নাৎসি তাণ্ডবের ৭৫ বছর
৯ নভেম্বর ২০১৩ক্ষমতায় আসার কিছুদিনের মধ্যেই নাৎসিদের স্বরূপ স্পষ্ট হতে শুরু করে৷ বিশেষ করে ইহুদি-বিদ্বেষ ধাপে ধাপে মারাত্মক রূপ নেয়, যার পরিণতি সুপরিকল্পিত ইহুদি নিধন যজ্ঞ, যার ফলে প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষকে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে বা অন্যভাবে খুন করা হয়৷ ১৯৩৫ সাল থেকেই একের পর আইন করে নাৎসিরা ইহুদিদের অধিকার খর্ব করতে শুরু করে৷ একে একে তাদের প্রায় সব নাগরিক অধিকার ছিনিয়ে নেয়া হয়৷
৯ই নভেম্বর রাতে সেই পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের অশনি সংকেত টের পাওয়া গিয়েছিল৷ জার্মানি ও সদ্য অধিকৃত অস্ট্রিয়ায় ইহুদিদের বিরুদ্ধে তাণ্ডব শুরু হয়৷ কয়েক'শো সিনাগগ বা ইহুদি উপাসনা গৃহে লুটপাট চালানো হয়৷ কিছু সিনাগগে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়৷ কয়েকটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়৷ পথেঘাটে ইহুদিদের প্রকাশ্যে নানাভাবে অপমান করা হয়, তাদের মারধোর করা হয়৷ হত্যার ঘটনাও ঘটেছে৷ পুলিশ নীরব দর্শক হয়ে ছিল৷ জ্বলন্ত সিনাগগ বা ইহুদিদের দোকানে আগুন নেভানোর চেষ্টাও তারা করেনি৷ শুধু আগুন যাতে আশেপাশের ঘরবাড়িতে ছড়িয়ে না পড়ে, সেটুকু শুধু নিশ্চিত করেছে তারা৷
এর পরদিন থেকেই আসল ঘটনা শুরু হয়৷ এ দিন ৩০,০০০ ইহুদি পুরুষকে ডাখাউ, সাক্সেনহাউসেন ও বুখেনভাল্ড কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছিল৷ তাদের ধরে নিয়ে যাবার সময় পরিবারের সদস্যদের কেউ কল্পনা করতে পারেনি, তাদের প্রিয়জনদের কী পরিণতি হতে চলেছে৷
১৯৩৮ সালের ৯ ও ১০ই নভেম্বর বার্লিন শহরের চিত্র ছিল ভয়াবহ৷ সরকারি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ব্যাপক আকারে লুটপাট চলেছে এই দুই দিন৷ তরুণ গুন্ডাদের দল ইহুদি দোকান বা সিনাগগ থেকে দামি সামগ্রী ছিনিয়ে নিয়ে প্রকাশ্যে সেগুলি দেখিয়েছে৷ সে সময়ে বার্লিনে সক্রিয় বিদেশি কূটনীতিকদের বয়ান থেকে এমন অনেক ঘটনা সম্পর্কে জানা যায়৷ পরে ২০টি দেশের কূটনীতিকদের প্রতিবেদন নিয়ে একটি সংকলনও প্রকাশিত হয়েছিল৷
এমন পরিস্থিতির আলোকে বাকি বিশ্বের দায়ও এড়িয়ে যাওয়া যায় না৷ জার্মানির মধ্যে এমন ভয়ংকর পরিস্থিতির কথা জানতে পেরেও সে সময়ে কোনো হস্তক্ষেপের কথা ভাবেনি আন্তর্জাতিক সমাজ৷ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নাৎসি সরকারের সঙ্গে কোনো একটা বোঝাপড়া সম্ভব বলে মনে করেছিল বিভিন্ন দেশের সরকার৷ তবে এটাও মনে রাখতে হবে, ইহুদি নিধন যজ্ঞ সম্পর্কে গোটা বিশ্ব সে সময়ে কিছুই জানতো না৷ এমনকি যে সব কূটনীতিক এমন আভাস পেয়েছিলেন, তাঁরাও বিশ্বাস করতে পারেন নি যে মানুষ আদৌ এমন কাজ করতে পারে৷ একমাত্র চীনের শাংহাই শহরে ইহুদি শরণার্থী বিনা ভিসায় আশ্রয় পেয়েছিলেন৷ তবে খুব বেশি মানুষ সেই সুযোগ গ্রহণ করতে পারেননি৷