1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জর্জিয়ায় ‘নিরাপদ নয় সাংবাদিকতা'

২৮ নভেম্বর ২০২৩

জর্জিয়া কি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮তম সদস্য হবে? ডিসেম্বর মাসেই তা জানা যাবে৷ বিষয়টি চূড়ান্ত করার আগে ইইউর বর্তমান ২৭ সদস্য জর্জিয়ার কিছু বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও সে দেশে গণমাধ্যমের অবস্থা খুব ভাবাচ্ছে তাদের৷

https://p.dw.com/p/4ZX1b
ছবি: Anja Koch/DW

ঠিক সন্ধ্যে ৬টায় সম্প্রচার শুরু হবে জর্জিয়ার এমতাভারি টিভি চ্যানেলের৷ পর্দায় দেখা যাচ্ছে সঞ্চালক মিখাইল সেসিয়াশভিলিকে৷ আজকের বড় খবর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে একটি দুর্ঘটনা, যদিও কোনো হতাহতের খবর নেই৷

কীভাবে, কোন সংবাদ পরিবেশন করা হবে, তা এমতাভারি টিভি নিজে ঠিক করে৷এই সংস্থার তিনশ কর্মী মিলে এই লক্ষ্যে লড়ে যাচ্ছেন৷ ২০১৯ সালে, তৎকালীন সম্পাদকীয় দৃষ্টিভঙ্গি বেশি সরকারঘেঁষা হওয়ায় এমতাভারি টিভির কর্মীরা সরব হন৷

সেসিয়াশভিলি তাদের কাজ কতটা জটিল তা বোঝাতে গিয়ে বলেন, ‘‘আমি এমন এক গণমাধ্যমে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করি, যার ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজনৈতিক কারণে এক বছর তিন মাস কারাবাসে কাটিয়েছেন৷''

তার একমাত্র অপরাধ, তিনি সরকারের সমালোচনা করেছিলেন৷ ‘‘আর এই ভবনের সবাই ভাবেন, এরপর আমাকে যেতে হবে'', বলেন সসিয়াশভিলি৷

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চক্রান্ত?

২০২২ সালের মে মাসে এমতাভারি টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিকা গভারামিয়াকে সাড়ে তিন বছরের সাজা শোনানো হয়৷ অফিসের গাড়ির ব্যক্তিগত ব্যবহারের ফলে সংস্থাটির আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করা হয়৷ কিন্তু অনেকেই এমন অভিযোগের মধ্যে ‘রাজনীতি' দেখছেন৷

ইইউ নেতৃত্ব ইতিমধ্যে গভারামিয়ার মুক্তির দাবি জানায়৷ জর্জিয়ার ইইউ সদস্যপদ প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও গুরুত্ব পায় বিষয়টি৷ জুন মাসের শেষে জর্জিয়ান প্রেসিডেন্ট সালোমে জুরাবিচভিলি গভারামিয়ার সাজা মকুব করেন৷

তবে সাংবাদিকদের সার্বিক অবস্থা নিয়ে এখনো সন্তুষ্ট নন সেসিয়াশভিলি৷ তার মতে, ‘‘এটা কঠিন, কিন্তু আমরা একে অপরকে ভুলিয়ে রাখতে চেষ্টা করি, কেন আমরা এই পেশায় রয়েছি, তা বোঝার চেষ্টা করি৷ আমি আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামী বলি, কারণ, আমরা আরো গণতান্ত্রিক, মুক্ত জর্জিয়ার জন্য লড়ছি৷''

আইনি মারপ্যাঁচ

সমীক্ষা বলছে, ৮০ শতাংশেরও বেশি জর্জিয়ান ইইউ'র সদস্য হবার পক্ষে৷ রাজধানি টিবিলিসির দেওয়ালে দেওয়ালে ‘আমরা ইউরোপ' লেখা দেখা যায়৷

নভেম্বর মাসে ইউরোপিয়ান কমিশন প্রস্তাব দেয় যে, জর্জিয়াকে ইইউ সদস্যপদ প্রার্থী হিসাবে বিবেচনা করা হবে, তখন দেশজুড়ে উৎসবের মেজাজ৷

