1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঘুস, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ চান মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম

১৫ ডিসেম্বর ২০২১

বগুড়ায় রেললাইনের পাশে একটি ঝুপড়ি ঘরে বাস করেন মো. মোসলেম উদ্দিন৷ আর্থিকভাবে অত্যন্ত অস্বচ্ছল এই মানুষটি একজন মুক্তিযোদ্ধা৷ স্বাধীন দেশের কাছে তাঁর চাওয়া খুব বেশি নয়, শুধু একটি স্থায়ী নিবাস৷ আর দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ৷

https://p.dw.com/p/11aNV
Bangladesch | 49. Jahrestag Bangladesch-Krieg
ছবি: bdnews24.com

একাত্তরে মোসলেম উদ্দিনের বয়স ছিল ২৪ বছর৷ দেশে তখন বাজছে যুদ্ধের দামামা৷ বগুড়ার মোসলেম সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দ্রুত৷ দেশরক্ষা করতে হবে, চাই প্রশিক্ষণ৷ সেই প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে পাড়ি দেন তিনি৷ বেশ কিছুদিন ভারতের বিভিন্ন ইয়ুথ ক্যাম্পে সময় কেটে যায় তাঁর৷ একসময় শিলিগুড়িতে শেষ হয় গেরিলা প্রশিক্ষণ৷ সেক্টর সাত এর আওতায় বাংলাদেশে প্রবেশ করেন মোসলেম৷ শুরু হয় তাঁর লড়াই৷ একাত্তরের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘ডিসেম্বরে খান সেনাদের সঙ্গে লড়াই করে বগুড়া থেকে সোনাতলা পর্যন্ত ট্রেন লাইন উপড়ে দিয়েছিলাম আমরা৷ সে যুদ্ধে আমার এক ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধাও প্রাণ হারায়৷''

Bangladeshi schoolgirls wave the national flag as they perform during a victory day children's rally in Dhaka, Bangladesh, Friday, Dec.16, 2005. Bangladeshi authorities on Thursday stepped up security across the country in preparation for the 34th anniversary of independence, won in a bloody civil war with Pakistan, officials said. (AP Photo/Zia Islam)
মোসলেম উদ্দিনদের কারণেই স্বাধীনতা লাভ সম্ভব হয়েছেছবি: AP

আধা সামরিক বাহিনীতে মোসলেম

এরকম আরো কয়েকটি যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন মোসলেম৷ তবে দেশ স্বাধীনের পর তাঁর জীবন হয়ে ওঠে আরো কঠিন৷ স্বাধীন দেশে অস্ত্রসমপর্ণের পর যোগ দেন আধা সামরিক বাহিনীতে৷ কিছুদিন পর বন্ধ হয়ে যায় সেই বাহিনী৷ অল্পকিছু টাকা পয়সা পেয়েছিলেন সেসময়৷ তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল অষ্টম শ্রেণি পাশ৷ সেই যোগ্যতার বলেই চাকরি খুঁজেছেন নানা জায়গায়৷ তিনি বলেন, ‘‘যত জায়গায় সম্ভব একটি চাকরির জন্য চেষ্টা করেছি৷''

চৌকিদার

এভাবে এক সময় বাধ্য হয়ে মোসলেম যোগ দেন বাংলাদেশ রেলওয়েতে৷ বড় কোন চাকুরি নয়, একজন চৌকিদার হিসেবে কাজ পান তিনি৷ সেটাও আবার ছিল অস্থায়ী৷ মোসলেম চেষ্টা করেছেন চাকরি স্থায়ী করার জন্য৷ তাতে ব্যর্থ হয়ে রেলের কাছ থেকে খানিকটা জমি পান তিনি৷ বগুড়ার আশ্রমের সামনে এখন ঝুপড়ি বানিয়ে বসবাস করছেন মোসলেম৷ রেললাইনের পাশে অস্থায়ী জমিতেই আপাতত স্থায়ী নিবাস তাঁর৷

ভালো নেই মোসলেম

একাত্তরের বীরযোদ্ধা মোসলেমউদ্দিন বর্তমানে খুব একটা ভালো নেই৷ একটি মুঠোফোনও ব্যবহারের সাধ্য নেই তাঁর৷ নিজের সন্তান, নাতিদের নিয়ে বসবাসের জন্য একটি স্থায়ী ঠিকানার স্বপ্ন দেখেন তিনি৷ তাঁর কথায়, ‘‘একটি পাখির যদি ডাল থাকে, আমার তাহলে স্থায়ী নিবাস থাকবে না কেন? আমি যেখানে আছি, সেই জায়গাটা আমাকে স্থায়ী করে দেওয়া হোক৷''

ঘুস, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ

মোসলেম একজন স্বীকৃত মুক্তিযোদ্ধা৷ অস্বচ্ছল যোদ্ধা হিসেবে মাসে সরকারি দু'হাজার টাকা ভাতাও তিনি পান৷ তিনি মনে করেন, তাঁর মতো অসংখ্য যোদ্ধার লড়াইয়ের ফসল আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ৷ স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পর তাই, মুক্তিযোদ্ধাদের ভালোমন্দের দিকে আরো একটু নজর দেবে সরকার, এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি৷ আর চান, দেশে সততা বাড়ুক৷ জীবনে কখনো একটি পয়সাও ঘুস দেননি মোসলেম৷ একটি ঘুস, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে তাই এখনো বিভোর এই মুক্তিসেনা৷

প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক