বিচ্ছিন্নতাবাদীরা হাত ধরছে রোহিঙ্গাদের ?
১১ মার্চ ২০১৮মাস দুয়েক আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী দেশের নিরাপত্তার দিক থেকে ক্রমশই গুরুতর বিপদের কারণ হয়ে উঠছে৷ গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তান সমর্থিত লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি), হিজবুল মুজাহিদিন এবং জঈসে মহম্মদের (জেইএম) মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি হিন্দু প্রধান জম্মু এলাকার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলির সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে জঙ্গি কার্যকলাপে তাঁদের যুক্ত করতে চাইছে৷ এ জন্য টাকা-পয়সা দিয়েও সাহায্য করছে তারা৷ জম্মুর রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলি এখন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলির চারণভূমি৷ ভারতীয় গোয়েন্দা এজেন্সিগুলির এমনটাই সন্দেহ৷ তাছাড়া ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী যখন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে, তখন রোহিঙ্গা-জঙ্গি সংযোগ কাশ্মীর সমস্যাকে আরও ঘোরালো করে তুলছে, ভবিষ্যতেও তুলবে৷
কিন্তু কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি জম্মুর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কাছে টানছে – এ কথা মানতে আদৌ রাজি নন ইন্ডিয়ান ডিফেন্স স্টাডি অ্যান্ড অ্যানালাইসিস সংস্থার সিনিয়ার ফেলো কিশলয় ভট্টাচার্য৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানান, এই সন্দেহের বিশ্বাসযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই৷ এটা নিছকই সন্দেহ৷
জম্মু এলাকায় রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের বসবাস নিয়ে তীব্র অসন্তোষ দানা বাঁধতে থাকে রাজ্যে বছরখানেক ধরেই৷ দাবি ওঠেছে রোহিঙ্গা খেদাও৷ এখন সেটা বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে৷ বলা হচ্ছে, মাস খানেকের মধ্যে যদি এদের উৎখাত করা না হয়, তাহলে রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করে হত্যা করা হবে৷ কারণ রোহিঙ্গা ও জঙ্গিদের যোগসাজস এক টাইম বোমা৷ যেন কোনো মূহূর্তে বিরাট বিপর্যয় ঘটাতে পারে৷ জনমত গড়ে তুলতে কাগজে পাতা জোড়া বিজ্ঞাপন দিয়েছে জম্মুর চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ৷ রোহিঙ্গা বিতাড়নের জন্য আলাদাভাবে আন্দোলনে নেমেছে জম্মুর প্যান্থার্স পার্টি এবং হিন্দুত্ববাদী বজরং দল৷ তাদের নিশানায় অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরাও আছে৷
এই পরিস্থিতিতে ঐ পাতা জোড়া বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে যে এলাকার শান্তি ও সুস্থিতি রক্ষা করতে জম্মুকে রোহিঙ্গা মুক্ত করতে হবে৷ বিষয়টি আরো অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে জম্মুর সুঞ্জওয়ান এলাকায় সেনা ও জঙ্গি সংঘর্ষে নিহত হয় জঙ্গি নেতা মুফতি ওয়াকাস৷ জম্মুর সুঞ্জওয়ানে সেনা ঘাঁটিতে আত্মঘাতী সন্ত্রাসী হামলায় পাঁচজন সেনা এবং সেনাবাহিনীর একজনের বাবার মৃত্যু হয়৷ সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীর ফ্যামিলি কোয়ার্টারেও হামলা চালায়৷ সেনা ছাউনির ধারে কাছেই বসবাস করছে বহু সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী৷ প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামনেরও সন্দেহ, এই আত্মঘাতী জঙ্গি হামলার পেছনে আশেপাশের লোকজনদের সমর্থন আছে৷ তার আগের দিন শোপিয়ানে সেনার গুলিতে নিহত হয় তিনজন সাধারণ কাশ্মীরি৷ সব মিলিয়ে ফের অশান্ত হয়ে ওঠে সমগ্র কাশ্মীর উপত্যকা৷
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলি দিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা অনুপ্রবেশ করে সেখানকার জঙ্গিদের খপ্পরে পড়ার কথাও শোনা যাচ্ছে৷ সেবিষয়ে জানতে চাইলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বিশেষজ্ঞ কিশলয় ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, রোহিঙ্গারা এসেছেন মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে৷ রাখাইন ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির সীমান্তবর্তী অঞ্চল নয়৷ ওদের অনুপ্রবেশের ন্যাচারাল রুটের মধ্যে পড়ে না৷ তবে এক সময়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অনেক বার্মিজ শরণার্থী ছিল, যখন ১৯৮৮ সালে অং সান সু চিকে গৃহবন্দি কোরে রাখা হয়েছিল, তখন ভারত-বর্মার (এখনকার মিয়ানমার) সীমান্তবর্তী প্রদেশগুলি থেকে অনেক বার্মিজ ভারতে পালিয়ে আসে৷ রোহিঙ্গারা আসলে অনুপ্রবেশ করে বাংলাদেশ হয়ে৷ কারণ রাখাইন প্রদেশটা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে অনেক দূরে৷ প্রথমে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশে গেছে এবং সেখান থেকে ভারতে৷ তবে ভারতে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের একটা বড় অংশ জম্মুতে বসবাস করছে৷ তবে আমার জানা মতে, এদের সঙ্গে কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের যোগসাজস আছে, এমন কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ সরকারের কাছে নেই৷ সরকার বলবো না, বলবো কিছু এজেন্সির সন্দেহ৷ আর রোহিঙ্গারা মুসলিম বলেই যে তাঁরা জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকে সমর্থন করছেন, এটারও কোনো যুক্তি নেই৷ ভারতের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ মুসলিম৷ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যা ভারতে৷ কাজেই মুসলিম বলেই কাশ্মীরের জঙ্গি সংগঠনগুলি রোহিঙ্গাদের হাত ধরবে এটাও নেহাত জল্পনা৷ তাছাড়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ভাষাগত ও অন্যান্য অনেক বিষয়ে কাশ্মীরিদের যথেষ্ট পার্থক্য আছে৷
জম্মু-কাশ্মীর শিল্প ও বণিক সংঘ বলছে, তাঁরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী হলেও রোহিঙ্গাদের পাকাপাকিভাবে এই রাজ্যে থাকতে দেওয়ার বিরোধী৷ জম্মু-কাশ্মীরের সাংবিধানিক বিশেষ মর্যাদার প্রেক্ষিতে বহিরাগতদের রাজ্যে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি নেই৷ তাই পুরো ব্যাপারটা এখন নির্ভর করছে সুপ্রিম কোর্টে রায়ের ওপর৷
প্রতিবেদনটি ভালো লাগলে মন্তব্য লিখুন, নীচের ঘরে৷