কিন্তু ইইউ সদস্য হতে গেলে যে ১২টি শর্ত পূরণ করতে হয়, তার মাত্র তিনটি পূরণ করেছিল জর্জিয়া৷ ব্রাসেলস জর্জিয়াকে সতর্ক করে যে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার দিকে নজর দিতে হবে৷ তবুও অবিচল থেকেছে জর্জিয়া কর্তৃপক্ষ৷ চলতি বছরের শুরুতে সাংবাদিকদের সংসদের ভেতর থেকে কাজ করার অনুমতি বা অ্যাক্রেডিটেশন বন্ধ করতে আইন প্রণয়ন করে জর্জিয়া৷ ফলে, সংসদ সদস্যদের একবারের বেশি দুবার একটি কঠিন প্রশ্ন করলেই অনুমতি হারাবার আশঙ্কা দেখছেন সাংবাদিকরা৷

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল জর্জিয়ার গবেষক মারিয়ম গেরসামিয়া এই চলকে একটি ‘আমলাতান্ত্রিক ছুরি' হিসাবে দেখছেন৷ মারিয়মের মতে, ‘‘কীভাবে সাংবাদিকদের কাজকে ছোট করা হয়, তা আমরা দেখছি৷ সাথে আমরা দেখছি কীভাবে পরিকল্পিত ক্যাম্পেনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের অসম্মান করা হচ্ছে৷''

‘জর্জিয়ায় নিরাপদ নয় সাংবাদিকতা'

রাজধানী টিবিলিসির উত্তরাঞ্চলে, শহরের ঝলমলে আলো থেকে অনেকটাই দূরে ফর্মূলা টিভির কার্যালয়৷ বলা হয়, বিরোধী পক্ষের সাথে যোগ রয়েছে এই চ্যানেলটির৷

এই কার্যালয়েই সাপ্তাহিক ব্যঙ্গধর্মী অনুষ্ঠানের কাজ সারেন মিশা এমশভিলডাদজে, যার মুখে লাগাম চাপানো অতটা সহজ নয়৷ তার চরিত্রের এই দিকটি জর্জিয়ায় তাকে জনপ্রিয় করে তুললেও, সবার প্রিয়পাত্র তিনি স্বাভাবিকভাবেই নন৷

জুনমাসে অফিস থেকে ফেরার সময় বেশ কয়েকজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি তাকে ধাওয়া করে ও রাস্তায় ফেলে মারধরও করে৷ তার চোখে বারবার আঘাত করা হয়, কিন্তু এই আঘাতের লক্ষ্য তাকে মেরে ফেলা ছিল তা মনে করেননা মিশা৷ মিশার মতে, এই আক্রমণের লক্ষ্য ছিল আঘাতের দৃশ্যমান চিহ্ন রেখে যাওয়া৷

মিশা এমশভিলডাদজে বলেন, ‘‘এই দেশে সবাই আমাকে চেনে৷ ফলে, গণপরিসরে আমাকে আঘাত করলে তা একটা বার্তা পাঠায়: যে আমি যদি নিরাপদ না থাকি, তার মানে কেউ নিরাপদ নয়৷ যারাই সমালোচনা করবে, তারাই সাজা পাবেন৷''

মিশার সহকর্মীরা চেষ্টা করেন অপরাধীদের খুঁজে বার করার এবং তদন্তের পর তারা জানতে পারেন যে এই আক্রমণটি জর্জিয়ার রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তরফেই সংগঠিত করা হয়৷ সংস্থার সাথে যুক্ত একজন অপরাধী সাব্যস্ত হন, কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেন৷

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের গেরসামিয়া বলেন, ‘‘জর্জিয়ায় সাংবাদিকতা আর নিরাপদ নয়৷ এই পেশা থেকে জনপ্রিয়তাও সম্ভব নয়, বরং সাংবাদিকদের বিরক্তিকর মনে করেন অনেকে৷''

যে হারে এই পেশা ছাড়ছেন অনেকে, তা নিঃসন্দেহে জর্জিয়ার উন্নয়নের লক্ষণ নয় বলেই মনে করেন গেরসামিয়া৷

আনিয়া কখ (টিবিলিসি, জর্জিয়া)/এসএস