জার্মান সংবাদপত্র সংকটের মুখে
১৭ আগস্ট ২০০৯এক দশক আগেও এ অবস্থা কল্পনা করা সম্ভব ছিল না৷ জার্মান পত্র-পত্রিকা, বিশেষ করে দৈনিক খবরের কাগজের তখন খুব রমরমা অবস্থা৷ তবে সেই অবস্থাটা এখন আর নেই৷ হালে জার্মানির খবরের কাগজগুলো অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে নামতে বাধ্য হয়েছে৷ কারণ আর কিছুই নয় --- পাঠক স্বল্পতা৷ সম্প্রতি স্যুড ডয়েচে সাইটুং পত্রিকার চালানো এক জরিপে দেখা গেছে, ২০ বছরের কম বয়সীদের মাঝে মাত্র ৪ শতাংশ জার্মান এখন দৈনিক খবরের কাগজ পড়েন! জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণ করে পত্রিকাটি যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তার শিরোনাম দিয়েছে, ‘ কেন সংবাদপত্র?'
তার মানে এই নয় যে, নিজের দেশ বা সারা বিশ্বের খবরাখবরের ব্যাপারে জার্মানরা নিস্পৃহ হয়ে পড়ছেন৷ খবর তারা পড়ছেন, তবে পড়ছেন অনলাইন খবরের কাগজে৷ পাঠকের জন্য সেটা সব দিক থেকেই লাভজনক৷ কারণ, দুর্মূল্যের এ বাজারে অনলাইনে খবর পড়ার জন্য তাঁদের বলতে গেলে কোনো অর্থকড়ি খরচ করতে হয় না৷ সঙ্গে আরেকটা বাড়তি সুবিধা হলো, অনলাইন সংবাদপত্রে পাঠক খবরগুলো পাচ্ছেন দ্রুততম সময়ে৷ একটা খবরের জন্য তাঁদের আর এখন পরের দিনের সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়না৷
অবশ্য অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বিজ্ঞাপনের বাজার সংকুচিত হয়ে না এলে জার্মান পাঠকরা হয়তো এত দ্রুত এতটা সংবাদপত্রবিমুখ হতেন না৷ গত এক দশকে জার্মান পত্রিকাগুলো পাঁচ ভাগের এক ভাগ পাঠক হারিয়েছে, ভাবা যায়!
অভাবনীয় হারে পাঠক কমার প্রধান কারণ যে বিজ্ঞাপনী বাজারের দুরবস্থা তা আগেই বলা হয়েছে৷ বিশ্বমন্দার কারণে অনেক বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানেরই আলো এখন মিটিমিটি জ্বলছে৷ অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে৷ এ অবস্থার প্রভাব সংবাদপত্র জগতেও পড়ছে ভয়ঙ্করভাবে৷ বিজ্ঞাপন কমছে৷ তার সাথে পাল্লা দিয়ে কমছে আয়৷পরিণামে বাধ্য হয়ে পত্রিকাগুলো, দৈনিক কাজের ঘন্টা কমিয়ে, অপরিহার্য নয় এমন কিছু বিভাগ ছেঁটে, অপেক্ষাকৃত ছোট কলেবরের কাগজ বের করেও অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে৷
জার্মানির প্রথম সারির প্রকাশনা সংস্থা গ্রুনার অ্যান্ড ইয়ার এবং আক্সেল স্প্রিঙ্গার গত জুলাই মাসে তাদের অনেক কর্মীর জন্যই ছোট শিফট চালু করতে বাধ্য হয়েছে৷ ওদিকে লাইফস্টাইল ম্যাগাজিন ভ্যানিটি ফেয়ার, আমিকা এবং টুমোরোর জার্মান সংস্করণ সঙ্কট মোকাবেলায় ব্যর্থ হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে৷ জার্মান সংবাদপত্রের দুর্দিন আরো পরিস্কার ফুটে উঠেছে ভেস্ট ডয়েচে আলগেমাইনে সাইটুং-এর সাম্প্রতিক দু'একটি কাজে৷ দেশের সবচেয়ে বড় এই স্থানীয় পত্রিকা এ বছরের শুরুতে আড়াইশ কর্মীকে ছাঁটাই এবং দুটো আঞ্চলিক কার্যালয় বন্ধ করেছে৷
সব মিলিয়ে অবস্থা এতটাই খারাপ যে খোদ সংবাদপত্র জগতের লোকজনও এখন এই শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত৷ ফিনান্সিয়্যাল টাইমস পত্রিকার জার্মান সংস্করণের প্রধান সম্পাদক স্টেফান ক্লুসমান মনে করেন, দৈনিক সংবাদপত্রের আয়ু আর বেশি দিন নেই৷ তাঁর মতে, ‘ আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে সংবাদপত্রকে মেরে ফেলবে আইফোন৷'
প্রতিবেদক: আশীষ চক্রবর্ত্তী
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক