‘জঙ্গিমতাদর্শ' মারার উপায় কী?
১৬ মার্চ ২০১৭সুইডেনে বসবাসরত সাংবাদিক তাসনিম খলিলের সঙ্গে কথা হয় মাঝেমাঝে৷ বাঙালি জিহাদিদের অনলাইন তৎপরতার দিকে তিনি নজর রাখেন, পেশার খাতিরে আমিও রাখি৷ ফলে তিনি কোনো তথ্য পেলে জানান, আমিও কিছু যোগ করার থাকলে তাঁকে বলি৷ গতকালের ঘটনাও সেরকম৷ সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ জানালো, আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের হয়ে কাজ করা এক বাংলাদেশি জঙ্গির ‘কৃতিত্ব' নিয়ে ভিডিও প্রকাশ করেছে জঙ্গি গোষ্ঠীটির একটি সহযোগী সম্প্রচার কেন্দ্রের বাংলা বিভাগ৷ মাঝেমাঝে হাসি পায় ব্যাটাদের সাংগঠনিক কাঠামো দেখে৷ তাদের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীর মিডিয়া উইংয়ের একটা বাংলা বিভাগ করতে পারে, যেখানে বিশ্বের বড় বড় দেশের অনেক মিডিয়া হাউসেরই বাংলা বিভাগ নেই!
যাক সেকথা৷ আমাদের দেশের গণমাধ্যম সাইট ইন্টেলিজেন্সকে যতটা গুরুত্ব দেয়, তাসনিম খলিলকে ততটা দেয় না৷ অথচ বাঙালি জিহাদিদের অনলাইন তৎপরতার খবর সাইটের চেয়ে বেশি তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে ও নিউজ লেটারে পাওয়া যায়৷ খলিল নিজেই ঘাঁটাঘাটি করে অনেক তথ্য জোগাড় করেন৷ তিনিই জানালেন, আইএস যে জিহাদিকে নিয়ে ভিডিও প্রকাশ করেছে, সে ব়্যাবের নিখোঁজ তালিকায় ছিল৷ তারপর ফেসবুক ঘেঁটে সেই জঙ্গির নাম, বৈবাহিক অবস্থা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, বন্ধুতালিকা – সবই পাওয়া গেল কিছুক্ষণের মধ্যে৷
আইএস-এর জন্য আত্মঘাতী হয়ে ওঠা জঙ্গির নাম নিয়াজ মোর্শেদ রাজা৷ অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা চট্টগ্রামের এই ব্যক্তি ২০১৫ সালের মে মাস পর্যন্ত ফেসবুকে সক্রিয় ছিল৷ তার প্রোফাইলে থাকা ছবিগুলোর মধ্যে অধিকাংশই তার মেয়ের, নাম মারিয়াম৷ আইএস তার নাম দিয়েছিল আবু মারিয়াম আল-বাঙালি৷ এই নামের প্রথমাংশের অর্থ হচ্ছে মারিয়ামের বাবা! এত আদরের সন্তানকে রেখে কিসের মোহে সমাজে প্রতিষ্ঠিত এই যুবক জঙ্গি হলো, সেটা আমার কাছে এক বিস্ময়৷
কেউ কেউ বলবেন, বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই৷ এরকম ঘটনা অনেক৷ সেটাও ঠিক৷ গত বছর গুলশানে জঙ্গি হামলার পরপরই দেখা গেছে, এতকাল জঙ্গি বলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাদ্রাসার টুপি পরা শিক্ষার্থীদের দিকে আঙুল তোলা হলেও পরিস্থিতি আসলে অনেক বদলে গেছে৷ এখন বিত্তবান পরিবারের ছেলেরা, যারা জীবনে অভাব কী জিনিস চোখে দেখেনি, তারাও জঙ্গি হচ্ছে৷
আশার কথা হচ্ছে, গুলশান হামলার পর শক্তহাতেই জঙ্গি দমনে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী৷ যদিও তাদের কাজের ধরন নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে৷ বিশেষ করে, তাদের অভিযানে যারা নিহত হচ্ছে, তাদের অধিকাংশই সন্দেহভাজন জঙ্গি, মানে তাদের জঙ্গি পরিচয় প্রমাণিত হয়নি৷ তা সত্ত্বেও এভাবে একের পর অভিযানে সন্দেহভাজনদের মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ রয়েছে৷ আর সন্দেহের অবকাশ নেই যে, সন্দেহভাজন জঙ্গিদের জীবিত ধরার বিশেষ চেষ্টা পুলিশ বাহিনীর নেই৷ তা সত্ত্বেও এসব অভিযান যে মানুষের মনে স্বস্তি এনে দিচ্ছে, জঙ্গি তৎপরতায় লাগাম টানতে পারছেু, তা পরিষ্কার৷ কিন্তু এটাই কি একমাত্র সমাধান?
ইসলামিক স্টেটের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো যে বিষাক্ত মতাদর্শ তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ঢুকিয়ে দিচ্ছে, সেটা দমনের উপায় খুঁজে বের করা জরুরি বলে আমার মনে হয়৷ বর্তমানে যেভাবে পশ্চিমা বাহিনীর অভিযান চলছে, তাতে অচিরেই শেষ হয়ে যাবে ইরাক ও সিরিয়ার কিছু অংশে থাকা ইসলামিক স্টেটের দখলদারিত্ব৷ জঙ্গি গোষ্ঠীটির পক্ষে সেভাবে সংগঠিত হওয়া হয়ত অদূর ভবিষ্যতে আর সম্ভব হবে না৷ কিন্তু থেকে যাবে তাদের ছড়িয়ে দেয়া বিষাক্ত মতাদর্শ৷ এই মতাদর্শের বিরুদ্ধে লড়াইটা তাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ৷ সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যেখানে ইউরোপই হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ কি তৈরি?
বন্ধু, বিষয়টি নিয়ে আপনার কিছু বলার আছে? তাহলে লিখুন নীচের ঘরে৷