1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জনসেবায় দু-দশক নিরলস পদ্মশ্রী অরুণোদয়

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৩০ জানুয়ারি ২০২০

ভারত সরকার পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করেছে বাংলার ব্যতিক্রমী চিকিৎসক অরুণোদয় মণ্ডলকে৷ সুন্দরবনের প্রান্তিক মানুষের জন্য দু-দশক ধরে নিখরচায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন তিনি৷

https://p.dw.com/p/3X1nt
Indien | Sujan-Krankenhaus
ছবি: DW/P. Samanta

সুন্দরবনের চাঁড়ালখালি থেকে কলকাতায় এসে ১৯৭৯ সালে এমবিবিএস হয়েছিলেন অরুণোদয়৷ তারপর থেকে জনসেবাকে নিজের জীবনের ব্রত হিসেবে নিয়েছেন৷ সুন্দরবনের মানুষদের চিকিৎসার জন্য সুজন নামে একটি সংস্থা গড়ে তুলেছেন৷ কীভাবে এই সংগঠন করার কথা মাথায় এল তাঁর? ২০০০ সালে আয়লা ঝড়ে নদীবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা৷ সেখানে একটি মেডিকেল টিম নিয়ে হাজির হয়েছিলেন অরুণোদয়৷ ১৫ দিন চিকিৎসা শিবির চালিয়েছিলেন৷ সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন, সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা সুন্দরবনে পর্যাপ্ত ভাবে পৌঁছয়নি৷ তখনই তাঁর মাথায় আসে সুন্দরবনের নিম্নবিত্ত মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার কথা৷ অরুণোদয় বলেন, " আমরা সমাজের প্রতিষ্ঠিত মানুষ৷ সমাজের প্রতি আমাদের কিছু দায়বদ্ধতা রয়েছে৷ সে কারণেই সুজন তৈরি করি৷ আমাদের লক্ষ্য ছিল, মানুষ যেন চিকিৎসার নামে প্রতারিত না হয়৷ স্বাস্থ্য পরিষেবা যেন পণ্য না হয়ে ওঠে৷''

৬৭ বছর বয়েসি অরুণোদয় ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করেন৷ এখন থাকেন কলকাতার বাঙুর অ্যাভিনিউয়ে৷ সপ্তাহের পাঁচটা দিন তিনি শহরেই রোগী দেখেন৷ বাকি দুটি দিন চলে যান শহর থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে সুন্দরবনের হিঙ্গলগঞ্জে৷ সেখানে তিনি গড়ে তুলেছেন দাতব্য প্রতিষ্ঠান৷ তাঁর তৈরি দোতলা সুজন হাসপাতালে অসংখ্য মানুষ নিয়মিত চিকিৎসা পরিষেবা পান৷ পুরোটাই একেবারে বিনামূল্যে৷ নিখরচায় ওষুধও দেওয়া হয় সাধারণ মানুষকে৷ তিনি জানান, প্রতি বছর ১২ হাজার মানুষ এই হাসপাতাল থেকে পরিষেবা পান৷ দিনে গড়ে আড়াইশো৷ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের প্রত্যন্ত এলাকায় সরকারি পরিষেবার ফাঁক পূরণ করতে কাজে আসছে তাঁর চিকিৎসা কেন্দ্র৷

অরুণোদয় মণ্ডল

এভাবেই কেটে গিয়েছে দুই দশক৷ সুজনকে নিয়ে অরুণোদয় মণ্ডল এখনো নিরলস ভাবে কাজ করে চলেছেন৷ সুন্দরবনের মানুষের প্রধান সমস্যা স্বাস্থ্য পরিকাঠামো না থাকা৷ তার অভাবে ব্যাপকভাবে ভেজাল ওষুধের কারবার চলে৷ চিকিৎসা করেন কোয়ার্ক ডাক্তাররা৷ এতে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয় রোগীদের মধ্যে৷ সেই সমস্যা কাটাতে অনেকটাই সফল হয়েছেন অরুণোদয়৷ সে কারণেই ভারত সরকার তাঁকে স্বীকৃতি দিয়েছে৷ সরকারি সাহায্য পেলে কি আরো ভালো হত? অরুণোদয় বলেন, " সরকারি সাহায্য পেলে ভালোই হত৷ কিন্তু, তার আবার অনেক বাধ্যবাধকতা আছে৷ সেটা মেনে সব সময় কাজ করা মুশকিল৷ কাজের স্বাধীনতা থাকে না৷ তাই ব্যক্তিগত উদ্যোগ, শুভার্থীদের সাহায্যে সুজন চলছে৷" এটাই হয়ে উঠেছে প্রবীণ চিকিৎসকের জীবনের সেরা প্রাপ্তি৷ তাঁর ভাষায়, "একজন প্যারালিটিক রোগী যখন হাতজোড় করে বলেন, আপনার দয়ায় বেঁচে আছি, সেটা পদ্মশ্রী পাওয়ার থেকেও বড় প্রাপ্তি৷"

ডা. স্বপন বিশ্বাস

চিকিৎসকের স্ত্রী শয্যাশায়ী৷ তাঁকেই পুরস্কার উৎসর্গ করেছেন অরুণোদয়৷ তাঁর বক্তব্য, "মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন আমার স্ত্রী৷ নিজের অসুস্থতা সত্ত্বেও আমাকে কাজের জন্য উৎসাহ জুগিয়ে চলেছেন৷ ওর সমর্থন আমার কাজের একটা বড় শক্তি৷ সেই সঙ্গে অবশ্যই সুন্দরবনের মানুষের কথা বলতে হবে৷ তাঁরা না থাকলে কিছুই হত না৷" রাষ্ট্রের সাহায্যের বাইরে এক চিকিৎসকের এই লড়াই ভারতের মতো বড় দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের সমস্যার সমাধান করতে পারে না৷ একটা ছোট জায়গায় এই কাজে সাফল্য মিলতে পারে, রাষ্ট্র এটাকে মডেল হিসেবেও কাজে লাগাতে পারে বড় ক্ষেত্রে৷ এমনটাই মনে করছেন শহরের চিকিৎসকদের একাংশ৷ সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম-এর সদস্য ডা. স্বপন বিশ্বাস প্রশংসা করেন অরুণোদয়ের উদ্যোগের৷ তাঁর ভাষায়, "এই কাজের অকুণ্ঠ প্রশংসা করতেই হবে৷ কিন্তু, এটা একেবারে ব্যক্তিগত প্রয়াস৷ একঝাঁক চিকিৎসক যদি বিনামূল্যে চিকিৎসা করেন, তাতে কিছু মানুষ উপকৃত হবেন৷ তাতে ব্যাপক পরিবর্তন হবে না৷ রাষ্ট্র এগিয়ে না এলে স্বাস্থ্যের হাল বদলাতে পারে না৷ সেজন্য দরকার সুষ্ঠু স্বাস্থ্যনীতি৷" সরকারি নীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, "রাষ্ট্র একদিকে বিনামূল্যে চিকিৎসা করার জন্য পুরস্কৃত করছে৷ কিন্তু, জনতা স্বাস্থ্যের অধিকার চাইলে তা দেয় না৷ এটা রাষ্ট্রের দ্বিচারিতা৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য