জমজমাট সোনারগাঁ কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ জাদুঘর প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব শেষ হলো৷ দেশের বিলুপ্তপ্রায় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার এ আয়োজন দেখুন ছবিঘরে...
মেলায় প্রবেশ
মাসব্যাপী এই মেলা সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত ছিল৷ সোনারগাঁ জাদুঘর প্রাঙ্গণে ১৫ জানুয়ারি শুরু হওয়া এই মেলায় প্রবেশ টিকিটের মূল্য ছিল ৫০ টাকা৷ তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে ৩০ টাকা করে৷ আর বিকেল পাঁচটার পর থেকে কোনো প্রবেশমূল্য নেওয়া হয়নি৷
শিক্ষাসফর
মাসব্যাপী এই মেলায় কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শিক্ষাসফর করেছে৷
লোকজীবন প্রদর্শনী
লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবে দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য লোকজীবন প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রাখা হয়৷ মেলা চলাকালীন ছুটির দিনগুলোতে ঐতিহ্যবাহী গ্রাম্য সালিশ, গ্রামীণ বিয়ে, গায়ে হলুদের প্রদর্শনীর ব্যবস্থা ছিল৷
চড়কি
যেকোনো মেলায় শিশুদের অন্যতম আকর্ষণ থাকে চড়কিতে চড়া৷ এই মেলায়ও তাই শিশুদের চড়কিতে চড়ে আনন্দ করার সুযোগ ছিল৷ চড়কিতে উঠার জন্য প্রতি জনকে ৩০ টাকা খরচ করতে হয়েছে৷
শিল্পীদের পৃথক স্টল
এবারের লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবে দেশের ১৭টি জেলা থেকে ৬৪ জন কারুশিল্পী তাঁদের বানানো পণ্য নিয়ে অংশগ্রহণ করেন৷ বিভিন্ন কারুপণ্যের আরো প্রায় ১০০টি স্টল ছিল মেলায়৷
মৃৎশিল্পের চাহিদা কমেছে
কুষ্টিয়া থেকে মেলায় অংশগ্রহণ করেন সুশান্ত কুমার পাল৷ তিনি বলেন, ‘‘আগে মাটির জিনিসের যেমন চাহিদা ছিল, তেমনটা এখন আর নেই৷ এখনকার প্রজন্মের চাহিদার সাথে পাল্লা দিতে যে বিনিয়োগ দরকার, সেটা আমাদের নেই৷’’
স্টলেই জামদানির বুনন
মেলায় বিভিন্ন জেলা থেকে কারুশিল্পীরা এসেছেন তাঁদের পণ্য নিয়ে৷ স্টলেই চলছে জামদানি বুননের কাজ৷ কারিগর আশরাফ আলী জানালেন, তাঁর কাছে চার হাজার থেকে শুরু করে পঁচাত্তর হাজার টাকা দামের জামদানি শাড়ি রয়েছে৷
রিক্সা পেইন্টিং
রিক্সা পেইন্টিং নিয়ে মেলায় এসেছিলেন রাশেদুল ইসলাম৷ তিনি জানান, ঢাকার গুলশান-২ এ তাঁদের দোকান রয়েছে৷ এখন মানুষ সৌখিন পণ্য হিসেবেই রিক্সা পেইন্টিংয়ের কদর করে থাকেন৷
শোলার ফুল
মেলার একটি স্টলে শোভা পেয়েছে শোলার তৈরি রং-বেরংয়ের ফুল ও মালা৷ মাগুরা থেকে পণ্য নিয়ে এসেছেন নিখিল চন্দ্র এবং মিতালী রাণী দম্পতি৷ জানালেন, ফুলের মালা ৫০ টাকা এবং প্রতিটি তোড়ার মূল্য ১০০ টাকা৷
বায়োস্কোপ
মেলায় লালন চত্বরে দেখা গেল বায়োস্কোপ৷ এ প্রদর্শনীতে শিশুদের সঙ্গে বড়দেরও দারুণ আগ্রহ রয়েছে বলে জানালেন জলিল মন্ডল৷
পিতল ও কাঁসার সামগ্রী
মেলার একটি স্টলে দেখা গেল পিতল, তামা, কাঁসার কানের দুল, গলার মালা, বিভিন্ন মূর্তি, মাছ, হাতি, প্লেট-গ্লাসসহ শতাধিক সামগ্রী৷ বিক্রেতা আবুল হোসেন জানান, তাঁর কাছে দুইশ টাকা থেকে শুরু করে লাখ টাকার পণ্যও রয়েছে৷
প্রশংসনীয় উদ্যোগ
ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে পরিবারসহ মেলায় এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী আজমত হোসেন৷ তিনি বলেন, এবার চতুর্থবারের মতো সোনারগাঁ লোকজ উৎসবে এলেন৷ নতুন ‘‘প্রজন্ম যারা শহরে বড় হচ্ছে, তাঁদের জন্য দেশের ঐতিহ্য জানা খুবই প্রয়োজন আর তাই এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য তিনি সরকারকে সাধুবাদ জানান৷
‘সরকারের আমন্ত্রণে আসি’
প্রায় ২৫ বছর ধরে নকশী কাঁথার কাজ করেন হোসনে আরা বেগম৷ তিনি বলেন, ‘‘এক যুগ ধরে এ মেলায় আমি সরকারের আমন্ত্রণে যোগদান করি৷ মেলা শেষে প্রতি স্টলের মালিক ত্রিশ হাজার টাকা পান৷ এ ছাড়া সারাবছরই আমরা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে থাকি৷’’
মজাদার খাবার
মেলার লালন চত্বরে ছিল মুড়ি-মুড়কি, বাতাসার দোকান৷ জিলাপি, বাতাসা, উড়কি, দানাদার, লাড্ডু, নিমকিসহ মজাদার সব খাবারও বেচাকেনা করতে দেখা গেল৷
পুতুল নাচ
মেলায় অন্যতম প্রধান আকর্ষন ছিল পুতুল নাচ৷ এক ঘণ্টা পরপর একটি করে শো আহয়েছে বলে জানালেন টিকেট বিক্রেতা শরীফ আহমেদ৷ টিকিটের মূল্য জনপ্রতি ৩০ টাকা৷
লোকগান ও নৃত্য
লোকজ উৎসবে আগত দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন বিকেল থেকে জারি, সারি, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, লালনগীতি, মুর্শিদী গান, লোকজ নৃত্যসহ বিভিন্ন লোক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল৷