1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চাপে থাকলেও নতুন কর্মসূচি দিচ্ছে হেফাজত

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৯ ডিসেম্বর ২০২০

চাপের মুখে পড়লেও ভাস্কর্য এবং মূর্তি ইস্যু নিয়ে হেফাজতে ইসলাম চুপ থাকবে না৷ আগামী সপ্তাহে তারা নতুন কর্মসূচি দেবে বলে জানা গেছে৷ আর মামলাগুলো রাজপথে ও আইনগতভাবে মোকাবেলার কথা বলছে তারা৷

https://p.dw.com/p/3mTne
হাটহাজারি মাদ্রাসা
ছবি: AFP

এরইমধ্যে এই ইস্যুতে হেফাজতের আমির মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে৷ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করীমের বিরুদ্ধেও আলাদা একটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়েছে৷ মামলাগুলো তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)৷ আর কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় চারজন গ্রেপ্তার হলেও তদন্ত পর্যায়ে বাবুনগরী ও মামুনুল আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে৷ কারণ এজাহারে তাদের কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ভাঙচুরের কথা বলা হয়েছে৷

আর ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরের ঘটনায় হেফাজতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো আবার সচল হয়ে উঠছে৷ ওই সময় ঢাকাসহ সারাদেশে মোট ৮৩টি মামলা করা হয়েছিল৷ তারমধ্যে ১৮টি মামলায় এপর্যন্ত চার্জশিট দেয়া হয়েছে৷ দুইটি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে৷ আর একটি মামলার বিচার শেষ হয়েছে এবং আসামিরা খালাস পেয়েছেন৷ এইসব মামলায় তিন হাজার ৪১৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে৷

আশা করি এবার আর কোনো মামলা হিমাগারে যাবেনা: মাহবুব উল আলম হানিফ

আসামিদের মধ্যে হেফাজতের শীর্ষ নেতা জুনাইদ বাবুনগরী ও মাইনুদ্দিন রুহীসহ অনেকেই আছেন৷
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘‘আমরা হেফাজতের বিরুদ্ধে পুরনো এবং নতুন সব মামলাই দ্রুত তদন্ত করে তাদের আইনের আওয়তায় আনার জন্য দাবি জানিয়েছি৷ আশা করি এবার আর কোনো মামলা হিমাগারে যাবে না৷ আমরা চাই তারা যেন এইসব মামলা থেকে কোনোভাবেই পার পেতে না পারেন৷ তাদের কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল আচরণ সরকার দেখবে৷ আর আমরা আওয়ামী লীগ তো মাঠে রয়েছিই৷’’

স্বারাষ্ট্রমন্ত্রীও সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, হেফাজতের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের মামলাগুলোর দ্রুত তদন্ত শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ তবে এনিয়ে বুধবার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য জানা যায়নি৷ তবে পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, এরইমধ্যে মামলাগুলোর ব্যাপারে সারাদেশে এসপিদের নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে৷ একটি অগ্রগতি প্রতিবেদনও পাঠাতে বলা হয়েছে৷

নানা পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে সরকার এখন সবদিক দিয়ে হেফাজতকে কোণঠাসা করতে চাইছে৷ মামলা এবং সরকারের মাঠ দখলের আগাম পরিকল্পনার কাছে হেফাজত এখন অনেকটাই বিভ্রান্ত৷ তারা এখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য লিখিত আবেদন জনিয়েছে৷ বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য প্রসঙ্গে প্রথম যিনি বলেছেন সেই মামুনুল হকও চুপসে গেছেন৷ তিনি তার ফেসবুকে কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার নিন্দা জনিয়েছেন৷ তারা এখন বার বার বলছেন, ‘‘একটি মহল আলেম ওলামাদের সরকারের মুখোমুখি করার ষড়যন্ত্র করছে৷ তাদের সুগভীর কোনো চক্রান্ত আছে৷’’

হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পদক মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়েজি বলেন, ‘‘আমরা মামলাগুলো রাজপথে ও আইনতভাবে মোকাবেলা করব৷ এজন্য সারাদেশে আইন সহায়তা সেল গঠন করা হচ্ছে৷ এই মামলাগুলোকে আমরা কোনো চাপ মনে করছি না৷ আমরা ভীতও নই৷’’

তিনি জানান, হেফাজতের শীর্ষ নেতারা নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন৷ দেশের শীর্ষ আলেমদের সাথেও কথা হচ্ছে৷ আগামী সপ্তাহে হেফাজত নতুন কর্মসূচি দেবে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা মনে করি ভাস্কর্য এবং মূর্তি একই জিনিস৷ আমাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন নাই৷’’ তবে কী ধরনের কর্মসূচি হতে পারে তা তিনি স্পষ্ট করেননি৷

মামলাগুলোকে আমরা কোনো চাপ মনে করছি না: হেফাজতের প্রচার সম্পদক জাকারিয়া নোমান ফয়েজি

তার কথা, হেফাজত একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়, কোনো সংঘাত চায় না৷ একারণেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে৷ তিনি সময় দিলে হেফাজত নেতারা দেখা করবেন৷ এটা কোনো ভয় বা চাপের মুখে নয়৷ হেফাজত নেতারা সরাসরি বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে চান৷

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর ঠিক কাজ নয়৷ আমরা কাউকে ভাস্কর্য ভাঙতে বলিনি৷ আমরা সরকারকে ভাস্কর্য ভাঙতে বলেছি৷ তারা ভাঙবে৷ আর কুষ্টিয়ার ঘটনা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা৷’’

অন্যদিকে ইসলামি আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করীম ধোলাইপাড়ে সমাবেশ করে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার কথা বললেও তার দল এখনো ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে কোনো কর্মসূচি দেয়নি৷ দলটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘‘এ নিয়ে আমরা নতুন কোনো কর্মসূচি এখনো দিচ্ছিনা৷ আমরা বিষয়টি তুলে ধরেছি৷ এখন দেখতে চাই সরকার বিশৃঙ্খলা চায় না শান্তি চায়৷ আর এটা কোনো রাজনৈতিক ইস্যু নয়, ধর্মীয় বিষয়৷ আমরা বলেছি ভাস্কর্য আর মূর্তি একই৷ এখনো বলছি৷ এটা ইসলামের কথা৷ একটি মহল ইসলামপন্থীদের মুখোমুখি দাঁড় করাতে চাচ্ছে সরকারকে ৷ এর মধ্যে দেশবিরোধী চক্রান্ত আছে৷’’ তিনি ফয়জুল করীমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মমলাকে মিথ্যা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে অভিহিত করেন৷
২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে অবস্থানকালে যেমন পেয়েছিল এবার হেফাজত এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থন পায়নি৷ বিএনপি এবিষয় নিয়ে কোনো কথা বলছে না৷ জাতীয় পার্টি সরকারে পক্ষে অবস্থান নিয়েছে৷ আর ইসলামি দলগুলোও হেফাজতের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখছে৷