1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জনমুখী বাজেট নামক ‘গরুর রচনা’

২৬ মে ২০২৩

যে বাজেট জনগণকে ভোট দেওয়ার জন্য যথেষ্ট উত্তেজিত করতে পারে, তার নামই জনমুখী বাজেট৷ এর সঙ্গে অর্থনীতি বা সমাজনীতির বিশেষ কোনো সম্পর্ক নেই৷

https://p.dw.com/p/4RqDc
ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন৷
ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন গত ফেব্রুয়ারিতে বাজেট পেশ করেন৷ছবি: Adnan Abidi/REUTERS

খবরের কাগজে চাকরি করতে ঢোকার পর অগ্রজ সাংবাদিকেরা কয়েকটি শব্দ শিখিয়ে দিয়েছিলেন৷ সাংবাদিকতায় ওই শব্দগুলি গত ১৭ বছর ধরে ক্রমাগত শুনেই চলেছি৷ তারই অন্যতম 'জনমুখী বাজেট'৷

প্রথম যখন এই শব্দটি শুনেছিলাম, খানিক আশ্চর্যই ঠেকেছিল৷ জনগণের জন্য যে বাজেট, তা তো জনমুখী হবেই! বুঝতে সময় লেগেছে, জনমুখী বাজেটের নিহিতার্থ ভোটমুখী বাজেট৷ পাঁচ বছর পর পর জাতীয় নির্বাচন হয়৷ পাঁচ বছর পর পর বিধানসভা ভোট৷ এছাড়াও পঞ্চায়েত ভোট, পুরসভা ভোট-সবমিলিয়ে অন্তত এক বছর পরপরই কোনো না কোনো ভোট লেগে থাকে৷ তবে জনমুখী বাজেট নিয়ে আলোড়ন বেশি হয় যখন বিধানসভা অথবা লোকসভা (জাতীয়) নির্বাচনের সময় আসে৷

কেমন হয় সেই জনমুখী (পড়তে হবে ভোটমুখী) বাজেট? ধরা যাক পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন৷ তার ঠিক আগের কেন্দ্রীয় বাজেটে রেলমন্ত্রী উঠে দাঁড়িয়ে কঠিন উচ্চারণে একের পর এক নতুন ট্রেনের নাম ঘোষণা করতে শুরু করলেন৷ দেখা গেল তার সিংহভাগই পশ্চিমবঙ্গের৷ অথবা অর্থমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের জন্য একাধিক নতুন প্রকল্প ঘোষণা করে দিলেন৷ ব্যস, সঙ্গে সঙ্গে নিউজরুমে পরদিনের হেডলাইন তৈরি- ‘পশ্চিমবঙ্গের ভোট মাথায় রেখে জনমুখী বাজেট কেন্দ্রের’৷ 

বছরের পর বছর এমনটাই দেখে এসেছি৷ ঠিক যেমন ভোটের মুখে রাজ্য বরাবর ঘাটতি-শূন্য বাজেট শুনিয়ে এসেছে৷ সরকারের এসেই অবশ্য সেই ঘাটতির পরিমাণ বাড়তে বাড়তে আকাশে পৌঁছায় এবং কেন্দ্রের বঞ্চনার রাজনৈতিক প্রশ্ন সামনে চলে আসে৷

একসময় মনে হতো, বছর বছর ভোট হোক৷ অন্তত ভোটের কথা মাথায় রেখেই সরকার যদি প্রতি বছর জনমুখী বাজেট পেশ করে, তাহলে তো জনগণেরই মঙ্গল! কিন্তু কে না জানে, ভারতীয় রাজনীতিতে সব সম্ভব! জনমুখী ঘোষণার নামে যা বলা হচ্ছে, বাস্তবে তার প্রতিফলন কী?

মারা গেছেন, তাই নাম না বলাই ভালো৷ রাজ্যের এক সাবেক মন্ত্রীর জনান্তিকে নামই হয়ে গেছিল ‘শিলান্যাসবাবু’৷ প্রতিবছর বাজেটের প্রকল্প ফাইলে ভরে রাজ্যের দিকে দিকে তিনি ঘুরে বেড়াতেন এবং একের পর এক শিলান্যাস করে যেতেন৷ তারপর সেই শিলান্যাসের শিল কালের গর্ভে মিলিয়ে গিয়ে কবে যে রান্নাঘরের শিলনোড়ায় পরিণত হয়েছে, তা কেবল গ্রামবাসীরাই জানেন৷

স্যমন্তক ঘোষ, ডয়চে ভেলে
স্যমন্তক ঘোষ, ডয়চে ভেলেছবি: privat

তার চেয়েও হাস্যকর নতুন ট্রেনের ঘোষণা৷ যে ট্রেন এতদিন ‘দুর্যোগবান্ধব’ নামে দুই পিঠে ছুটছিল, সেই ট্রেনই ফিরতি পথে হয়ে গেল ‘চম্পকশ্রী’৷ এটাই আসলে বাজেটের সেই নতুন ট্রেন৷ অর্থাৎ, যা ট্রেন ছিল, তা-ই থাকল, খাতায় কলমে একটি ট্রেনের নাম বেড়ে গেল৷ ইয়ার্কি নয়, বাস্তব উদাহরণ পেতে হলে কলকাতা থেকে ধানবাদ গেলেই চলবে৷ সকালে যে ট্রেন একপিঠে ছুটছে ব্ল্যাক ডায়মন্ড নামে বিকেলে ফিরতি পথে সে-ই ইস্পাত৷

কাজের কাজ কী কিছুই হয় না! অবশ্যই হয়৷ ১৪০ কোটির দেশকে চালাতে গেলে কিছু কাজের কাজ করতেই হয়৷ নইলে দেশ নামক ধারণাটি ভেঙে পড়বে৷ বস্তুত, ভোট থাকলেও সেই কাজের কাজগুলি করতে হবে, না থাকলেও করতে হবে৷ ফলে জনমুখী বা ভোটমুখী বাজেট আসলে একপ্রকার সোনার পাথরবাটি৷ ওই বাজেটে চমক আছে, খবরের কাগজের হেডলাইন আছে, জনগণের মাথা খাওয়া আছে কিন্তু বাস্তবে খুব লাভের লাভ নেই৷ গত ১৭ বছরে প্রায় প্রতিটি রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় বাজেট শুনে ইদানীং বরং মনে হয়, যে বাজেট জনমুখী বলে চিহ্নিত হয় না, তাতেই বরং কিছু কিছু জনগণমন সূত্র থাকে৷ অন্তত কাজের কাজের একটা ইঙ্গিত৷