট, মিলকা, নিউটেলা, মোত্সার্ট মার্বেল, সারোটি – কত ছোট বড় কোম্পানির চকলেট যে রয়েছে এদেশে৷
চকলেট মিউজিয়াম দেখা মানেই অভিজ্ঞতা অর্জন
চকলেট খেলে শরীর মনে কি প্রভাব পড়ে, আগে কিভাবে চকলেট বানানো হতো আর এখনই বা কিভাবে তৈরি করা হয় ইত্যাদি বিষয়েও জানা যাবে এই মিউজিয়ামে গেলে৷
চকলেট দিয়ে তৈরি মানুষের মিছিল
মানুষের মিছিলের মতো কোকো আর চকলেট দিয়ে ১৮ সেন্টিমিটার উঁচু এই চকোলেট মিছিলটি তৈরি করেছেন এক শিল্পী৷ একটি প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে এটা৷
প্রিয়জনের জন্য চকলেট
চকলেট খেতে ভালোবাসে এমন মানুষের অভাব নেই৷ কিন্তু চকলেটের ইতিহাসও জানতে ইচ্ছে করে অনেকেরই৷ তাই এরই মধ্য প্রায় ১০ মিলিয়ন মানুষ কোলনের এই চকলেট মিউজিয়াম পরিদর্শন করেছেন৷ মিউজিয়ামে চকলেট বানানোর রহস্য অর্থাৎ রেসিপি ও প্রণালী দেওয়া আছে৷ তবে এভাবে বাড়িতে বসে চকলেট তৈরি করা না গেলেও, একটা ধারণাটা তো পাওয়া যাবে!
বাড়তি পাওয়া
চকলেট মিউজিয়াম ঘুরে এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার পর ঢুকে পড়ুন চকলেট মিউজিয়ামের ক্যাফেতে৷ সেখানে খেতে পারেন খুবই মজার এক টুকরো চকলেট কেক বা গরম চকলেট, যাকে বলে ‘হট চকলেট’৷ আর সেই সাথে উপভোগ করতে পারেন রাইন নদীর সৌন্দর্য, যে অনুভূতি অনেকদিন মনে রাখার মতো৷