জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়লো পাইন বনেও
৫ নভেম্বর ২০১১জার্মান আবহাওয়া দপ্তরের বিশ্লেষক গ্যারহার্ড মুলার ভেস্টারমায়ার'ও বললেন, এবারের এই চূড়ান্ত আবহাওয়ার কথা৷ তুলে ধরলেন ব্রান্ডেনবুর্গ রাজ্যের দৃষ্টান্ত৷ সেখানে এবছর বৃষ্টিপাত হয়েছে তূলনামূলকভাবে অনেক বেশি৷ অন্যদিকে, জার্মানির অন্যান্য অঞ্চল ছিল অত্যন্ত শুষ্ক৷
আসলে অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি – দু'টোই হতে পারে পরিবেশের পরিপন্থী৷ রাজধানী বার্লিনের উপকন্ঠে ব্রান্ডেনবুর্গ পাইন বনের রাজ্য বলে বিখ্যাত৷ রাজ্যটির একটা বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে দেবদারু গাছের মতো দেখতে এই পাইন গাছের বন৷ সরু সুচের মতো পাতা, লম্বাকৃতির এই গাছগুলির ফাঁক দিয়ে হু হু করে বয়ে যায় হাওয়া৷
ব্রান্ডেনবুর্গের আবহাওয়ায় একটা সমতা বজায় রাখতে এই পাইন বনের জুড়ি নেই৷ প্রচণ্ড গরমেও যেন শান্তির বাতাস নিয়ে আসে এই গাছগুলি৷ কিন্তু, ভবিষ্যতের কথা মনে করে এদের জন্যও চিন্তা হয় শহরের অন্যতম পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ব্যার্নহার্ড গ্যট্স-এর৷ নিজের অফিস ঘরে জানালার ফাঁক থেকে পাইন গাছের সবুজ পাতাগুলোর দিকে তাকিয়ে তাই তিনি দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলেন৷ বলেন,‘‘আরো শুকনো, চরম আবহাওয়ার এক ভবিষ্যৎ এগিয়ে আসছে আমাদের সামনে৷ এ কথা ভাবলে আমার সত্যি ভয় করে৷ এর প্রভাব তো আমাদের এই ব্রান্ডেনবুর্গেও এসে পড়বে৷ তখন আমরা কিভাবে আমাদের স্থানীয় এই প্রাকৃতিক সম্পদের ভাণ্ডার, এই পাইন বনকে বাঁচিয়ে রাখবো?''
আসলে সমস্যা হলো পাইন গাছ গরম সহ্য করতে পারে না একেবারেই৷ তাছাড়া স্পেনে যে পাইন গাছ পাওয়া যায়, তার সঙ্গে ব্রান্ডেনবুর্গের, তথা জার্মানির পাইন গাছের পার্থক্য তো রয়েছেই৷ অথচ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বনজ সম্পদের প্রয়োজনীয়তার কথা নতুন করে বলার কিছু নেই৷ তাই ব্রান্ডেনবুর্গের সবুজাভাবকে বাঁচিয়ে রাখতে এবার পাইন গাছের বদলে অন্য ধরণের বৃক্ষ রোপন করার কথা ভাবতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে৷
স্থানীয় বনবিভাগের প্রধান পর্যবেক্ষক রাল্ফ ক্যাটসেল জানান, ‘‘সারা বিশ্বের সামনে জলবায়ু পরিবর্তন আজ একটা বিরাট সমস্যা৷ তাই এর মোকাবিলা করার দায়িত্ব আমাদের সকলের৷ পরিবেশ রক্ষায় চিরহরিৎ বৃক্ষ অথবা চরম তাপমাত্র সহ্য করতে সক্ষম এমন গাছের প্রয়োজন৷ ব্রান্ডেনবুর্গের জন্য সবচেয়ে ভালো হতো, যদি আমরা অন্য কোনো জায়গা থেকে সে রকম গাছ তুলে নিয়ে আসতে পারতাম৷ কিন্তু সেটা করা গেলেও প্রচণ্ড ঠান্ডায় এখানে সে গাছ বাঁচবে না৷ সব ধরনের গাছ-গাছালির যে তীব্র তাপ সহ্য করার ক্ষমতা নেই৷''
এখানেই সমস্যার শেষ নয়৷ বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে যদি বাইরে থেকে আমদানি করা গাছপালা বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয় বা স্থানীয় গাছপালাকে যদি চরম আবহাওয়ার উপযোগী করে তোলাও যায় - পুরো প্রক্রিয়াটাই হবে সময় সাপেক্ষ৷ প্রশ্ন হলো - সে সময় আমাদের হাতে আদৌ আছে কিনা!
প্রতিবেদন: দেবারতি গুহ
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক