1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
পরিবেশতুরস্ক

জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণের শিকার তুরস্কের মারমারা সাগর

১১ আগস্ট ২০২১

জলবায়ু পরিবর্তন ও লাগামহীন জঞ্জালের কারণে তুরস্কের মারমারা সাগরে মাছের পরিমাণ কমে চলেছে৷ পরিবেশ বিপর্যয়ের পরিণতির মাত্রা এখনো স্পষ্ট নয়৷ সরকার ও প্রশাসনের বিলম্বিত উদ্যোগেও তেমন ফলের আশা করা হচ্ছে না৷

https://p.dw.com/p/3yqHg
ছবি: Yasin Akgul/AFP/Getty Images

মার-মারায় কমছে মাছ, বাড়ছে উদ্বেগ

চারিদিকে কাদার মতো ভাসমান পদার্থ৷ এমনকি ইস্তানবুল শহরের বন্দরও রেহাই পায়নি৷ আলি কসকুন সেই দৃশ্য দেখে স্তব্ধ৷ বিশেষ করে জেলেদের জন্য এটা একটা বড় বিপর্যয়৷ আলি বলেন, ‘‘পানিতে মাছ কীভাবে বেঁচে থাকবে? কাদায় আটকা পড়লে দুই মিনিটের মধ্যেই মরে যাবে৷'' 

আলি কসকুমের মতো জেলেরা অতীতে শহরের মানুষদের সরাসরি তাজা মাছ সরবরাহ করতেন৷ কিন্তু কয়েক বছর ধরে মাছের পরিমাণ কমে চলেছে৷ দূষণের মাত্রা বেড়ে চলেছে৷ তবে এর আগে কখনো এত বড় পরিবেশ বিপর্যয় ঘটেনি৷ মারমারা সাগরের একটা বড় অংশ কাদার মতো পদার্থের গালিচায় ঢেকে গেছে৷ আলি কসকুন বলেন, ‘‘চলতি শতাব্দীর শুরুর দিকেও আমরা সমুদ্রে এমন দূষণের গালিচা দেখেছি৷ মাছের জাল থেকে কাদার মতো সেই পদার্থ ধুয়ে ফেলে বিষয়টি ভুলে গেছি৷ কারণ এর ফলে মাছের তো কোনো ক্ষতি হয়নি৷''

এবার আর সেটা সম্ভব হচ্ছে না৷ সামুদ্রিক জীবের শরীর থেকে বেরিয়ে আসা পুরু এই পদার্থ কয়েক কিলোমিটার জুড়ে পানির উপর ও নীচের অংশ ঢেকে দিচ্ছে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতি এবং ইস্তানবুল শহরের বর্জ্য পদার্থই এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী৷

কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে বিশেষ জাহাজ নামিয়ে পাম্প চালিয়ে সেই কাদার মতো পদার্থ দূর করার চেষ্টা করছে৷ তবে সেই উদ্যোগে কাজ হবে কিনা, তা স্পষ্ট নয়৷ কারণ কিছু জায়গায় সেই গালিচা এমনকি ৩০ মিটার পর্যন্ত গভীর৷ পরিস্থিতি বদলাতে হলে মারমারা সাগরের তীরে অসংখ্য নিকাশী ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট আধুনিক করে তুলতে হবে৷ সরকার দ্রুত এক ‘মারমারা অ্যাকশন প্ল্যান' শুরু করেছে৷ তুরস্কের পরিবেশ মন্ত্রী মুরাত কারুম বলেন, ‘‘আমরা তুরস্কের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সমুদ্র সংস্কার অভিযান চালাবো৷ দেশের সব মানুষকে এ কাজে সহায়তার ডাক দিচ্ছি৷''

মের্ট গ্যোকাল্পের মতো তুরস্কের সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানীদের মতে, এই কাজে বড় দেরি হয়ে গেছে৷ সমুদ্রের ইকোসিস্টেম আগেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ মের্ট বলেন, ‘‘দুটি প্রণালীর মাধ্যমে মারমারা সাগর কৃষ্ণ সাগর ও ভূমধ্যসাগরের সঙ্গে যুক্ত৷ এই সাগর প্রায় হ্রদের মতো৷ প্রায় ৫০ বছর ধরে আড়াই কোটি মানুষের বর্জ্য সেখানে গিয়ে পড়ছে৷''

মারমারা সাগরের প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের উপর সেই আবর্জনার প্রভাব সত্যি মারাত্মক৷ সেইসঙ্গে শ্লেষ্মাও যোগ হয়েছে৷ এর ফলে প্রবালেরও অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে৷ অথচ প্রবালই পানি ফিল্টার করে সমুদ্র পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে৷ মের্ট গ্যোকাল্প বলেন, ‘‘শ্লেষ্মার কারণে সূর্যের আলো পানিতে প্রবেশ করতে পারে না৷ ফলে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া ঘটতে পারে না এবং আর অক্সিজেন সৃষ্টি হয় না৷'' 

মার-মারায় কমছে মাছ, বাড়ছে উদ্বেগ

আলি কসকুম শ্লেষ্মার কারণে সমুদ্রে আর জাল ফেলতে পারছেন না৷ জাল আর পানির নীচে নামছে না৷ নামলেও মাছ ছাড়া অন্যান্য পদার্থে ভরে যাচ্ছে৷ সে কারণে তিনি প্রায় ৪০ বছর পর জালের বদলে ছিপ দিয়ে মাছ ধরার চেষ্টা করছেন৷ কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো মাছ ধরা পড়ছে না৷ আলি কসকুনকেও সম্ভবত নিজের পেশা পাকাপাকিভাবে ছেড়ে দিতে হবে৷

সমুদ্রে সাঁতারের কথাও এখন ভাবা যাচ্ছে না৷ কারণ দূষিত গালিচার মধ্যে মানুষের জন্য বিপজ্জনক জীবাণু ও ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত দেখা যাচ্ছে৷ কয়েক জন বিশেষজ্ঞ এমনকি কলেরার বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছেন৷ সে কারণে মারমারা সাগরের তীরে বেশ কয়েকটি সৈকত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷

এককালে সমুদ্রে মাছের অভাব ছিল না৷ আজ দূষণের কারণে পরিস্থিতি বদলে গেছে৷

গুনার ক্যোনে/এসবি