জলবায়ু পরিবর্তনে হুমকিতে জার্মানির ক্রিসমাস ট্রি উৎপাদন
বছরে একদিন সারা বিশ্বে ক্রিসমাস ট্রি লাগে৷ সেই ক্রিসমাস ট্রি বছর জুড়ে উৎপাদন করে চাষীরা৷ কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হুমকির মধ্যে পড়েছে জার্মানির ক্রিসমাস ট্রি উৎপাদন৷
ঝুঁকি বাড়ছে
নর্থ রাইন-ওয়েস্ট ফালিয়ার বন বিভাগ জানিয়েছে, পরিবেশগত কারণে তীব্র ঝুঁকির মুখে পড়ছে গাছগুলো৷ বিশেষ করে গরম, খরা এবং ঝড়ের প্রতিকূলতায় গাছের টিকে থাকা দুস্কর৷ এ বছর বৃষ্টিপাতের হারও অনেক কম বলে উল্লেখ করে বন বিভাগ৷
৩০ শতাংশ উৎপাদন ব্যাহত
যথা সময়ে শীত নামলেও এ বছর অতিরিক্ত গরমের কারণে অঙ্কুরেই নষ্ট হয়েছে ক্রিসমাস ট্রি৷ নর্থ রাইন-ওয়েস্ট ফালিয়ায় প্রতি বছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে৷ গরমে প্রায় ১ মিলিয়ন স্প্রাস জাতের ক্রিসমাস ট্রি মারা গেছে বলে জানান চাষীরা৷
খরা অন্যতম কারণ
সাধারণত স্প্রাস বার্ক জাতীয় পোকার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে স্প্রাস বা ওক গাছ নিজের ভেতরে একটি প্রতিরক্ষাব্যুহ তৈরি করে৷ বেশিরভাগ সময় গাছের কোষ প্রাণরসে পূর্ণ থাকে, ফলে পোকা ভেজা কোষে ডিম দিতে পারে না৷ এবং গাছের ভেতর থেকে নিঃসৃত এই তরলের স্রোত জন্মানো পোকাকে গাছ থেকে বের করে দেয়৷ কিন্ত খরার ফলে গাছের এই প্রাণরসে ঘাটতি দেখা দিয়েছে৷ ফলে শুষ্ক ডালে পোকার আক্রমণ বাড়ছেই৷
মৃ্ত্যু রুখতে ক্যামেরা
একটি গাছ যতক্ষণ না পুরোপুরি মারা যাচ্ছে, ততক্ষণ বলা সম্ভব না এই গাছটি কীভাবে কী জন্য মারা যাচ্ছে৷ গাছের ক্ষয় পর্যবেক্ষণ করতে অস্ট্রেলিয়ান উদ্ভিদবিজ্ঞানী ট্রিম ব্রড্রিব ক্যামেরা বসানোর প্রস্তাব দিয়েছেন৷ তিনি মনে করেন, এতে করে গাছের মৃত্যুর কার্যকারণ জানা যাবে এবং মৃত্যু রুখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে৷
পোকার সংক্রমণ
স্প্রাস প্রজাতির ক্রিসমাস ট্রি-তে আক্রমণকারী 'স্প্রাস বার্ক বিটল' জাতের পোকার সংক্রমণ বেড়ছে এ বছর৷ গত কয়েক বছর এই পোকা নরওয়ের স্প্রাস বনগুলোতে ব্যপক হারে আক্রমণ করেছে৷ চলতি বছর জার্মানিতেও এদের উৎপাত বেড়েছে৷ মূলত গাছের মৃতকাণ্ড বা শুকনো কোষে এই পোকার জীবনচক্র ত্বরান্বিত হয়৷ ঝড়ে ভেঙে পড়া গাছের ডালে এটি জন্মাচ্ছে এবং গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত করছে৷
জাত পরিবর্তন!
অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞানী ট্রিম ব্রড্রিব বলেন, গাছের প্রজাতিতে পরিবর্তন আনতে হবে৷ প্রতিকূলতার ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে টিকে থাকবে এমন গাছের প্রজাতির সন্ধান সময়সাপেক্ষ ও গবেষণার বিষয়৷ ক্রিসমাসে ফসল পেতে নতুন যেসব গাছ রোপন করা হয়েছিল, সেগুলোর অধিকাংশই পানির অভাবে মারা গেছে৷ এগুলো পানি টেনে নিতে পারেনি মাটির গভীর থেকে৷
ছোট গাছে ব্যবসা সফল
নর্থরাইন- ওয়েস্টফালিয়া হর্টিকালচার অ্যাসোসিয়েশন ক্রিসমাসের গাছের অভাব পূরণ করতে সরু ও দেড় থেকে দুই ফুটের গাছ উৎপাদনের দিকে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে৷ কারণ, সারা বছর চলমান প্রাকৃতিক দুর্যোগে বড় গাছ ধ্বংসের মুখে৷