1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জলে নামলেন, কিন্তু চুল ভেজালেন না

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুনদিল্লি
৮ জুন ২০১৮

হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের অনুষ্ঠানে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতি নিয়ে গোটা দেশে শুরু হয়েছিল তুমুল বিতর্ক৷ কিন্তু পরে দেখা গেল, প্রবীণ কংগ্রেস নেতা জলে নামলেন, কিন্তু পা ভেজালেন না৷

https://p.dw.com/p/2zB00
Indien Nagpur -  Pranab Mukherjee bei RSS Event
ছবি: picture-alliance/AP Photo

চানক্যের ভূমিকা নিয়ে ইতিহাসের প্রবীণ অধ্যাপকের মতোই আপাদমস্তক কংগ্রেস নেতা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ভাষণে উঠে এলো প্রাচীন ভারত থেকে আধুনিক ভারতের ইতিহাস৷ এটাই ভারতের ঐতিহ্য৷ তুলে ধরলেন বহুত্ববাদ ও সহিষ্ণুতার মধ্যেই নিবদ্ধ ভারতের আত্মা, সেকথা৷ সংবিধানকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে ভারতীয় জাতীয়তাবাদ৷ এমন কিছু বললেন না, যা নিয়ে নতুন করে বিতর্কের সূচনা হতে পারে৷ যাঁরা এজন্য মুখিয়ে ছিলেন, তাঁরা কার্যত নিরাশ৷ কংগ্রেসের মনে যে ক্ষোভ জমা হয়েছিল, তা কিন্তু চাপা থাকেনি৷ কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রণববাবুর মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায় টুইট করে বলেছেন, নাগপুরে আরএসএস-এর মঞ্চে কংগ্রেসের অভিজ্ঞ নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দেওয়া ভাষণ কেউ মনে রাখবে না, কিন্তু মঞ্চে তাঁর উপস্থিতির ছবি থাকবে এবং তা ছড়িয়ে পড়বে তার সঙ্গে ভুয়া বিবৃতি ও মন্তব্য জুড়ে দিয়ে৷ বিজেপি এবং আরএসসএস সেটা পুরোদমে কাজে লাগাতে চেষ্টা করবে৷ এটা তো সবে শুরু৷ ইতিমধ্যেই প্রণববাবুর ছবি বিকৃত করে আরএসএস-এর সরসংচালকদের ভঙ্গিতে প্রণববাবুকে অভিবাদন গ্রহণ করতে দেখানো হয়েছে, যা তিনি আদৌ করেননি৷ একজন নিরপেক্ষ নাগরিকের মতোই তিনি দাঁড়িয়ে অভিবাদন গ্রহণ করেছেন৷

তাঁর আগে সংঘের শীর্ষ পরিচালক মোহন ভাগবত বেশ সতর্কতার সঙ্গে তাঁর বক্তব্য রেখেছেন যা নিয়ে প্রণববাবুকে যেন অস্বস্তিতে পড়তে না হয়৷ বলেছেন, সংঘের মঞ্চে এসেছেন বলেই প্রণববাবু তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় বা মতাদর্শ বিকিয়ে দিয়েছেন, এমন মনে করার কোনো কারণ নেই৷ ভারতের বহুত্ববাদে সংঘও শামিল৷ প্রণববাবুও বহুত্ববাদের কথা বলতে গিয়ে নেহেরুর ‘ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া' বই থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন বটে কিন্তু স্বাধীন ভারত আজ যেখানে পৌঁছেছে তার কৃতিত্ব দিয়েছেন মূলত বল্লভভাই প্যাটেলকে৷ তাঁরই হাত ধরে দেশীয় রাজাদের ঐক্যবদ্ধ করার পর আজ ভারতের এই চেহারা তৈরি হয়েছে৷ নিজের রাজনৈতিক সহকর্মী ইন্দিরা গান্ধীর অবদানের কথা উচ্চারণ করলেন না৷ তাঁর বক্তৃতার কোনো অংশে উল্লেখ ছিল না আরএসএস-এর. সংঘের ইতিহাস নিয়ে একটি কথাও৷

‘প্রণববাবুর উপস্থিতি তাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক বৈধতা দিয়েছে’

এই প্রসঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী উদয়ন বন্দোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘প্রণববাবর ভাষণে নতুন তো কিছু নেই৷ ভারত বহুত্ববাদী গণতন্ত্র, নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধানের দেশ৷ এ তো নতুন কথা নয়৷'' গান্ধী হত্যায় আরএসএস-এর চক্রান্তের অভিযোগ সম্পর্কে অধ্যাপক বন্দোপাধ্যায় মনে করেন, ‘‘আরএসএস-এর চক্রান্ত আদালত কিন্তু বলেননি৷ আদালত আরএসএসকে ছাড় দিয়েছে৷ সরসংঞ্চালক গোলগাওকারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, পরে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়৷ তবে সামাজিক স্তরে সবাই জানে গান্ধী হত্যার পেছনে সংঘ পরিবারের হাত থাকতে পারে৷ আরএসএস-এর মঞ্চে প্রণববাবুর উপস্থিতি আরএসএসকে খানিকটা রাজনৈতিক ও সামাজিক বৈধতা দিয়েছে৷ জনমানসে সংঘপরিবারকে গঙ্গাজল ছিটিয়ে খানিকটা পবিত্র করলেন আর কি! সব মিলিয়ে এটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়৷ আগামী বছরে লোকসভা নির্বাচনে শহুরে মানুষকে কিছুটা প্রভাবিত করলেও করতে পারে৷ বিজেপির পক্ষে ভোট দিতে পারে৷ আর প্রণববাবু মেয়ে মহিলা কংগ্রেসের প্রধান শর্মিষ্ঠা মুখার্জী যা বলেছেন, সেটা কংগ্রেসের মান রাখতে৷ নির্বাচনে তিনি যাতে কংগ্রেস প্রার্থী হতে পারেন৷''সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি মনে করেন, সংঘকে তাদের নিজেদের ইতিহাসও মনে করিয়ে দেওয়া উচিত ছিল৷ টুইটে বাম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, কিভাবে মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের পর উচ্ছ্বাস দেখিয়েছিল, মিষ্টি বিলিয়েছিল আরএসএসকে সেটা মনে করিয়ে দিতে পারতেন প্রণববাবু৷ সীতারাম ইয়েচুরি আরো বলেছেন, কিভাবে কংগ্রেস সরকার তিন তিনবার আরএসএসকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল. এমন কি খোদ বল্লবভাই প্যাটেলও আরএসএসকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন৷ এসব কথা প্রণববাবু সংঘকে মনে করিয়ে দিলে ভালো করতেন৷ আর সিপিআই নেতা ডি. রাজার মন্তব্য, ‘‘নাগপুরে সংঘের অনুষ্ঠানে প্রণববাবুর উপস্থিতিতে আমরা খুশি নই৷ তবে তিনি ভাষণে যেসব কথা বলেছেন বা যে বার্তা দিয়েছেন, সেটা প্রত্যাশিত ছিল৷ আরএসএস এখন তাঁর বক্তব্যকে বিকৃত করার চেষ্টা করতে পারে৷''